ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আহা ভাষা রে!

অমল সাহা
🕐 ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১

আহা ভাষা রে!

করোনার লকডাউনের সময় চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার মাইকিং, ‘ঘরত যনগুই, করোনা অন আরার ফোঁদে ফোঁদে ঘুরের...’ অর্থাৎ, ঘরে চলে যান, করোনা এখন আমাদের ‘পশ্চাদ্দেশে’ ঘুরছে! একই ভাষা কেন এত ঘুরে ফিরে মানুষের মুখে উচ্চারিত হয় সেসব নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। হওয়া দরকার। ঢাকার কলা কীভাবে নোয়াখালীতে গিয়ে ‘কেলা’ হয়ে যায়, আবার এই কলা সিলেটে গিয়ে ‘কোলা’ হয়।

দুপুরবেলা পশ্চিম বাংলা থেকে যাত্রা করে খড়গপুর সীমান্ত থেকে কেলা হয়ে উড়িষ্যা পর্যন্ত যায় এবং রাত্রি পার করে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশে পড়ে কেলান্দ্রা হয়ে যায়। পশ্চিমবাংলা থেকে চেন্নাই যাওয়ার সময় সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ফেরিওয়ালারা চিল্লাচ্ছে, ‘অ্যাই কেলান্দ্রা, অ্যাই কেলান্দ্রা... শুনে আমার আন্ধা হওয়ার জোগাড়! আবার দেখি এই নোয়াখালীর কেলা পুরান ঢাকায় আইসা হয়ে যাচ্ছে, ‘কেন’-এর আরেক রূপ, ‘কী রে ঝিম মাইরা রইছস কেলা?’

‘বাম’ মানে দিকের নির্দেশক; সেই বামই ময়মনসিংহে গিয়ে বিভিন্ন ক্রিয়াপদের সঙ্গে যোগ হয় কোন কারণে তা কেউ জানে না। খাইবাম, যাইবাম ইত্যাদি।
‘অ্যাই তোর মুখ খারাপ!’ পুরা ভুল কথা। মুখ কখনো খারাপ হয় না। মুখের জিহ্বা দিয়ে উচ্চারিত ভাষার অর্থ খারাপ হতে পারে। আবার বলি ‘মাথা খারাপ’। মাথা কখনো খারাপ হয় না; আসলে মস্তিষ্ক খারাপ হয়। এ রকম ভুলভাল শব্দ আমরা হরহামেশাই আমাদের কথার মধ্যে সান্দাইয়া দেই। আমাদের অফিসের কাছে রাস্তার ধারে বহুদিন দেখেছি একটা সাইনবোর্ড স্টিলের খুঁটির ওপর লাগানো, ‘মৎস্য প্রশিক্ষণ একাডেমি’। বিষয়টা সহজ-সরল। অর্থাৎ যে সকল কর্মকর্তা মৎস্য বিভাগে চাকরি করেন, তাদের এখানে মৎস্য চাষ বা তদসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের এক ত্যাঁদড় গুন্ডা কিসিমের বন্ধু যে নাকি আবার পাশের গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার; সে চায়ের আড্ডায় বসে ভালো মানুষের মতো মুখ করে বলে, আইচ্ছা দাদা, আপনে আমারে কন, মৎস্য প্রশিক্ষণ মানে কী? এখানে কি মাছদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়? কী বলব?

সবশেষে এক ভাষাবিদ পত্রিকা কম্পোজারের গল্প দিয়ে শেষ করব। স্বাধীনতার আগের ঘটনা। এক পত্রিকায় একটা খবর যাবে, ‘পাঁচজন বয় স্কাউট পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যাবে।’ কম্পোজারের বয় স্কাউট সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। সে ভাবল এটা ভুল করে লেখা হয়েছে। ‘পন্ডিত’ কম্পোজার সে লেখাটা ঠিক করে দিল, ‘পাঁচ জন বয়স্কা উট পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যাবে!’

ভারত বিভাগের সময় খবরটা ছিল, রানি পাঁচঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর প্রস্তাবে মৌন সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু না, খবরটা এভাবে যায়নি। প্রুফ রিডারের ভুলে এক খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল, ‘যৌন’ সম্মতি দিয়েছেন! ‘ম’ এর বদলে ‘য’। এ আর এমন কী!
আমার এক কলিগ ‘সময়’ বোঝাতে সবসময় বলে ‘হেসুমগা’। আমি বলি, ক’ন আইজ্ঞা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper