ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফেসবুক লেখক

কুমার অরবিন্দ
🕐 ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১

ফেসবুক লেখক

কবি হিসেবে কবি নিয়ামত ওরফে নিয়ামত আলী তরফদারের খুব নামডাক হয়েছে। এলাকার লোকজনও তাকে এখন বেশ সমীহ করে। তার দশাসই কারণও আছে। দুনিয়াতে এমন কোনো বিষয় নেই যে বিষয় নিয়ে নিয়ামত আলী তরফদার কবিতা লেখেননি। অবশ্য ফেসবুকে এখন তার কর্মপরিধি বেড়েছে। শুধু কবিতা লিখে নিজের অসীম জ্ঞানকে আমফেসবুকিয়ানদের মাঝে চালান করা অসম্ভব। তাই তিনি কবিতার পাশাপাশি দু’হাতভরে প্রবন্ধ লিখছেন।

কবিতার প্রজনন এখন কিছুটা কম হলেও তিনি কবি হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ নামের আগে সযত্নে কবি শব্দটি বসিয়েছেন।

মৃত্তিকাবিজ্ঞান থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষবিজ্ঞান থেকে শরীরবিজ্ঞান কিছুই তার অজানা নয়। মেন্ডেলের জিনতত্ত্ব, আইনস্টানের আপেক্ষিক তত্ত্ব, মর্গানের সমাজতত্ত্ব অথবা ফ্রয়েডের স্বপ্নতত্ত্ব নিয়ে যেকোনো সময়ে তিনি একটা জ্ঞানগর্ভ লেখা লিখে ফেলতে পারেন। হোক তা কবিতা অথবা প্রবন্ধ। কবি নিয়ামতকে যারা চেনেন তারা অবাক হন। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও যে ছেলে ইন্টার পাস করতে পারে নাই সে এমন ভারি ভারি কথা লেখে কীভাবে?

ফেসবুকে তার ভক্তের সংখ্যাও কম নয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে। লেখা প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিন-চারজন শেয়ার দিয়ে দেয়। সুন্দর সুন্দর কমেন্টস করে।

কবি নিয়ামতের এই মেয়েভাগ্য দেখে আমাদের কেমন হিংসে হয়। হিংসে হবে না? আমরা কেউ কিছু লিখলে কোনো মেয়ে চেয়েও দেখে না। অথচ নিয়ামত আলীর কবিতা শেয়ার দেয়! দুর্মুখেরা অবশ্য বলেন, কবি নিয়ামত কবিতার নামে যা লেখে তা কিচ্ছু হয় না। তার কবিতায় না আছে ভাবের সঙ্গে ভাষার সঙ্গতি, না আছে ছন্দের। গদ্য কবিতার নাম করে নিয়ামতের মতো কবি নামধারীরা যা ইচ্ছে তাই লিখে যাচ্ছে...। আবার ছড়ার ক্ষেত্রে মাত্রা বা ছন্দের ণত্ব-ষত্ব জ্ঞান নেই।

আমার অবশ্য তা মনে হয় না। নিয়ামত ভাইয়ের লেখা যদি কিছু নাই হবে তাহলে তার পেছনে এত সুন্দরীর ভিড় কেন? এখন তো লাইক, কমেন্টস দিয়ে শিল্পের বিচার হচ্ছে।
আজ সকালেই একবার কবির সঙ্গে দেখা। তিনি একগাল হেসে বললেন, কী রে আজ আমার লেখাটা পড়েছিস?

আমতা আমতা করে বললাম, পড়েছি, তয় মাথার ওপর দিয়ে গেছে। শনি গ্রহের বলয় থাকলেও পৃথিবীর নেই কেন? পৃথিবীর আরও দুইটা উপগ্রহ থাকলে কি কি সুবিধা হতো এসব বিষয় তিনি প্লেটোর দি রিপাবলিক গ্রন্থের সাম্যবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
আমার অজ্ঞতাকে খোঁচা দিয়ে বললেন, তোরা মোটেও লেখাপড়া করিস না। একটু-আধটু জ্ঞান না থাকলে আমার লেখা বুঝবি কেমনে? পড়াশোনা কর বুঝলি, পড়াশোনা কর...।
আপনি এত জানেন কেমনে, ভাই? আপনার ঘরে কোনো বইপত্তর নেই তো!

এখনকার পড়া বইনির্ভর নাকি রে পাগলা? দোকানের ভিতরে আয়। নিয়ামত ভাইয়ের বাবার একটা সারের দোকান আছে। সাহিত্যচর্চার ফাঁকে ফাঁকে তিনি স্যারের দোকানে বসে চাচাকে ধন্য করেন। সেই সুযোগে চাচা ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে বের হন। কিন্তু ছেলের জ্ঞান-গরিমাকে কিঞ্চিৎ আঁচ করতে পারে এমন মেয়ে তিনি পাচ্ছেন না। এদিকে কবি নিয়ামতের জ্ঞানের ভান্ডার যত বাড়ছে তার মাথা (চুল) তত ফাঁকা হচ্ছে।

নিয়ামত ভাই চায়ের অর্ডার দেন। ভাইয়ের মুড আজ ভালো। অনেকদিন ধরে পেটের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো গুরগুর করছিল সেগুলো আজ উগরে দেব। যা থাকে কপালে।
লেখক ভাই, (কবি বা লেখক বললে ভাইয়ের মন ভালো হয়) আপনার এত এত সুন্দরী মেয়ে ভক্ত, এদের কাউকে বিয়ে করেন না কেন? আপনার জন্য চাচায় আর কত মেয়ে দেখবে? চাচির বয়স হইছে...।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে হো হো করে হেসে ওঠেন আমাদের এলাকার গর্ব সবজান্তা নিয়ামত আলী। তিনি বলেন, নিজেকে কি নিজে বিয়ে করা যায় রে পাগলা?
আমি মানে না বুঝে তার দিকে অবাক তাকিয়ে থাকি। তিনি পিঠে মৃদু একটা থাপ্পড় দিয়ে বলেন, বুঝিস নাই তো?

আমি মাথা নাড়ি। তিনি আমার অজ্ঞানতাকে অবজ্ঞা করে বলেন, কবিতার রাজকন্যা, স্বপ্নময়ী, অবুঝ বালিকা, মেঘকন্যা এগুলো তো আমারই ফেক আইডি। হা হা হা...। বিশ্বজয়ের হাসি হাসেন।
মানে কী, ভাই?
মানে খুবই সহজ। এই আইডিগুলো দিয়ে আমার লেখাকে আমিই লাইক-শেয়ার দেই, আমিই কমেন্টস করি।
মেয়েদের নামে আপনার আইডি!

হ্যাঁ। আমার পোস্টে যত না লাইক, কমেন্টস পড়ে তার চেয়ে অনেক বেশি পড়ে মেয়েদের ওই ফেক আইডিগুলো থেকে শেয়ার হলে। এই কবিতাটা দেখ। তিনি দুইঘণ্টা আগে পোস্ট করা একটা কবিতা দেখান। কবিতার রাজকন্যা লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে কমেন্টসে লিখেছে- প্রিয় কবি নিয়ামতের কবিতা আমার অনেককে অনেক সুইট লাগে। বন্ধুরা, কে কে কবিতাটি পড়েছ কমেন্ট করে জানাও, প্লিজ।
স্বপ্নময়ী লিখেছে- কবি নিয়ামতের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। বন্ধুরা, তোমরা কি আমার সঙ্গে একমত?
মেঘবালিকা লিখল, কবি নিয়ামত কবিতারাজ্যের রাজকুমার। আমারও...। কবি, কবে আমার মেঘের রাজ্যে আসবে? আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। এখন বুঝতে পারছি এমন অখাদ্য লেখাগুলোতে প্রশংসনীয় মন্তব্য কারা করে। ভাই, আপনি যে অতকিছু জানেন, মনে রাখেন কেমনে? আমি শুনেছি পড়া মনে রাখতে পারতেন না বলে বারবার ফেল করতেন।
কবিকে এই প্রথম কিছুটা বিব্রত হতে দেখলাম। তবে তিনি সেটা গিলে ফেলে বললেন, তুই কলেজে পড়লেও এখনো বোকাই আছিস।
কেন?
চলবে...

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper