আশাভঙ্গের গল্প
শিমুল শাহিন
🕐 ৩:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
বন্ধুরা আমায় মরিনহো বলে ডাকে। মরিনহোর সঙ্গে নিশ্চয়ই চেহারার মিল আছে বলে তার নামে ডাকে এমনটা ভাবছেন? মোটেও না! বিশ্বের সেরা ফুটবল কোচদের অন্যতম হোসে মরিনহো। যদিও মরিনহো সাহেব নিজে কখনও পেশাদার ফুটবল খেলেননি, কিন্তু ফুটবলটা কেমনে খেলাতে হয়, সফলতা পেতে হয় তা তার বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল দিয়ে বারবার দেখিয়ে দিয়েছেন। আমার নামকরণের কারণটাও অনেকটা এমন। অবশ্য তা ফুটবলের ক্ষেত্রে নয় মোটেও; প্রেমের ক্ষেত্রে! মরিনহো যেমন ফুটবল খেলেননি, আমিও তেমনি কখনো প্রেম করিনি। কিন্তু মরিনহো যেমন কোচিংয়ে সফল, আমিও তার মতোই অনেকের প্রেমের পালে হাওয়া লাগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল! প্রেমের খাতে পদক দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে মরিনহোর মতো আমারও প্রাপ্তির ঝুলি ভরে যেত এতদিনে! আমার এ সফলতার গপ্প কারও অজানা নয়। জুনিয়রদের থেকে শুরু করে সিনিয়রদেরও টুকটাক খানাপিনার বিনিময়ে সোজা-বাঁকা পরামর্শ দিয়ে প্রেমের রাজ্যে রাজাধিপতি করে দিয়েছি। কিন্তু আমার এই সফলতার জাহাজ টাইটানিকের মতো ধাক্কা খেয়ে ডুবতে বসেছে আজ!
আমার সফলতার জাহাজ ডোবানোর মূল কুশীলব বন্ধুবর মাইনুল। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে লাজুক সে। বন্ধুমহলে সে দিব্যি চুটিয়ে আড্ডা দেয়, খোশগল্প করে। কিন্তু কোনো মেয়ে সামনে এলেই সে কাছিমের মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয় খোলসের মধ্যে। আর এজন্যই সবার প্রেমের শিঁকে ছিড়লেও আমার মতো মাইনুলেরটাও অক্ষত রয়ে গেছে।
মাইনুলের বড়ভাই খাইরুল ভাইয়ের কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছে। বন্ধুদের আড্ডায় মাইনুলের মুখেই শুনেছিলাম নতুন ভাবির একটা সুন্দরী চাচাত বোন আছে। মাইনুলের কথায় আমরা সবাই বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটিকে মাইনুলের মনে ধরেছে বেশ। আর এজন্যই যেভাবেই হোক এইবার মাইনুলের শিঁকে ছেড়া লাগবে বলে বন্ধুরা উঠেপড়ে লেগেছিল। সবাই মাইনুলকে দেশীয় মোটিভেশনাল স্পিকারদের মতো একগাদা উপদেশ দিয়ে মাইনুলের দৃঢ় করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনোভাবেই মাইনুলের লাজুকতা দূর করতে পারছিল না। অবশেষে সবাই আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল।
আমার প্রতি ওদের ভরসা এড়িয়ে যেতে পারিনি। রেস্টুরেন্টে তখনই রীতিমতো মাইনুলের ক্লাস নেওয়া শুরু করলাম। মাইনুলকেও দেখলাম বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার কথা শুনছিল। মাইনুলের আগ্রহ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম নতুন ভাবির বোনের প্রতি সে কতটা সিরিয়াস। কফিতে চুমুক দিয়ে মাইনুলকে বললাম, ‘শোনো বন্ধু, সচরাচর মেয়েরা ছেলেদের চেহারা, ফিটনেস কিংবা টাকা ভর্তি মানিব্যাগ দেখে প্রেমে পড়ে না!’ মাইনুল চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করল, ‘তা কী দেখে পড়ে?’
কিঞ্চিত হেসে বললাম, ‘কথা শুনে প্রেমে পড়ে!’
ভ্রু কুঁচকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘কথা শুনে মেয়েরা প্রেমে পড়ে?’
ওর অবাক হওয়াকে পাত্তা না দিয়ে যোগ করলাম, ‘একদম। যেসব ছেলে নয়া প্রেমে পড়েছে তাদের দিকে সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখবি তারা শারীরিকভাবে যত না স্মার্ট তারচেয়ে বেশি স্মার্ট কথা বলায়!’
‘কীভাবে?’
‘একটা মেয়ে একটা ছেলের প্রেমে প্রথম পড়ে তখনই- যখন ছেলেটা গুছিয়ে মেয়েটার একরাশ প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে। কয়েক মিনিটের ফোনালাপ বা চ্যাটালাপ শুনে বা দেখে মুগ্ধ হয়েই প্রেমে পড়ে যায় তারা!’
আমার কথায় সে বেশ উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে নতুন ভাবির বোনকে ডেকে তার রূপের প্রশংসা করতে হবে বলছিস?’
‘হ্যাঁ একদম! সেটা তুই চাইলে সামনাসামনিও করতে পারিস, মুঠোফোনেও করতে পারিস!’
ঢোক গিলে সে বলল, ‘মুঠোফোনেই করব তাহলে, অন্তত রেগেমেগে গেলে চড়-থাপ্পড় খাওয়ার ভয় থাকবে না!’
মাইনুলের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিল। তাকে অভয় দিয়ে বললাম, ‘তুই বরং সামনাসামনিই কথা বল, তাহলে আমরা অন্তত দূর থেকে ওর আচার-আচরণ দেখে ধারণা করতে পারতাম সে কী চায়!’
সবার চাপাচাপিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সামনাসামনি ডেকেই মাইনুল আমার প্রথম ক্লাসের শিক্ষা প্রয়োগ করবে নতুন ভাবির বোন আশার উপর। এদিকে আশাও ঘটনাক্রমে সেদিনই তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে, এ সুযোগ সহসা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। পরিকল্পনা মতো আজ আশাকে রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে এসেছে মাইনুল। আমরা বন্ধুরা মিলে ওদের টেবিলের কিছু দূরে অন্য একটা টেবিলে বসে তীক্ষè নজর রাখছি। খাবার এল, দুজনে টুকটাক খেল। বেশ ভালোই চলছিল, তারপর মাইনুল কী জানি বলল; এতেই আশা উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। কীসব বলল মাইনুলকে, তারপর হনহন করে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আশা চলে যেতেই আমরা ছুটে এলাম মাইনুলের কাছে। বিধ্বস্ত ও লজ্জিত মাইনুলকে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে সবাই। সবাইকে চুপ করিয়ে মাইনুলের কাঁধে হাত রেখে বললাম, ‘কী রে, এত রেগেমেগে ও চলে গেল কেন? শুরুতেই প্রপোজ করে বসেছিলি নাকি?’
কাঁদো কাঁদো হয়ে মাইনুল উত্তর দিল, ‘প্রপোজ করতে যাব কেন? তোর কথা শুনেই তো ওর প্রশংসা করতে গিয়েছিলাম। তাতেই ও রেগে চলে গেল!’
অবাক হয়ে বললাম, ‘কী বলিস? প্রশংসা করতেই রেগে গেল? কী প্রশংসা করেছিলি?’
আমতা আমতা করে মাইনুল বলল, ‘ওকে বলেছিলাম- আশা, তুমি কত সুন্দর তা জানো? আমার কী মনে হয় জানো! সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ে বানিয়ে ফেলেছেন!’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228