ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যাত্রাপথে বিড়ম্বনা

হুমায়ুন আবিদ
🕐 ৩:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২১

যাত্রাপথে বিড়ম্বনা

গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো শেষে ঢাকার বাসায় যাওয়ার জন্য যখন রওনা দেব ঠিক তখনই বাড়ির এক পুরাতন ভৃত্য রহিম মিয়া এসে হাজির। সালাম দিয়ে বলতে শুরু করল, রোগে-শোকে আজ জর্জরিত, আগের মতো কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। কখনো দু’বেলা খেতে পারি আবার কখনো পারি না। যদি পারেন কয়ডা টাহা দিয়া যাইয়েন ছোট ভাইজান।

রহিম মিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি শরীর স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে গেছে। মনে মনে ভাবলাম রহিম মিয়া আমাদের বাড়ির কত কাজ করত। আজ তার দুর্দিন। তাকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য। তাই ছয়নয় চিন্তা না করেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাতে গুঁজে দিয়ে বের হলাম।

বাড়ির বাইরে এসে দেখি গফুর মিয়া রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম, তাড়াতাড়ি বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে চল। বাস স্টেশন গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে।

রিকশা চৌরাস্তার মোড়ে যেতেই দেখি তিনজন যুবক আর দুজন বৃদ্ধা হাত ইশারায় রিকশা থামাল। সালাম দিয়ে বলতে শুরু করল, আপনাদের দান-খয়রাতে নতুন একটা মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।


ছয়নয় চিন্তা না করেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে যুবকদের হাতে গুঁজে দিয়ে গফুরকে বললাম, তাড়াতাড়ি বাসস্ট্যান্ডে চলো।

বাসস্ট্যান্ডে এসে গফুর মিয়া বলতে শুরু করল- স্যার, আপনাকে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসব বলে সেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু বোনাস দিয়েন। আপনারা না দিলে বউ পোলাপাইন লইয়া চলব কেমনে?

মনে মনে ভাবলাম, বাড়িতে আসতে-যেতে গফুর মিয়াই আমাকে হেল্প করে। তাই বেশি চিন্তা না করেই গফুর মিয়াকে ভাড়া এবং বোনাস দিয়ে বিদায় করলাম। একটু পরেই বাস চলে এলো। আরাম করে বসে পড়লাম। বাস চলার একটু পরেই দেখি মাঝবয়সী বোরকা পরিহিতা এক মহিলা বাসের সিটে বসা সবাইকে দুটি করে চকলেট আর একটি লেখা কাগজ বিলি করে যাচ্ছে।

কতক্ষণ পরেই মহিলাটি আমার কাছে এসে বলল- ভাইজান, আমার মেয়েটি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে। আপনাদের দয়া আর সাহায্যের ওপরই নির্ভর করছে আমার মেয়েটির জীবন-মরণ। যদি পারেন কিছু সাহায্য করেন।


মনে মনে ভাবলাম, আমিও এক পিতা, আমার সন্তানের যদি এমন হয়! চিন্তা না করেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে মহিলাকে দিলাম।

মহিলা যাওয়ার একটু পরেই দেখি বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাসের মধ্যে কয়েকজন হিজড়ার আগমন। হিজড়ারা সামনের সিটে বসা এক লোকের কাছে বিশ টাকা চাইতেই লোকটি বলল, মাফ করেন! হিজড়ারা লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, হাতে ধরে মাফ চাইছেন না পায়ে ধরে। লোকটি হিজড়াদের কথা শুনে একেবারে থতমত হয়ে গেলেন। কয়েকজন হিজড়াদের টাকা দেয়নি বলে দেখলাম তাদের সঙ্গেও খুব খারাপ আচরণ করতেছে। মনে মনে ভাবলাম বিশ টাকা বড় কিছু না, আগে মান সম্মান বাঁচাই। তাই ছয়নয় চিন্তা না করেই পকেট থেকে বিশ টাকা বের করে হিজড়াদের হাতে গুঁজে দিলাম।

বাস থেকে নেমে রেল স্টেশনে প্রবেশ করে দেখি ট্রেন আসতে আরও ঘণ্টা খানেক দেরি। সময় কাটানোর জন্য এক্কান পত্রিকা কিনে যখন পড়তেছিলাম, এমন সময় কয়জন স্মার্ট তরুণ এবং তরুণী কাছে এসে সালাম দিয়ে বলতে শুরু করল, আমরা একটা পথ শিশুদের স্কুল থেকে এসেছি। যেখানে অনেক পথশিশুদের হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। আপনাদের সাহায্য সহযোগিতায় চলছে পথ শিশুদের এই স্কুল। আমার হাতে একটি প্রসপেক্টাস দিয়ে বলল, প্লিজ ভাইয়া আমাদের স্কুলটির জন্য একটু সহযোগিতা করুন। মনে মনে ভাবলাম এরা তো সমাজের জন্য দেশের জন্য অনেক মহৎ কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া আমাকে যেভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলল, তাদের হাতে কিছু না দিলে তো সম্মানের মূল্যই থাকে না। তাই ছয়নয় চিন্তা না করেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তাদের হাতে গুঁজে দিলাম।

স্মার্ট তরুণ-তরুণীরা চলে যাওয়ার একটু পরেই দেখি হাতে তাসবিহসহ চারজন হুজুর এসে আমাকে সালাম দিয়ে বলতে শুরু করলেন, আমরা একটি এতিমখানা থেকে এসেছি। আমাদের এতিমখানায় প্রায় দুইশ’র মতো এতিম ছেলেমেয়ে আছে। তাদের ভরণপোষণ আর দ্বীনি শিক্ষার জন্য আমাদের কিছু সাহায্য করুন। মৃত্যুর পর আপনার সব কিছু পড়ে থাকবে। কোনো কিছুই আপনার কাজে আসবে না। শুধু সঙ্গে যাইবে আপনার আমল আর দান খয়রাতের সওয়াব। মনে মনে ভাবলাম সত্যিই তাই। কত টাকা কত ভাবে নষ্ট করি এখানে কিছু দিলে ক্ষতি নেই বরং সওয়াবের ভাগিদার হব। তাই ছয়নয় চিন্তা না করেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের হুজুরদের হাতে গুঁজে দিলাম।

একটু পরেই রেলস্টেশনের মাইকে শোনা গেল, জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই এক নম্বর লাইনে এসে দাঁড়াবে। ট্রেনে উঠে সিটের মাঝে হেলান দিয়ে বসতেই সমস্ত দিনের ক্লান্তি এসে দু’চোখ জাপটে ধরল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই। এটেনডেন্টের ধাক্কায় যখন ঘুম ভাঙল চেয়ে দেখি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে গেছি। পাশে বসা লোকটিও নেই। ট্রেনের তাক থেকে লাগেজ পাড়তে গিয়ে দেখি লাগেজ নেই। এটেনডেন্টকে লাগেজের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, এভাবে ঘুমালে চুরেরা লাগেজ কেন, গায়ের জামাকাপড়ও খুলে নিতে পারে!

পকেটে হাত দিয়ে দেখি টাকা-মোবাইল ফোন কিছুই নেই। হতাশ মনে বাইরে এসে দেখি, অঝোরধারায় বৃষ্টি পড়ছে। কী আর করা, ভীষণ ক্ষোভ বুকের মধ্যে চেপে বৃষ্টিতে ভিজেই বাসার দিকে রওনা দিলাম। পথে কেউ নতুন কোনো আগন্তুক রকমারি সমস্যা নিয়ে সামনে না দাঁড়ালেই হয়!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper