ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রতিবাদী প্রেমিক

জোবায়ের রাজু
🕐 ১২:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১

প্রতিবাদী প্রেমিক

পাশের বাড়িতে রিপা নামে এত সুন্দর একটা মেয়ে বাস করে, একথা আগে জানত না রানা। রিপার মায়া মায়া মুখ, ডাগর ডাগর চোখ, মিষ্টি মিষ্টি হাসি, দুষ্টু দুষ্টু চাহনি, সবকিছু পাগল করে রানাকে। তাই রানা রিপাকে জীবনে পেতে বড় ব্যাকুল হয়। এই মেয়েকে না পেলে তার জীবনই যেন বৃথা, এমন কথাও ভাবতে শুরু করল।

যেহেতু দুজনের বাড়ি পাশাপাশি, তাই রানা সারাক্ষণ ছাদে এসে বসে থাকে। পাশের বাড়ি থেকে রিপাকে এক পলক দেখবে বলে। কিন্তু কপাল মন্দ, রিপা ছাদেই আসে না। কতবার যে ভেবেছে রিপাকে বাড়িতে গিয়ে একবার দেখে আসবে। কিন্তু ভয় হয়! রিপার সৎ ভাইয়েরা যদি তাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলে! যদি পুলিশে দেয়! যদি ১০০ বার কান ধরে উঠ-বস করায়! এসব সাত-পাঁচ ভেবে আর কিচ্ছু করা হয় না। কিন্তু রানাকে এভাবে বসে থাকলে চলবে না। রিপার জন্য তার বুকের অতলে যে পদ্মা মেঘনা যমুনা নদীর মতো প্রেমের জোয়ার, সে জোয়ারে রিপাকে আপাদমস্তক ডোবাতে হবে। কিন্তু যার জন্য রানার এত আকুলতা, সে রিপাই তো কিছু জানে না। রিপাকে জানাতে হবে মনের সকল আকুতি। কিন্তু কীভাবে!

হ্যাঁ, উপায় আছে। মুন্না। রিপাকে একখানা প্রেমপত্র লিখে বন্ধু মুন্নার হাতে তুলে দেয় রানা। সাহসী মুন্না রাতের আঁধারে রিপার জানালা দিয়ে রেখে আসে সেই অনেক সাধনার প্রেমপত্র।
এভাবে চলতে থাকল কয়েকদিন। কিন্তু রিপার পক্ষ থেকে সাড়া আসে না। রিপা নিরুত্তর।

দুই.
অবশেষে একদিন সেই অপেক্ষার সূর্য আলো ছড়ায়। মুন্না রাতের আঁধারে রিপাকে রানার চিঠি পৌঁছে দেয়। একদিন রিপা কাঁপা কাঁপা হাতে জবাবপত্র পাঠায় রানাকে। সেই পত্রে উল্লেখ করা রিপার প্রেম সম্মতির ব্যাখ্যা পড়ে জীবন ধন্য হয়ে যায় রানার।
সেই থেকে মুন্নার মাধ্যমে চিঠি আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে দুজনের প্রেমের রেলগাড়ি চলতে থাকে চুপিচুপি। রিপা কোনো কোনো চিঠিতে লেখে- এই সম্পর্কের কথা তার সৎ ভাইয়েরা জানতে পারলে রিপাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেবে। কারণ সৎ ভাইয়েরা তার ভালো চায় না। গতকাল রানা রিপার যে চিঠি পেল, তাতে উল্লেখ ছিল, ‘তুমি দুপুরে একবার ছাদে এসো। আমিও আসব। দুজন দুজনকে দুই ছাদে দাঁড়িয়ে দেখব।’ খুশিতে আনন্দের সুর বাজে রানার প্রেমবীণায়।

তিন.
এই শীতের পড়ন্ত দুপুরে ছাদে আসে রানা। তৃষিত চোখে তাকায় পাশের ছাদে। নাহ, রিপা নেই। আসবে হয়ত কিছু সময় পর! রানার অপেক্ষা সয় না। কখন আসবে রিপা!
হঠাৎ রিপাদের বাড়ি থেকে শোরগোল ভেসে আসে। রিপা উঁচু গলায় কাঁদছে। বিলাপি কান্না। ওর সৎ ভাইদেরও উঁচু গলা শোনা যাচ্ছে। ধমক দিয়ে সৎ ভাইয়েরা যা বলছে, তা স্পষ্ট নয়। ঘটনা বুঝতে বাকি নেই রানার। রিপা হয়ত তার সঙ্গে দেখা করতে ছাদে আসার সময় সৎ ভাইদের নজরে ধরা পড়েছে। তার সৎ ভাইয়েরা পুরো ব্যাপারটি তদন্ত করে মূল ঘটনা জেনে এখন রিপাকে উত্তমমধ্যম দিচ্ছে।
রিপার কান্না ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবাদী মন গর্জে উঠছে রানার। আজ সে রুখে দাঁড়াবে। ওই বাড়িতে গিয়ে সৎ সাহসে জানাবে তার মনের বাসনা। প্রেমে পড়লে যে বুকে সাহস জন্মে, আজ টের পেল রানা। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসে সে। উঠোনের কোণে একখানা কাঁচা আস্ত বাঁশ পেয়ে সেটাকে প্রতিবাদের অস্ত্র বানিয়ে হাতে তুলে নেয়। প্রেমে বাধা দিলেই এই বাঁশ দিয়ে রিপার সৎ ভাইদের হাড্ডি পাউডার বানিয়ে ফেলবে। দুই মিনিটেই রিপাদের উঠোনে চলে আসে রানা। সে দেখতে পায় সৎ ভাইয়েরা রিপাকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরঘাটে নিয়ে যাচ্ছে আর রিপা চেঁচাচ্ছে। ঘটনা কী! রিপাকে পুকুরঘাটে নিয়ে যাচ্ছে কেন!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রানা পুরো ঘটনাটা জানে। রিপার ছাদে আসার ব্যাপারে রানা যা যা এতক্ষণ ভাবল, সেটা ভুল। এই শীতে রিপা গত একমাসে একবারও গোসল করেনি। তাই আজ ওর সৎ ভাইয়েরা ওকে জোর করে পুকুরে নিয়ে যাচ্ছে গোসল করাতে। রিপার গায়ের গন্ধে নাকি ঘরে থাকা যাচ্ছে না। ইঁদুরগুলোও একে একে গন্ধে বাড়ি ছেড়ে পালাল।
রানা হাতের কাঁচা বাঁশটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাড়িমুখো হলো। প্রতিবাদী প্রেমিক হয়ে প্রতিবাদ করতে এসে যা দেখল, তার আক্কেল হয়ে গেছে। রিপা শীতের ভয়ে গোসল করে না। ছি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper