তেলেসমাতি
শফিক শাহরিয়ার
🕐 ৩:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২১
আবুলের বয়স ত্রিশ অতিক্রম করেছে। অনেক চেষ্টা করেও একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি। বেসরকারি চাকরি করার মোটেও ইচ্ছে নেই। তাই এখন ব্যবসাকেই স্বাধীন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। হতভাগা জীবনে মনের মতো একটা প্রেমও জোটেনি। জুটলে এতদিন তাকেই সে বিয়ে করত। আজ পাত্রী খুঁজে খুঁজে একেবারে হয়রান। ঘটকের হাতে-পায়ে ধরেও একটা পছন্দের পাত্রী চোখে ধরেনি। হালি হালি পাত্রী দেখে শুধু শুধু পকেট খালি করেছে। এজন্য সে অবিবাহিত।
এলাকার নামকরা মফিজ ঘটক। তিনি নিজেও বিয়ে করার আগে থেকেই এখন অবধি ঘটকালি করছেন। কিন্তু তার সেই খ্যাতি আবুলের কাছে সত্য প্রমাণ হলো না। একদিন আবুলকে ফার্স্ট ক্লাস একটি পাত্রী দেখাতে নিয়ে গেলেন। আবুল পাত্রী দেখেই আঁতকে ওঠে। থার্ড ক্লাস পাত্রী। চলতি পথে ঘটক বললেন, আমার তো কোনো দোষ নেই। আমি পাত্রী দেখালে কেউই অপছন্দ করতে পারে না।
এমনকি অপছন্দ করার সুযোগ কেউ পায় না। তবে এবার অতিক্রমকে ব্যতিক্রম করেছে। পাত্রীটি একটুও সাজুগুজু করেনি। আমরা তাকে সাজতেও সময় দিইনি। হয়তো সে এ বিয়েতে মতামত দেয়নি। আরেক ঘটক মজনু। তিনি আবুলকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। আবুল পাত্রীর ঠিকানা জানতে চাইল।
ঘটক বললেন, আমি তো যেনতেন মেয়ে দেখাই না। একটা পাত্রী দেখলে একটাই পছন্দ হবে। প্রয়োজনে আরও পাঁচ-সাতটা পাত্রী দেখাব। কিন্তু এতগুলোর ঠিকানা দেওয়া অসম্ভব। সম্ভব হলেও দিতে পারছি না। একবার এক পাত্রীর ঠিকানা এক ছেলেপক্ষকে দিয়েছিলাম। দেখাদেখির পর্ব শেষে দুই পক্ষ মিটমাট করে ফ্রি ফ্রি বিয়ের আয়োজন করেছে। সেই বিয়েতে কোনো বখশিশ পাইনি। খালি পকেটে বাড়ি ফিরে গিয়েছি। উল্টো স্ত্রীর ঝাড়ি খেতে হয়েছে।
এমনকি সে ঘুমের সময় বালিশ কেড়ে নিয়েছে। সেই রাগে বিছানায় ঘুমাতে পারিনি। ঘুম থেকে জেগে সকালে নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। তারপর একদিন আবুল মজনু ঘটকের সঙ্গে পাত্রী দেখতে গেল। কায়দা করে ঘটক আবুলকে প্যাঁচে ফেলে তার বিয়ের বন্দোবস্ত করলেন। এবারের পাত্রী সেকেন্ড ক্লাস। অবশেষে আবুল ঘটকের তেলেসমাতি বুঝতে পারে। এও বুঝতে পারে, মজনু ঘটক কতটা চাপাবাজ!
প্রাক্তন ছাত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228