এলো ঝগড়ার মৌসুম
আবুল কালাম আজাদ
🕐 ৩:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২১

ঘড়ির কাঁটা বারটা ছুঁই ছুঁই। আমি বসে আছি বউয়ের দিকে তাকিয়ে। বসে বসে হালকা ঘামছি। অনেকটা নিশ্চিত হলাম, বউ ঘুমিয়েছে। আলতোভাবে বউয়ের গায়ে একটা কাঁথা তুলে দিলাম। তারপর নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে ফ্যানের সুইচ টিপলাম। অমনি বউয়ের বাজখাই গলা : পাখা ছাড়লে যে?
: গরম লাগছে। দেখো শরীর কেমন ঘামে ভিজে গেছে। ঘুমাতে পারছি না।
: কীসের গরম? কার্তিক মাস শুরু হয়েছে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পাখা ছাড়ার মতো গরম থাকে নাকি? বন্ধ করো পাখা।
: তুমি ঘুমাও। একটু পরে বন্ধ করে দেব।
: না, এক্ষুনি বন্ধ করতে হবে। দেখো, শীতে আমি কেমন থরথর করে কাঁপছি।
: থরথর করে কাঁপার মতো শীত হয় কীভাবে?
: তোমার ঘামার মতো গরম হয় কীভাবে?
আমার বউয়ের সঙ্গে যুক্তিতে পারা যাবে না। যুক্তিবিদ্যার ছাত্রী না হয়েও তার যে যুক্তি, যুক্তিবিদ্যা পড়লে কী হতো কে জানে। আমি পাখা বন্ধ করে দিলাম। জানালার পর্দাটা তুলে দিলাম। কিন্তু গরম লাগে। শুয়ে থাকতে পারি না। বসে থাকি। অপেক্ষায় থাকি বউ ঘুমালে অল্প পাওয়ার দিয়ে ফ্যান ছাড়ব। ঘণ্টাখানেক পর নিশ্চিত হই, বউ এখন আর জেগে নেই। পাখা ছাড়লে কিচ্ছু টের পাবে না। পাখা ছাড়ি, অমনি বউ হুঙ্কার ছাড়ে : আবার পাখা ছাড়লে! তোমার জন্য আমার নিউমোনিয়া বেধে যাবে দেখছি।
: বোঝো তো, আমার পেটাটা একটু বড়, মোটা শরীরের কারণে...! বউয়ের সফট ফিলিং-এ টাচ করতে নিজের শারীরিক সমস্যা তুলে ধরতে চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে বউয়ের ফিলিং সফট হয় না। সে কঠিনভাবে আঘাত করে বলে : পেট তো বড় হবেই। ঘুষখোরদের পেট বড় হয়।
ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের ভুড়ি থাকে, এদেশের মানুষের ভিতর এরকম একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। আমিও খুব অল্প বয়স থেকেই এরকমটি বিশ্বাস করে আসছি। কিন্তু আমি ঘুষ খাই না, দুর্নীতি করি না। মাইনের টাকায় কষ্টে কিন্তু সুখে আছি। আমি যে ঘুষ-দুর্নীতির মধ্যে নাই তা আমার স্ত্রী সবচেয়ে ভালো করে জানে। কিন্তু ঝগড়ায় তার জিততে হবে। তাই সে এমন কথা বলে। মেয়েমানুষ রাজ্য ছাড়তে রাজি থাকে, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ায় হারতে রাজি না। আমি পাখা বন্ধ করে দিই। সে শান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে।
হেমন্ত ঋতু। রাতে ও সকালে একটু একটু শিশির ঝরতে শুরু করেছে। হালকা শীতের আমেজ। গরম যাই যাই করছে, আর শীত আসি আসি করছে। সময়টা বেশ আরামদায়ক।
এই আরামদায়ক মৌসুমটা আমাদের রাত কাটে ঝগড়া করে। এটা আমাদের ঝগড়ার মৌসুম। আমি পাখা ছাড়ি, আমার স্ত্রী পাখা বন্ধ করে। সারা রাত এভাবেই চলে। দিনে অফিসে এসে আমার ঢুলুঢুলু অবস্থা। কলিগরা মুখ টিপে হাসে।
আমার স্ত্রীর বিশেষ সমস্যা হয় না। রাতের ঝগড়ায় সে সবসময় জেতে। এই কারণে তার ভিতর একরকম তৃপ্তি থাকে। আর দিনে ঘুমিয়ে সে রাতের কম ঘুম পুষিয়ে নেয়।
শীত তুমি কবে আসবে?
