পড়ছে...
বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ২:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১
সালমা পড়ছে।
বানান করে।
‘দন্তস্য স উকার... বর্গীয় জ দন্ত্যন- সুজন।’
‘এই তুই কী করছিস রে?’ ওর মা এসে তাড়া দিলেন।
‘মা, পোস্টার দেখি।’
‘খায়া দায়া কাজ আর নাই। এইগুলাই তো দেখবা।’
‘মা, এইখানে লেখা আছে- সুজন-সখী। সুজন-সখী মানে কী মা?’
থমকে গেলেন সালমার মা। তিনি লেখাপড়া করেননি।
‘এইগুলা তোর বাপরে জিজ্ঞেস করবি। তোর বাপ এইগুলার খোঁজখবর রাখে বেশি, বুঝলি?’
দুই.
মিতু পড়ছে।
সে ঠিকই বুঝল। আর যাই হোক এই চিঠি মাকে দেখানো যাবে না। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল ও।
বাংলা বইয়ের ভিতরে একটা চিঠি। দিয়েছে ওর গৃহশিক্ষক কাদের ভাই।
কাদের ভাই ওদের বাসাতেই লজিং থাকে।
‘কই রে মিতু, কী করিস? খেতে আয়।’ রান্নাঘর থেকে সজোরে ডাকলেন সালমা।
‘আসছি মা।’ হুড়মুড় করে বাথরুমে ঢুকল। চিঠির ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করল। লাইনে লাইনে কাদের ভাই প্রকাশ করেছে মিতুর প্রতি গভীর ভালোবাসা। পড়তে পড়তে চোখ থেকে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগল ওর।
‘মিতু, কই তুই?’ সালমা বেগম চিৎকার করলেন।
‘আসছি মা।’
কাদের ভাইয়ের লেখা চিঠি কুচি কুচি করে ছিঁড়ে টয়লেটে ফেলে দিল মিতু। কান্না লুকাল অনেক কষ্টে।
তিন.
জেরিন পড়ছে।
কোনো লুকোছাপা নেই। নেই কোনো কষ্ট। পড়ার টেবিলে বসেই পড়ছে।
‘কী করছিস রে মা?’ মিতু বেগম জানতে চাইলেন।
‘পড়ছি মা।’ চেঁচিয়ে বলল জেরিন।
‘কী পড়ছিস?’
‘রাসেল ভাইয়ার কাছে অনলাইনে কেমিস্ট্রি পড়ছি মা। ডিস্টার্ব কোরো না।’
মিতু বেগম চুপ মেরে গেলেন। আজকালকার মেয়েদের কোনো কিছু বলাই যায় না।
‘আম্মু, ডাকাডাকি করছে। আম্মুটা যে কী! কিছুই বুঝতে চায় না।’ জেরিন লিখল মেসেঞ্জারে।
‘তুমি বলে দাও, জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলছ।’ ওদিক থেকে লিখল রাসেল। সঙ্গে হাসির ইমোজি।
‘একদিন ঠিকই বলব। সময় হোক।’ জেরিন লিখল।
জেরিন পড়ছে।
বইও না।
চিঠিও না।
ডিজিটাল চিরকুট।
নাম মেসেঞ্জার।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228