ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অতঃপর...

আবুল কালাম আজাদ
🕐 ২:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ০৪, ২০২১

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অতঃপর...

লাভলু ভাই একজন একনিষ্ঠ ফেসবুকার। নিয়ম করে দিনরাত মিলিয়ে আটঘণ্টা ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকে। দিনে চার ঘণ্টা, রাতে চার ঘণ্টা। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। লাইক-কমেন্টের ক্ষেত্রে খুবই উদার। ‘সহমত-একমত’ এই কিসিমের কমেন্ট লাভলু ভাই করে না। ‘ঘরপ, খড়ষ, এফ’ এরকম কমেন্টও করে না। তার প্রতিটা কমেন্টে কবি-লেখক-দার্শনিক ইত্যাদির গন্ধ থাকে। তার স্ট্যাটাসগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ। উদাহরণ হিসেবে তার একটা স্ট্যাটাস দেখা যাক- কতিপয় স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদের কুচক্রান্তের ফাঁদে পড়ে এই উপমহাদেশে ধর্মীয় বিভেদ ও উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে, যা গোটা উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে এবং যার কুপ্রভাব আমরা ফেসবুকেও লক্ষ করতে পারছি, ফলে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় প্রায়ই বন্ধুতে বন্ধুতে রেষারেষি লক্ষ করা যাচ্ছে- যার প্রভাবে লাইক-কমেন্টের হেরফের হচ্ছে এবং আনফ্রেন্ড-ব্লকের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে।

নারীদের ছবি বা স্ট্যাটাসে লাভলু ভাইয়ের কমেন্টে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু থেকে শুরু করে এ যুগের ফেসবুক কবি কুদ্দুস, মোকসেদ, মোজাফ্ফরের কোটেশনও বাদ যায় না। কিন্তু এক অজানা কারণে লাভলু ভাইয়ের পোস্টে নারীদের কোনো উপস্থিতি থাকে না। কোনো নারী লাভলু ভাইকে কখনো রিকোয়েস্টও পাঠায় না। লাভলু ভাইয়ের রিকোয়েস্ট তারা নির্দয়ভাবে ঝুলিয়ে রাখে। কত হাবলু-কাবলু ইউএসএ, ইউকে, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ড এসব দেশের মেয়েদের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম করে তাদের বাংলাদেশে টেনে নিয়ে এলো অথচ আমাদের রোমান্টিক লাভলু ভাই...!

এটাই লাভলু ভাইয়ের একমাত্র দুঃখ। তবুও আশায় বুক বেঁধে নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিদিন আটঘণ্টা ফেসবুকে সময় দিয়ে যাচ্ছে। যদি কিছু হয়!

সেদিন ফেসবুকে লগইন করেই লাভলু ভাই ভীষণভাবে কেঁপে উঠল। তার হৃৎপিণ্ডের মধ্যে ধকধক করতে লাগল। এক অপরূপা সুন্দরী লাভলু ভাইকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। মেয়েটার নাম ইসরাত জাহান ঊর্মি। ছবি দেখে বোঝা যায় বয়স বিশ কি বাইশ। চার্মিং এজ। লাভলু ভাই মনে মনে বলল, ঊর্মি! ঊর্মি মানে ঢেউ। আমার হৃদয়ে কি যে ঢেউয়ের দোলা জাগিয়ে তুমি এলে! তারপর লাভলু ভাই গেয়ে উঠল : তুমি এলে তাই স্বপ্ন এলো/ ইন্দ্র ধনুর লগ্ন এলো...।

লাভলু ভাই ইসরাত জাহান ঊর্মির প্রোফাইল দেখতে গেল। গিয়ে দেখে প্রোফাইল লক করা। এক রকমের হতাশায় ছায়া পড়ল লাভলু ভাইয়ের মুখে। লাভলু ভাই গেয়ে উঠল : প্রোফাইলে দিয়ে তালা, আছ কোথায় মোর প্রিয়া/ তুমিহীনা বড়ো একা একা, দিন যে আমার কাটে না।

তালা খুলে প্রোফাইল দেখতে হলে অবশ্যই রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে হবে। লাভলু ভাই ঊর্মির রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করল। ঊর্মির প্রোফাইল ছবিটা জুম বাড়িয়ে বড় করল। টানা টানা কাজলকালো চোখের দিকে তাকিয়ে লাভলু ভাইয়ের মনে হলো ইসরাত জাহান ঊর্মি যেন চোখের ভাষায় তাকে কিছু বলছে। লাভলু ভাই গেয়ে উঠল : অমর করে চেও না গো তুমি/ মনে আগুন জ্বালিও না তুমি।

উর্মির ঘন-কালো চুল সামনে মেলে দেওয়া। ঢেউ ভেঙে ভেঙে নেমে গেছে নিচে। কতদূর নেমেছে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো কোমর ছাড়িয়ে হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে। লাভলু ভাই গেয়ে উঠল : তোমার কাজল কেশ ছড়াল বলে, এই রাত এমন মধুর।

এক-দুই করে লাভলু ভাই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। একেকটা রহস্যের ভাঁজ খুলতে হবে। ভাঁজে ভাঁজে হৃদয়ে কাঁপন। গভীর মনোযোগে প্রোফাইলের খুঁটিনাটি পড়তে গিয়ে লাভলু ভাই কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ঊর্মি তার লেখাপড়ার যে স্কুলের নাম লিখেছে সে স্কুল লাভলু ভাইয়ের চেনা। লাভলু ভাই চোখ কপালে তুলে বলে উঠল : এই স্কুলে তো কোনো মেয়ে নাই। এটা ছেলেদের স্কুল। এই স্কুলে এই মেয়ে পড়ল কেমনে?

তারপর দেখল কলেজের নাম। লাভলু ভাইয়ের চোখ কপাল থেকে মাথায় উঠে যাওয়ার অবস্থা। চিৎকার করে বলল, এই কলেজেও তো কোনো মেয়ে পড়ে না। এটা ছেলেদের কলেজ। এই কলেজে এই মেয়ে পড়ল কেমনে?

লাভলু ভাই তবুও পুরোপুরি আশা ছাড়ল না। ছবি দেখতে গেল। প্রোফাইল ছবিটা ছাড়া রুচিশীল কোনো ছবিই নাই। একটা ছবিতে তিনটা ছেলে গলাগলি ধরে দাঁড়িয়ে আছে পুকুরপাড়ে। ক্যাপশনে লেখা- ভন্দুরা, মাঝখানে আমি, আর দুই পাশে আমার দুই কোলোজ ফেরেন্ড। আমাকে ক্যামন লাগছে ভন্দুরা?

লাভলু ভাই মুখে বলল, ওরে বাটপার! ওরে বাটপার! তোরে রামছাগলের মতো লাগতেছে। আর কমেন্ট লিখল, তুমি কি ইসরাত জাহান ঊর্মি?
তখনই কমেন্টের উত্তর এলো- না ভাইয়া, এইটা ফেক আইডি। আমার নাম ইসান জাহান উৎপল।

: শুধু নাম ফেক দিলেই ফেক আইডি হয়? স্কুল, কলেজে আর ছবিও ফেক দিতে হবে।
: ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া। ঠিক করে দিচ্ছি। আচ্ছা ভাই, স্কুল-কলেজ ভিকারুননিসা দিব, নাকি হলিক্রস?
লাভলু ভাই এ প্রশ্নের উত্তরে মনে মনে বলল, যা খুশি দে, পুরোপুরি ফেক বানা।

তারপর ইসান জাহান উৎপলকে ব্লক দিল। ব্লক দিয়ে চেয়ারে আধশোয়া হয়ে গাইতে লাগল : কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে/ নিয়তি আমার ভাগ্য লয়ে, নিশিদিন খেলা করে...।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper