সকালের ফোড়ন
গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
দীঘলপুর গ্রামের সুবোধ মিয়া, বিয়ে করেছে নাম তার দিয়া। পাকা বাড়ি আর কাঁচা মন। এই দুয়েই সংসার জীবন। বৃষ্টির দিন এলেই। ঘরের বিছানাতেই। যা হবে হোক দুনিয়াই। ওসব দেখার সময় নাই। সেদিন মঙ্গলবার। সুবোধ সকালে পেল না আহার। রাত থেকেই বৃষ্টি। আজ হবে অনাসৃষ্টি। সকালের ফিনফিনে হাওয়া, বুঝতে পেরেছে দিয়া। চোখ উঠে না, ঘুমও ভাঙে না। সুবোধ মিয়া, দারুণ তার হিয়া। বলল, ‘ওগো, ওঠো সকাল যে হলো।’ আর কথা এগোয়নি। দিয়া ধমক দিতে ছাড়েনি। বলল, ‘চুপ থাকো। কেন এত হাঁকো। উঠতে দেরি হবে। ঘুম ভাঙলে উঠব তবে।’
স্ত্রীর কথা শুনে, সুবোধের মন চলে যায় খাটামাটা বনে। জোরে কিছু বললেই, দিয়া হাটে হাড়ি ভাঙবেই। তাই মিহি সুরে, ভালোবাসার অক্ষরে। বলল কিছু গোপন কথা, অন্য কেউ ছিল না সেথা। ‘আমি তা’লে অফিসে যাচ্ছি, বাইরেই খেয়ে নিচ্ছি। তোমার উঠবার দরকার নেই, চারদিকের আবহাওয়া যেই সেই।’ সুবোধের কথা শুনে, দিয়া উঠল ঝড়ের আগুনে। বলল, ‘ও বাইরে গিয়ে খাবে, আর বাইরের মানুষ ভাববে বউ একেবারে বাজে হবে। সকালের খাবারটা পর্যন্ত রান্না করে না, তাহলে ও বউ থেকে লাভ নাই এক আনা।’ বৌয়ের কথায়, সুবোধ হাত নাচায়। বলে, ‘না, তাহলে খাব না বাইরের কোনো হোটেলে, মন রাখব বলে।’
এ কথায় দিয়া আবার চিল্লায়। ‘এ কী বল! পেটে অসুখ হলে, আমাকেই দোষ দেবে তোমার মা-বাবা ছলে।’ সুবোধ যাবে কোনদিকে, ভেবে পায় এঁকে। এবার সুবোধ, মনে মনে পেল এক প্রবোধ। বলল, তাহলে তুমিই বল কী করব? সব কথাতেই দোষ ধর।’ দিয়া বিছানা ছাড়ল, আবার সুবোধকে ধমক দিল। বলল, ‘অত ঢঙ দেখাতে হবে না। অফিসে না গেলে তো আর চলবে না। থামো, রান্না করছি, খাওন খাওয়াচ্ছি।’ বউয়ের ফোড়নে সুবোধ নিজেকে ভাবে আপদ। দাঁড়িয়ে থাকে তালগাছের মতো, অফিসের বসও খেপছে তো। দিয়া বোলচালেই জাগ্রত, কথা বলার দশ মিনিটেও বিছানা ছাড়েনি তো। সুবোধ এখন হাঁটু ভাঙা ‘দ’-দিয়া বাঁকা ‘খ’। রান্না উঠেছে। সূর্য জেগেছে। শুধু সুবোধ নেই। একপা দুপা করে গিয়েছে অফিসেই। বস ছাড়েনি একপল। বুকে ঘরের জ্বালার খলবল। শান্তির মা-বাবা গেছে মরে, অশান্তির আগুন তাই ঘরে ঘরে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228