মনভোলা বউ
মনিরা পারভীন
🕐 ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১
রিয়াজুল সাহেবের বউ খুব সুন্দরী। বউয়ের প্রেমে রিয়াজুল সাহেব অন্ধ। এত ভালোবাসা পেয়ে বউ হয়েছে পাগল। আর বউয়ের কা- দেখে রিয়াজুল সাহেব হয়েছেন কবি। কেউ এলে একটাই কবিতা বারবার শোনান-
ভোলা মনা বউকে আমি
বড্ড ভালোবাসি
বউয়ের ভোলা স্বভাব দেখে
মুচকি মুচকি হাসি।
টুকটুকে বউ এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ায়। তিনিও বউয়ের পিছে পিছে ঘোরেন। একদিন দেখেন বউ তার ছুটোছুটি করছে। কোথায় যেন যাবে। ওমা! রেডি হয়ে বলল, তুমি থাকো। আমি যাব আর আসব। তিনি অতি উত্তম স্বামী। কোনো প্রশ্ন নেই। মুচকি হেসে বললেন, যাও যাও। নারী স্বাধীনতা আমি দিয়েছি।
যখন দরজা দিতে গেলেন তখন চিৎকার করে উঠলেন। সোনা বউ, থামো, থামো।
মনি ঘুরে বলল, কী হলো আবার?
তিনি মাথায় হাত রেখে বললেন, ওরে বউ দুই পায়ে দুই রকম জুতো পরেছ।
মনি দেখে জিহ্বায় কামড় বসাল। হুড়মুড় করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে চেঞ্জ করে বেরিয়ে পড়ল।
মনির জীবনে এ নতুন কিছু নয়, একদিন জুতো তো একদিন উল্টো পায়জামা পরে বের হয়ে যায়। কখনো ব্যাগ নেয় তো টাকা নেয় না। টাকা নেয় তো মোবাইল ফোন নিতে ভুলে যায়। মোবাইল নেয় তো জরুরি কাগজ নেয় না। যখন যে জামা পরা থাকে, ড্রেস বদলানোর সময় আবার সেটাই পরে নেয়। এখানেই ক্ষান্ত হলে হতো। তা হওয়ার নয়।
সেদিন রিয়াজুল সাহেব নেই। অফিসে গেছেন। মনি শপিংয়ে যাবে। বান্ধবী সুমি ফোন দিয়ে বলল, এখনি আয়। শুনে তার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। মুখে ফেসওয়াশ মাখছে। ফেনা হচ্ছে না। মনে মনে ভাবছে, কী রে, কম নিলাম নাকি! নাকি পানি নিইনি! আজ এমন লাগছে কেন! পেস্ট পেস্ট ফ্লেভার আসছে। পরে তাকিয়ে দেখে সে সত্যি সত্যি পেস্ট দিয়ে মুখ ধুচ্ছে। এ যাত্রায় আবার ঠিক করে নিল। মনি নিজেও জানে আত্মভোলা মানুষ সে। কতদিন যে চুলোয় রান্না দিয়ে ভুলে গেছে! আর পোড়া গন্ধে ছুটে গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।
এই আত্মভোলা বউকে রিয়াজুল সাহেব তবু ভালোবাসেন। বউকে একদিন বললেন, চা খাব। তোমার হাতের চা খুব মজা। বউ খুশি হয়ে চা করে দিল। তিনি খেয়ে দেখেন লবণ দিয়ে দিয়েছে। বউ তার লক্ষ্মী। এটা জেনে আবার চিনি দিয়ে চা করে আনে। এজন্য রিয়াজুল সাহেব এত ভালোবাসেন। বউ তো ইচ্ছে করে ভুল করে না। ভোলামনা সে।
মনি ভাবে আর ভুল করবে না। খুব সচেতন হবে। কিন্তু কী করার। সে বড় অসহায় মনের কাছে। প্রায়শই অজু করে নামাজ পড়তে না গিয়ে ওয়াশরুমে বসে। কখনো ওজু করেও ভাবে করলাম কিনা, কখনো ওজু করে নামাজে যেতেও ভুলে যায়। কখনো ওয়াশরুমে বসে চিন্তায় মগ্ন হয়। কেন বসে আছে মনে থাকে না। এই ভোলামনা মেয়েটা বড় চঞ্চল, বড় অস্থির চিত্তের। মন তার শিশুর মতো কোমল। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। রিয়াজুলকে রাতে দিনে আদরে ভরিয়ে রাখে। তবে তার ইচ্ছে পূরণে বাধা দিলেই কেবল রেগে যায়। রিয়াজুল সাহেব কৌশল জানেন ভালো। সহজেই বশ করে নেন।
মনির ভোলা মনের কথা আরও আছে।
সে কাজের প্রয়োজনে ঘরে ঢুকে ভুলে যায় কী জন্য এলো। কখনো চিরুণি খুঁজতে রান্নাঘরে যায়। আবার কখনো ফ্রিজ খুলে ভাবে কী নিতে এলাম। আবার কখনো ঘরে কেন এলো তা-ও ভুলে যায়। সে নিজে খেয়েছে কিনা এ কথাও মনে করতে পারে না। কেউ জানতে চাইলে বলে, মনে করতে হবে। শুধু এই নয়। কখনো ভুলে যায় কী কী খেল। আবার কারও সামনে গিয়ে তাকে কী বলতে এসেছে তা-ও মনে করতে পারে না।
রিয়াজুল, মনির এসব কাণ্ডে বিরক্ত খুব কমই হন। উপভোগ করেন বেশি। মনে মনে বলেন, পাগলি বউ আমার।
মনি তবে নিজের এই ভোলামনা স্বভাব একদমই পছন্দ করে না। সে এত ভাবে ঠিক করে চলবে কিন্তু পারে না। দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে টাকা দিয়ে খুচরা নেওয়ার কথা মনে থাকে না। দোকানদার ডেকে বলেন- আপা, আপনার টাকা নেন। আর যদি দোকানদার ভুল করেন তো করার কিছু নেই। কখনো কখনো খরচ করে ব্যাগ নিতে ভুলে যায়। কোন দোকানে ফেলে আসে মনে করতেই জীবন শেষ। তবে কপাল তার ভালো বৈকি। কখনো কিছু হারায়নি। এমনকি মোবাইল দুই দুইবার ফেলে এসেছিল দোকানে। তা-ও আবার পেয়ে গেছে।
তিন বছর হয়নি তাদের বিয়ে। রিয়াজুল ভাবেন হয়তো এই ভোলামনা বউ ঠিক হবে না কোনোদিন। তবে তার পবিত্র মন, সততা, নির্ভেজাল ভালোবাসার জন্য রিয়াজুল খুব ভালোবাসে। মজা করে বলেন, ও আমার মনি, সব ভুলে যাও সমস্যা নেই আমাকে ভালোবাসতে ভুলো না যেন। মনিও রসিকতা করে বলে, ভুলে গেলে তুমি আছ না? মনে করিয়ে দেবে। এ কথায় দুজনেই হেসে ওঠে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228