ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবাক ব্রেকআপ

নওশীন তাসনুভা অর্পা
🕐 ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৯, ২০২১

অবাক ব্রেকআপ

চতুর্থ বয়ফ্রেন্ড আরিফের সঙ্গে আজ পলির ব্রেকআপ হয়েছে। তাই পলিকে সান্ত¡না দিতে আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলাম। বাসায় এসে দেখি পলি কাঁদছে।

‘দেখ, পলি কাঁদিস না। মনকে শক্ত কর।’ পলি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল, ‘মনকে আর কী শক্ত করব। আজ যদি আমি আম্মুর কথা শুনতাম তাহলে আমার এ অবস্থা হতো না।’

আমিও চেহারায় গুরুগম্ভীর ভাব এনে বললাম, ‘ঠিক, প্রত্যেকের উচিত মা-বাবার কথা শোনা। তা, আন্টি কী বলেছিল তোকে?’
‘আরে বললাম তো শুনিনি। আমি কী করে বলব কী বলেছে! শুনলে কি আর এ দশা হতো!’
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা ব্রেকআপটা কীভাবে হয়েছে সেটা তো বলবি!’
‘আর বলিস না। আরিফ অনেক লোভী। টাকার দেমাক অনেক।’
‘তাহলে তুইও বলতি তোর বড় চাচার কথা। যার ঢাকায় দুইটা বাড়ি আছে।’
পলির কান্নার আওয়াজ আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আরে এটাই তো বলেছিলাম। পরে আমাকে ছেড়ে চাচার ছোট মেয়েকে প্রপোজ করে ফেলেছে।’
থতমত খেয়ে আছি। কী বলব বুঝতে পারছি না। এদিকে পলি কেঁদেই চলছে- ‘বিশ্বাস কর, এর আগের একটা প্রেম নিয়াও আমি সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু এটা নিয়া আমি একদম সিরিয়াস ছিলাম। তুই জানিস আরিফ আমাকে ভালোবেসে কবিতা লিখত। এখন আমার জন্য কে কবিতা লিখবে বল? তার কবিতার তাল, সুর, ছন্দ সব ছিল ইউনিক। দাঁড়া, তোকে একটা কবিতা শোনাই।’
ব্যাগ থেকে আরিফের একটা চিঠি বের করল পলি। চোখ মুছে আবৃত্তি করল-
প্রিয় পলি
তুমি আমার শুঁটকির তাজা টাটকা ঘ্রাণ
তুমি আমার সবুজ বদনা আর ঝরঝরে সাবান
তুমি আমার কাচ্চি লুচি, তুমি আমার জান
তুমি আমার মেঘলা দিনে হালকা ড্রেনের ঘ্রাণ
তুমি যদি চা হও বাবু, আমি হব কাপ
দুজন মিলে জন্ম দিব নতুন চা এর কাপ।
ইতি তোমার আরিফ।
আমার গা কেমন যেন গুলিয়ে আসছে। রেগেমেগে বললাম, ‘এইটা কোনো কবিতা!’
পলি কাঁদছে তো কাঁদছেই- ‘তুই কবিতার কী বুঝবি! প্রথম প্রথম আমিও কবিতার মর্ম বুঝতাম না। পরে কবিতার ভাবার্থ বোঝার জন্য আমি আরিফের লিখা একটা কবিতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। এক ঘণ্টায় দুই হাজার হা হা রিঅ্যাক্ট পড়েছিল। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল কবিতাটা। আরিফের কবিতার মর্ম যে সে বোঝে না। বুঝলি!’ পলি আবার হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। সান্ত¡না দিয়েই চলছি। কিন্তু পলি কোনোভাবেই আর বেঁচে থাকতে চায় না। যে জীবনে আরিফ নেই সে জীবন পলি রাখবেই না। ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরে যাবে। অনেক বোঝালাম কিন্তু লাভ হলো না। শেষমেশ ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না। রেগে গিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে। খা ঘুমের ওষুধ।’
পলি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর প্যাকেট থেকে ঘুমের ওষুধ বের করে গ্লাসে পানি নিল। তারপর হঠাৎ চিৎকার করতে লাগল- ‘ছাড় আমাকে দোস্ত। ছেড়ে দে। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি এ ওষুধ খেয়ে মরে যেতে চাই।’
‘আমি তোর হাত ধরিনি। উল্টো তুই আমার হাত ধরে রাখছিস।’
কিন্তু কে শোনে কার কথা! পলি চিৎকার করেই যাচ্ছে- ‘দোহাই লাগে দোস্ত। ছেড়ে দে। যে জীবনে আরিফ নেই সে জীবন রেখে কী লাভ? আচ্ছা থাক, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তুই যেহেতু এত জোর করছিস তাই আপাতত সুইসাইডের চিন্তা বাদ।’
পলি চোখ মুছে মুচকি একটুকরো হাসি দিল। কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পড়েছিলাম। ততক্ষণে পলি ফেসবুকে নিজের কান্নার একটা ছবি আপলোড দিয়ে দিয়েছে। হ্যাশট্যাগ ব্রেকআপ ফ্যাক্ট।
কী বলব বুঝতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু পলি এবার নিজেই সহজভাবে মুখ খুলল, ‘দোস্ত, শোন একটা প্রেমের দুঃখ ভুলতে আরেকটা প্রেম করতে হয়। প্রেমই প্রেমের মলম। বুঝলি?’
গতকাল শাকিব নামের একটা ছেলে আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছিল। সেও আরিফের মতোই অনেকটা কবি কবি। কী সুন্দর কবিতা লিখেছে আমার জন্য! এখন যেহেতু সিঙ্গেল তাই ভাবছি শাকিবকে পঞ্চম বয়ফ্রেন্ড হিসেবে রাখাই যায়। কী বলিস?’ ‘তুই যা ভালো মনে করিস।’ পলি এবার অভিমানী সুরে বলে উঠল, ‘তুই আমার বেস্টু। এরপরের বার ব্রেকআপ হলেও কিন্তু তাকেই আসতে হবে আমাকে সান্ত¡না দেওয়ার জন্য। বুঝলি? তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? আচ্ছা দাঁড়া, তোকে শাকিবের লেখা কবিতাটা শোনাই।’
তারপর ব্যাগ থেকে আরেকটা চিরকুট বের করে গলাখাঁকারি দিয়ে পলি আবৃত্তি করতে লাগল-
তোমার আমার ভালোবাসা
হয়ে গেল ডিমের খোসা
আমি সিদ্ধ, তুমি ভাজি
কী করবে এবার কাজী!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper