তিনিও কবি
অয়েজুল হক
🕐 ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২১

বহুদিন পরে জনজীবন মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে। আঁধারের পেছনেই আলো থাকে। এই এক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়েই মানুষ সামনে চলে। অনেকদিন পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মানুষের ভিড় হবে ভেবেই জাহিদ নিরিবিলি ঘুমিয়ে আরামে ভ্রমণ করার ইচ্ছায় কেবিনে টিকিট কেটেছিল। ব্যবসায়িক সফর। চোখে মাত্র ঘুমঘুম ভাব এসেছে। সোনাপুর স্টেশনে ট্রেন থামতেই হুড়মুড়িয়ে কেবিনে প্রবেশ করেন মধ্যবয়সী ফিটফাট এক ভদ্রলোক। ঢুকেই ধুপধাপ করে তার ব্যাগগুলো সিটের ওপর আছড়ে ফেলেন। তারপর জাহিদের মাথার কাছে পা চেপে লাফ দিয়ে উপরের কেবিনে চলে যান। ভাগ্যিস মাথা মুখ পাড়িয়ে ধরেননি। ধুপ শব্দে নিজের শরীরটাও কেবিনের ওপর আছড়ে ফেলেন। এ লোকটার সবকিছুর ভিতর আছড়ে ফেলা ভাব আছে। অনেকটা করোনার মতো।
কেবিনে এপাশ ওপাশ, উপর নিচ করে চারটি ছিট। বাকি দুটো সিটে দুজন বয়স্ক মানুষ গভীর ঘুমে অচেতন। ছন্দময় সুরে তারা নাক ডাকছেন। নাক ডাকা কে কেউ সুর বলে না। এই ক্রান্তিলগ্নে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চিন্তে ছন্দময় স্টাইলে নাক ডেকে যান তাদের নাক ডাকাকে জাহিদের কাছে সুরই মনে হয়। এর সঙ্গে সামান্য মিউজিক দিলে হবে নাকডাকা সঙ্গীত। আগন্তুক ব্যক্তির ধুপধাপ শব্দে তারা একটুও নড়েনি। জাহিদের মনে হয় বগি উল্টে পড়লেও তাদের ছন্দময় নাক ডাকা বন্ধ হবে না। একটু পরেই শুরু হয় নবাগত করোনা টাইপ লোকের আরেক পর্ব। উপর থেকে চিপসের খালি প্যাকেট, বাদামের খোসা, ছোট পানির বোতল, সিগারেটের ছাই জাহিদের ছিটের এদিক সেদিক পড়ছে। হাবভাবে মনে হয়, দীর্ঘ লকডাউনে আনেক দিন না খেয়ে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে তিনি ট্রেনে উঠেছেন।
অস্থির কা-কারখানা। জাহিদ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘এই যে ভাই, আপনি কী শুরু করেছেন?’
লোকটা প্রথম কথাতেই রেগে ওঠেন, ‘এই একদম চুপ, আমি হলাম কবি মারুফ। ফের যদি বলিস কথা, তোকে দেব আচ্ছা ঠাসা।’
কথা শুনে জাহিদ থ হয়ে যায়। প্রায় ত্রিশ মিনিট হুলস্থুল করে স্বঘোষিত কবি নীরব হন। জাহিদের সামান্য ঝিমঝিম ভাব আসে। চোখ দুটো বন্ধ করতেই উপর থেকে শব্দ করে মোবাইল আছড়ে পড়ে তার মাথার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে জাহিদের ব্যথার আর্তনাদ। উহ শব্দ। উপর থেকে মাথা বের করেন কবি মারুফ। উঁকি দিয়ে ফিক করে হাসেন। নিজেকে আর সামলে রাখতে না পেরে জাহিদ বলে, ‘এই আপনি কী মানুষ?’
-না। মানুষ না, কবি। সামনে বড় ধরনের পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
-ইস, কবি। ভাগ্যিস আপনার একটা লেজ নেই।
-কথা ঠিক করে বলিস। ইয়ে করে দেব কিন্তু।
-ইয়ে মানে?
-ইয়ে মানে উপর থেকে ঝরনা চালিয়ে দেব। একদম অটো গোসল।
লোকটার যে স্বভাব তাতে পেশাব পায়খানা করে দেওয়া তার কাছে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। সম্ভবত ঘুম পুরে যাওয়ায় পাশের সিটে ঘড়ঘড় করে নাক ডাকা লোকটা চোখ ডলতে ডলতে বলেন, ‘হচ্ছেটা কী সারারাত? একটুও ঘুমাতে পারলাম না।’
ঘড়ঘড় করে নাক ডাকা লোক বলছে ঘুমাতে পারলাম না! কী অসাধারণ।
কবি মারুফ বলেন, কবিতা শুনবেন?
কবিতা শব্দটা শুনেই লোকটা লাফ দিয়ে উঠে বসে। তার চোখে মুখে খুশি- ‘আপনি কবি?’
-হু।
-যাক ভালোই হলো। আমিও কবি। করোনা আর লকডাউনে কতদিন প্রাণ খুলে কবিতাচর্চা হয় না। আজ হবে। আপনি উপর থেকে একবার কবিতা পাঠ করবেন আমি নিচ থেকে...।
জাহিদ অসহায়ের মতো জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, তিনিও কবি...!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
