তুফান সাহেবের বউ
গাজী ফরহাদ
🕐 ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
তুফান সাহেব রুটিন অনুযায়ী চলাফেরা করতে পছন্দ করেন। দৈনিক রুটিন হিসেবে তিনি ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হন। সকাল ৮টা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করেন। এরপর বাড়িতে এসে একটু বিশ্রাম নেন; গোসল করেন, গোসল করা শেষ হলে পত্রিকা হাতে নিয়ে বারান্দায় বসেন। পত্রিকা পড়তে পড়তে নাস্তা শেষ করেন।
দৈনিক রুটিন হিসেবে হাঁটাহাঁটির মাঝে যাকে সামনে দেখেন তাকেই হাঁটাহাঁটির গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার চেষ্টা চলতে চলতে একসময় দেখেন তিনি হাঁটতে বের হলে তার সামনে আর কেউ পড়ে না। ঠিক আজও দৈনিক রুটিন হিসেবে নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হয়েছে প্রায় নিজের এলাকার শেষ সীমানায় চলে এসেছেন। একজন লোককে দেখে তুফান সাহেব লোকটার দিকে দ্রুত হাঁটছেন, উদ্দেশ্য লোকটাকে হাঁটার গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো। লোকটা তুফান সাহেবকে দেখে দিলেন ভোঁ দৌড়। তুফান সাহেব ভয়কে জয় করতে পারেন না কারণ তিনি যথেষ্ট ভীতু টাইপের লোক। চোর-ডাকাত মনে করে তিনি দ্রুত হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন, দৌড়াতে পারেন না নয়ত তিনি দৌড়ে বাড়িতে যেতেন।
বাড়িতে এলেন, একটু বিশ্রাম নিয়ে গোসল করতে গেলেন। গোসল শেষ করে পত্রিকা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে চেয়ারে বসলেন। তুফান সাহেবের স্ত্রী মিসেস জরিনা বেগম নাস্তা টেবিলে রেখে চলে গেলেন রান্নাঘরে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পত্রিকার শিরোনামগুলো পড়ে যাচ্ছেন। খাটের ওপর তুফান সাহেবের মোবাইল ফোন একটানা বেজে চলছে। মিসেস জরিনা বেগম বিরক্তির ভাব নিয়ে মোবাইল ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল- আজকে এখনো বাজার করে নিয়ে আসোনি? সকাল ১০টা বাজে, দুপুরের রান্না করতে হবে না? আধাঘণ্টার মধ্যে ঘরে বাজার না আসলে আজকে পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিব, বলে দিলাম।
মিসেস জরিনা বেগম কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। জরিনা বেগম বুঝে নিলেন তার স্বামী দুই বিয়ে করেছে, সকাল বেলা হাঁটতে বের হওয়ার নাম দিয়ে দ্বিতীয় বউয়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়। মিসেস জরিনা বেগম মুখে কাপড় দিয়ে বিলাপ করতে করতে কান্না করছেন। এইদিকে তুফান সাহেব বউয়ের কান্নার শব্দ শুনে বললেন, আজকে ঝগড়া করার উপায় না পেয়ে কান্না করছ নাকি? তুফান সাহেবের দৈনিক রুটিন যেমন আছে ঠিক জরিনা বেগমেরও দৈনিক রুটিন আছে। রুটিন হিসেবে আছে, ঝগড়া। যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে জরিনা বেগম ঝগড়া করেন।
জরিনা বেগম মুখে কাপড় দিয়ে বারান্দায় এসে তার স্বামী তুফান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই যে বুড়া, হাঁটতে বের হওয়ার নাম দিয়ে যে আরেকটা মহিলার সঙ্গে দেখা করতে যাও; সেটা কি আমি বুঝি না? সেজন্যই তো বলি প্রতিদিন হাঁটতে বের হওয়ার কারণ কী। বুড়া বয়সে যে আরেকটা বিয়ে করে আমার জীবনটা শেষ করলে, এর মানে কী?
-আরে আমি কোথায় তোমার জীবন শেষ করলাম? তুমিই তো সারাদিন কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করে আমার জীবনটা শেষ করলে। আর আজকে কোনো ইস্যু পাচ্ছ না দেখে কান্না জুড়ে দিলে! আবার পাগলের মতো বলছ, আমি বুড়া বয়সে আরেকটা বিয়ে করেছি। আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই, এক বিয়ে করে শান্তি নেই আবার আরেকটা বিয়ে করতে যাব কোন দুঃখে?
-ও আচ্ছা এখন তো আমি পুরান হয়ে গেছি, বুড়া হয়ে গেছি। এখন সামান্য কথা বললেও আমি সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করি। তাই না?
-এখন আজকে ঝগড়া লাগার মূল কারণ কী সেটা বলো?
-তোমার স্ত্রী কল করেছে। কল করে বলল, আধা ঘণ্টার মধ্যে বাজার না নিয়ে গেলে পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবে।
-পাগলের মতো কথা বলা বন্ধ কর।
-আমি তো এখন পাগল। উচিত কথা বলি তো সেজন্য। কল করে আপনার স্ত্রীর রাগ কমান, আর তাড়াতাড়ি বাজার নিয়ে যান নয়ত পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবে।
-দেখি মোবাইল ফোন দাও। সারাদিন তোমার ঘ্যানঘ্যান আর শুনতে ইচ্ছে করে না।
-উচিত কথা বলি আর তুমি বলো আমি সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করি। এখনই বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি, ভালো থেকো তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে।
-পাগল-ছাগল কথা বলতে পারে না, ঘ্যা ঘ্যা করে, ম্যা ম্যা করে। মোবাইল দাও, দেখি কোন শালার বেটি কল করে আমার সংসার ভাঙতে চাইছে।
তুফান সাহেব মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কল দিলেন ওই মহিলাটাকে। কয়েকবার কল বাজতেই রিসিভ হলো।
-কে বলছেন?
-আরে আমি কে বলছি সেটা পরের কথা। আপনি কে বলছেন সেটা বলেন!
-কল করেছেন আপনি, আমি পরিচয় দিতে যাব কেন?
-কী আজব! একটু আগে আপনি কল দিয়ে বলেছেন, আধা ঘণ্টার ভিতরে বাজার না নিয়ে আসলে আপনি পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবেন।
-হ্যাঁ, এটা তো আমার স্বামীকে বলেছি।
-কী মুসিবত, আমার স্ত্রী দাবি করছে আপনি আমার নম্বরে কল করে, আমার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কথা বলেছেন।
-ভাইজান, আমি চোখে একটু কম দেখি। হয়তো ভুলে আপনার মোবাইলে কল চলে গেছে। ক্ষমা করবেন।
-এরপর দেখে-শুনে কল দিয়েন। আমার তো সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেল। আপনার কল পেয়ে তো বউ বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে।
-আচ্ছা ভাবিকে বলবেন ভুল করে কল দিয়ে ফেলেছি।
-আচ্ছা, ঠিক আছে।
-কী শুনলে তো। ভুল করে কল দিয়ে ফেলছে। বাপের বাড়ি চলে যাবে?
-বাপের বাড়ি যাওয়ার দরকার হবে না আর।
জরিনা বেগম মোবাইল ফোনটা খাটের ওপর রাখতেই আবার একটা নম্বর থেকে কল এলো- এই কলটাও একজন মহিলা করেছেন। জরিনা বেগম কল ধরে এইবার উল্টো কল করা মহিলার সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দিলেন। স্বামীর সঙ্গে যেহেতু ঝগড়া কম হয়েছে তাই ঝগড়ার প্রতিশোধ নিচ্ছেন মহিলার ওপর।
একপর্যায়ে জরিনা বেগম ক্লান্ত হওয়ার পর মোবাইল ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলেন, আপা, আমি আপনার ছোট বোন ঝর্ণা।
-তোর নম্বর তো সেভ করা নেই। সেভ করল না কেন, তোর দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করে আসি!
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228