ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বর বিভ্রাট

শিমুল শাহিন
🕐 ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২১

বর বিভ্রাট

সকালবেলা মুঠোফোনের চিৎকারে ঘুম ভাঙল। আধখোলা চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ফোনটার গলা চেপে ধরলাম। ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। বাচ্চাটা তোতলা গলায় বলল, ‘আব্বু, আব্বু, বাজাল থেকে আসার সময় আমার জন্য আইসকিলিম আনবা!’

‘আচ্ছা ঠিক আছে, নিয়ে আসব।’ বলে ফোনটা বালিশের পাশে রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার মুঠোফোনটা বাজল। সেই একই নাম্বার থেকেই কলটা এসেছে। এবার অপর প্রান্তে মিষ্টি একটা নারীকণ্ঠ। ফোনটা ধরতেই নারীকণ্ঠটা বলল, ‘ওগো শোনো, ফ্রিজে ডিম নেই। কিছু ডিম নিয়ে এসো! আর রোস্টের মশলা লিস্টে যোগ করতে ভুলে গেছি!’
চমকে উঠলাম। স্বপ্ন দেখছি না তো? কিছুক্ষণ আগে একটা বাচ্চার ফোন এলো, এখন আবার অচেনা এক মহিলার। অবাক করা বিষয় হলো একজন ‘আব্বু’ ডাকল, অন্যজন মিষ্টি স্বরে ‘ওগো’ ডেকে এটা-ওটা আনতে বলল। কী হচ্ছে কিছুই বুঝছি না। মাথাটা আউলিয়ে গেল না তো? গত রাতে জেগে থেকে একটা গল্পের প্লট দাঁড় করাতে গিয়ে মোটেও ঘুম হয়নি। ভাবলাম, এ জন্যই হয়তো এমন অদ্ভুতুড়ে সব স্বপ্ন দেখছি। এমন যখন ভাবছি তখন আবারও একই নাম্বার থেকে কল এলো। সেই নারী কণ্ঠটাই বলল, ‘বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আম্মার কয়েকটা ওষুধ ফুরিয়েছে। প্রেসক্রিপশনটা হোয়াটসঅ্যাপ করে দিয়েছি, লালমার্ক করা ওষুধগুলো আনবা।’
আমি মহিলাটির ভুল ভাঙাতে যাব তার আগেই সে মিষ্টি ভঙ্গিতে যোগ করল, ‘আর ফার্মেসিতে যাচ্ছই যখন, বোঝই তো আর কী আনতে হবে! বাড়িতে থাকবা আজ, ভুলে যেও না যেন!’ আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না, তার আগেই মহিলা কলটা কেটে দিল। বুঝছি না কী ঘটছে আমার সঙ্গে। রং নাম্বারে নানান রকম বিচিত্র সব ঘটনা আমার সঙ্গে এর আগেও ঘটেছে। একবার এক লোকের দশ টাকা রিচার্জ ভুল করে চলে এসেছিল। তারপর সে কী কা-, সেই টাকা ফেরত পেতে শ’ খানেকবার নিয়মিত বিরতিতে ফোন করে বিরক্ত করেছিল লোকটা। আবার অনেক সময় ‘অমুক ভাই, তমুক ভাই’কে চেয়ে অসংখ্য ফোনকল তো আসতেই থাকে। কিন্তু আজকের বিষয়টা একদম আলাদা, বেশ অবাকই হয়েছি বলা যায়। কারণ ছোট বাচ্চাটা না হয় ভুল করতে পারে, কিন্তু এমন ধাড়ি মহিলার ভুল কেন হবে! ভেবে কিনারা করতে পারছি না। অবশ্য সকাল সকাল এমন কলগুলো আসাতে যতটা বিরক্ত হয়েছিলাম তা ধীরে ধীরে কেটে গেছে, বরং এখন বেশ ভালোই লাগছে। ক্যারিয়ার গোছাতে গিয়ে এখনো বিয়ে-থা করে ওঠা হয়নি। প্রায় সব বন্ধু-বান্ধবী একটা-দুইটা বাচ্চাকাচ্চার বাবা-মা হয়ে বসে আছে এরই মধ্যে। আজকে ‘আব্বু’ আর ‘ওগো’ ডাক শুনে বিয়ের ইচ্ছেটা হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
এরপর সেই অচেনা নম্বর থেকে কল এলে মহিলাটার ভুল ধরিয়ে দেব মনস্থির করলাম। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক চলে গেল তবু সে নাম্বার থেকে আর কল এলো না। অবশ্য তারও কিছু পরে এল বন্ধু সুমিতের কল। সুমিত আমার স্কুলজীবনের খুবই কাছের বন্ধু। ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে ওর বাসায় আমাদের আগামীকাল দাওয়াত আছে। ওর ফোন ধরে বললাম, ‘কী অবস্থা দোস্ত, বল!’
সুমিতের ওপাশ থেকে চাপা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। সব সময় উচ্ছ্বসিত থাকা সুমিতের এমন অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী রে দোস্ত, বৌদি কেলিয়েছে নাকি?’
ও আমতা আমতা করে বলল, ‘হ রে, খুব ভালো মতোই কেলিয়েছে আজ!’
আঁতকে উঠে বললাম, ‘কাল তো তোর ওখানে সবার যাওয়ার কথা, বউয়ের কেলানি খেয়ে প্ল্যান ক্যান্সেলের জন্য ফোন দিসনি তো?’
বলল, ‘না রে, পার্টি নির্ধারিত ক্ষণেই হবে!’
হেসে বললাম, ‘যাক, তাও ভালো! তা কেলানি খাইলি কেন বল তো?’
‘আজ সকালে তোর ফোনে শেষে ১৫ নম্বর থেকে কোনো কল গিয়েছিল?’
‘খেয়াল করিনি শেষের ডিজিট, তবে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছিল! একটা বাচ্চা আর একটা মহিলা ফোন দিয়েছিল!’
চিমসে গলায় জিজ্ঞেস করল সুমিত, ‘কী বলেছিল ওরা?’
বললাম, ‘বাচ্চাটা আইসস্ক্রিম আনতে বলেছিল, আর মহিলাটা ডিম, ওষুধ আর ইয়ে টাইপ জিনিসপাতি কী সব!’
গলা খাকারি দিয়ে সুমিত বলল, ‘কেলানিটা এজন্যই খাইছি রে দোস্ত!’
হয়ে বললাম, ‘আমার ফোনে রং নাম্বার থেকে কল এসেছিল কেমনে জানলি? কী হয়েছে খুলে বল তো!’
গলা নামিয়ে বলল সুমিত, ‘আমার অফিস থেকে কাল আসতে একটু দেরি হতে পারে ভেবে তোর নাম্বারটা তোর ভাবির মুঠোফোনে সেভ করে রেখেছিলাম! ভেবেছিলাম সূচির নাম্বারটাও তোকে দিয়ে রাখব, তাহলে আমি মিটিংয়ে থাকলেও তোরা ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছাতে পারবি!’
মাথা চুলকিয়ে বললাম, ‘তাহলে কি পিচ্চি ভাতিজা আর ভাবিই ভুল করে আমাকে ফোন দিয়েছিল?’
মিনমিনে স্বরে উত্তর দিল, ‘হ রে দোস্ত!’
হাসতে হাসতে বললাম, ‘তা ভাবি এ ভুলটা কেমনে করল? এমন তো না যে সে অক্ষরজ্ঞানহীন। আমার জানামতে সূচি ভাবি দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণির রেজাল্টধারী।’
সুমিত আমায় থামিয়ে বলল, ‘ভুলটা তোর ভাবি করেনি রে দোস্ত, ভুলটা তো করেছি আমি। সে জন্যই তো কেলানিটা খাইছি!’ সুমিতের সব কথা মাথার উপর দিয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠলাম না। হালকা বকুনি দিয়ে বললাম, ‘আমতা আমতা করিস না তো, একটু খোলাসা করতো বিষয়টা!’
আমার বকুনিতে সুমিত যেন শক্তি ফিরে পেল। একনাগাড়ে বলে গেল, ‘কোন শালায় তোর নাম আবু রেখেছিল বল তো? সূচির ফোনে তোর নাম ইংরেজিতে লিখতে গিয়ে ভুল করে অননঁ লিখে ফেলেছিলাম। আর আগে থেকেই তো আমার পিচ্চিটা ওর মায়ের সেটে আমার নাম্বারটা অননঁ লিখেই সেভ করে রেখেছিল। কন্ট্যাক্ট লিস্টে দুই অননঁ পাশাপাশিই ছিল, আমাকে কলটা দিতে গিয়ে তাই আজ সূচির কলটা গেছে তোর কাছেই! এতেই যত বর বিভ্রান্তির সৃষ্টি!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper