বউ বিভ্রাট
শিমুল শাহিন
🕐 ২:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২১
শ্যালিকাকে দ্বিতীয়বারের মতো পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। এ নিয়ে ইন-ল পরিবারে বিশাল তোড়জোড় চলছে। ঘটকের ইঙ্গিত আর পাত্রপক্ষের আগ্রহ দেখে সবাই ধারণা করছে ওরা ছোট পরিসরে বিয়েটা সেরে ফেলতে পারে। তবে বিয়েটা হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগÑ এমন ধারণা পোষণ করছে কেবল আমার বউ নীতি। আর এতেই বেড়েছে বিপত্তি। বিয়ে যত ছোট পরিসরেই হোক, বিয়ের সময় প্রচুর ছবি তোলা হবে এটা নিয়েই তার দুশ্চিন্তা। আর এ দুশ্চিন্তা থেকেই সে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মেকাপ নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে। বউয়ের এমন কর্মকা- দেখে বললাম, ‘নীতি তুমি বরং বাসাতেই হালকা একটু সাজগোজ করো। ওটাই বেস্ট হবে।’ বউ আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাল, মনে হলো দুই চোখে আস্ত দুটো চুলো জ্বলছে। সেই অগ্নিদৃষ্টি কিঞ্চিত প্রশমিত করে সে বলল, ‘আমার একমাত্র বোনের বিয়ে, স্মৃতি রাখতে হবে না? ভালো ছবি না উঠলে সারাজীবন পস্তাতে হবে!’
বললাম, ‘কিন্তু বিয়ে যে হচ্ছে সেটাই তোমাকে কে বলল?’
বউ কাউন্টার অ্যাটাক করে বলল, ‘বিয়েটা যে হবে না সেটাই বা তোমাকে কে বলল? মেকাপটা নিয়েই রাখি, নইলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে দশা হবে।’
জানি নীতির সঙ্গে যুক্তিতে পেরে উঠব না। উল্টো কথা বাড়ালে তাকে আরও উত্তপ্ত করে দেওয়া হবে, সেটা আমার জন্য মোটেও মঙ্গলকর নয়। নিতান্ত বাধ্য হয়ে অনুগত স্বামীর মতো তার পিছুপিছু পার্লারে যেতে হলো। ওর সঙ্গে পার্লারে আজ প্রথম এসেছি তা না, বেশ কয়েকবারই ওর সঙ্গে এ জায়গায় আমাকে আসতে হয়েছে। ও মেকাপ নিতে ভিতরে ঢুকলে বাধ্য ও অনুগত স্বামীর মতো আমাকে চুপচাপ বাইরে বসে থাকতে হয়। আজকেও ঠিক সেভাবেই তার জন্য অপেক্ষা করছি। ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেল তবুও ওর আসার নাম কথা নেই। এদিকে নতুন উপদ্রব হিসেবে উপস্থিতি জানান দিয়েছে পেটের পীড়া। বদহজমের জন্যই হয়তো পেটের ভিতর খুব করে মোচড় দিচ্ছে। আশপাশে জানামতে পাবলিক টয়লেট নেই বলে পেট চেপে কোনোরকমে বসে আছি। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছিÑ এই তো নীতি বের হলো বলে!
বেশিক্ষণ অবশ্য অপেক্ষা করতে হলো না, বউ সাজগোজ শেষ করে বের হলো। পার্লারের দরজা ঠেলে বের হতেই একমুহূর্ত না থেমে ওর হাত ধরে টানতে লাগলাম। আগেই একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। ওর হাত ধরে রীতিমতো টেনে ওকে রিকশাটায় তুলে নিলাম। নীতি রিকশাতে উঠতে চাচ্ছিল না, বারবার হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করছিল আর কী সব বলছিল। কিন্তু পেটের ভিতর এতটা মোচড় দিচ্ছিল যে অনেকটা বোধশূন্য হয়ে গেছিলাম। ভাবলাম বাসায় কোনোমতে পৌঁছাতে পারলে বাঁচি, পরে না হয় নীতির সব রাগ ভাঙানো যাবে! পেটের মোচড় হঠাৎ কিঞ্চিত কমল, কিছুটা বোধশক্তি ফিরে পেয়েছি। বউ বারবার রিকশাওয়ালাকে বলেই চলেছে, ‘এই থামো থামো, নয়ত রিকশা থেকে লাফ দেব!’ বউয়ের এমন কথা শুনে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। অবাক হলাম, হঠাৎ নীতিকে আজ এত শুকনা শুকনা লাগছে। আমি জড়িয়ে ধরতেই বউ বলল, ‘অসভ্য, আমায় জড়িয়ে ধরছেন কেন?’ বউয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে বললাম, ‘বউ রাগ করো না, আগে বাসায় চলো তখন সব বলব!’
বউয়ের রাগ কমল না। উপরন্তু একগাদা গালি দিয়ে বলল, ‘অসভ্য, ইতর, বদমাশ ছাড়–ন আমাকে।’
নীতির গালিকে পাত্তা দিলাম না। তবে ওর কণ্ঠস্বরটা একটু আলাদা ঠেকল, অন্যদিনের তুলনায় একটু মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। আমার অবাক হওয়া বাড়ছেই। কী জানি বাপু, হয়তো কণ্ঠেরও মেকাপ বের করে ফেলেছে বিউটিশিয়ানরা।
নীতি বারবার রিকশা থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছে দেখে রাগ হলো। কোনোক্রমে পড়ে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে ভেবে বেশ একটা ধমক দিয়েই বললাম, ‘এমন করছ কেন নীতি? পড়ে যাবা তো?’
বউ উল্টো চিৎকার করে বলল, ‘কে নীতি? আমি নীতি না। আপনাকে আমি পুলিশে দেব! চিৎকার করে লোক জড়ো করব।’
নীতির মুখে এমন কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকালাম। নীতিকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। রাস্তায় বেশ বড় একটা গর্ত দেখে রিকশাওয়ালা কিছুটা গতি কমাল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিকশা থেকে লাফ দিল নীতি। একটুর জন্য ও রাস্তায় পড়ে যায়নি, হায় হায় করে উঠলাম আমি। রিকশা থেকে নেমে ওকে ধরতে যাব তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘খবরদার আমায় ধরেছেন তো চিৎকার করে লোক জড়ো করব।’ নীতির মুখে এমন কথা শুনে চুপ মেরে গেলাম। নীতিকে হঠাৎ অচেনা ঠেকল, ওকে বেশ লম্বা দেখাচ্ছে। কিন্তু নীতি তো অতটা লম্বা নয়, টেনেটুনে পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি হয়। নীতির রাগ, চিৎকার, লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়া, কণ্ঠস্বর, আর হঠাৎ উচ্চতা বেড়ে যাওয়া বিষয়গুলো আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্নের জন্ম দিল।
চোখ কচলে নীতির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি এমন করছ কেন, নীতি?’ চিৎকার করে ও বলল, ‘কতবার বলছি আমি নীতি না! আমি পলি।’ মাথায় এতক্ষণে হয়তো পুরোপুরি বোধশক্তি ফিরে এলো। বুঝলাম বিশাল একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছি। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম লোকজন তেমন নেই। নইলে যে ঘটনা ঘটিয়েছি তাতে পাবলিকের পিটুনি একটাও মাটিতে পড়ত না। মহিলাকে করজোড়ে সরি বললাম। বললাম, ‘দেখুন, আমি ভদ্রলোক। যেটা করেছি ভুলবশত করেছি।’
ভদ্রমহিলার রাগ কিছুটা কমল বলে মনে হলো। জিজ্ঞেস করল, ‘তবে এমন কাজ কেন করলেন? আপনার মতলবটা কী?’
‘বিশ্বাস করুন, আমার বউও পার্লারে ঢুকেছিল। মেকাপ নিলে বউকে আর চিনতে পারি না। মেকাপ নেওয়া সব মেয়ের চেহারা একই রকম লাগে। তাই তো শাড়ির কালার এক দেখে আমার বউ ভেবেই এমন কা-টা ঘটিয়ে ফেলেছি!’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228