আত্মহত্যা বিড়ম্বনা
গাজী ফরহাদ
🕐 ৬:১২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২১
এক বছর ভেবেচিন্তে আজকে আত্মহত্যা করার পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বয়স ৩০ পেরিয়ে ৩১ হলো এখনো আমাকে বিয়ে করানোর খবর নেই। মা-বাবার চোখে এখনো নাকি আমি বাচ্চা ছেলে। চিন্তা করুন, ৩০ বছরে বাচ্চা, ৪০ বছরে কিশোর, ৫০ বছরে যুবক! ইতোমধ্যে আমার বন্ধুরা বিয়ে-শাদি করে বাচ্চার বাপ। লাজলজ্জায় তাদের সামনে যাওয়া যায় না। ভুল করে তাদের সামনে পড়ে গেলে টিটকারি করে বলে, চিন্তা করিস না বন্ধু। আমার ছেলেকে আর তোকে একসঙ্গে বিয়ে করাব।
বন্ধুদের থেকেও মারাত্মক তাদের ছেলেরা। একদিন তো হুট করে আমার বন্ধু রাফির ছেলে বলেই ফেলল, কাগু, আমরা কিন্তু একসঙ্গে বিয়ে করব। এই অপমান সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না বলেই এক বছর চিন্তাভাবনা করার পর আজকে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছি।
এলাকা থেকে রেললাইনের দূরত্ব পাঁচ মিনিটের। হেঁটে যেতে হচ্ছে। পকেটে টাকা-পয়সা নেই। গরিব। মরার আগে কারও কাছে ঋণী থাকতে চাই না। তাই মরার আগে রিকশায় ওঠার সৌভাগ্য হচ্ছে না। অতীতে অনেকের টাকা মেরে খেয়েছি। আল্লাহ যদি মাফ করেন!
রেললাইনের কাছাকাছি আসতেই হারামজাদা মতিন কাকুর সঙ্গে দেখা। আমার দেখা সবচেয়ে বড় হারামি তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে আমার জন্য পাত্রী দেখছেন এখনো সামনে পড়লে বলেন, তোর জন্য পাত্রী দেখতেছি।
দ্রুত হেঁটে যাচ্ছি মরার আগে হারামজাদার সঙ্গে কথা বললে মৃত্যুর অমঙ্গল হবে।
-কী রে এত দ্রুত হেঁটে কোথায় যাচ্ছিস?
-মরতে।
-আরে কী বলিস! মরতে যাবি কেন?
-দুঃখে। মরার আগে আপনার সঙ্গে কথা বলার শখ নাই। পথ ছাড়েন। আমার অমঙ্গল হবে।
-তোর জন্য সুখবর একটা আছে।
-তাড়াতাড়ি বলেন।
-একটা দুঃসংবাদও আছে। কোনটা আগে শুনবি?
-দুইটা একসঙ্গে বলেন শুনি।
-আগে যে কোনো একটা শুনতে হবে।
-সুখবরটা বলেন।
-কসম করে বলছি। আজ তোর জন্য একটা মেয়ে দেখছি। ডাবল কসম।
-সত্যি?
-হুমম।
-দুঃসংবাদটা কী?
-দুঃসংবাদ হইল মেয়ের বয়স ১২ বছর।
-আপনারে এমনি এমনি আমি হারামজাদা বলি না!
-কী বললি, শাহজাদা?
-কানের ডাক্তার দেখান।
মতিন কাকুকে পেছনে রেখে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ট্রেন আসতে আরও একঘণ্টা বাকি। মরার আগে এক ঘণ্টা রেললাইনে ঘুমানো যাবে। রেললাইনে এসে লম্বা হয়ে শুয়ে গেছি। এক ঘুমে চার ঘণ্টা।
ঘটনা কী! ট্রেন কী আজ আসেনি?
পাশ দিয়ে একজন ভদ্রলোক যাচ্ছে। তাকে বললাম, ওই কাকা, ট্রেন আসেনি?
-চার ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন গেছে তিনটা। আপনি বলছেন ট্রেন যায়নি। একটু আগেও একটা গেল।
-তো আমি মরলাম না কেন?
-মরবেন কীভাবে? যে লাইনে ঘুমাইছেন এই লাইন দিয়ে তো গত চার বছরে একটা ট্রেনও যায়নি।
-আমি তো জানি না।
-আমিও একটু আগে জানলাম।
আগেই ধারণা করেছিলাম, মতিন কাকুর সঙ্গে কথা বললে আমার মৃত্যুর অমঙ্গল হবে। হয়েছেও তাই।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228