এখানে ভাঙা স্বপ্ন মেরামত করা হয়
স্বপন শর্মা
🕐 ২:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
মানব জীবনে একটা মানুষকে হাজারও স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তবে কিছু স্বপ্ন ভঙ্গের কথা ভোলা যায় না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সেরকম একটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের হাত ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছি আজীবন। আসলে জীবনের বড় স্বপ্নগুলো শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। তবুও কি স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায় স্বপ্ন দেখা ছাড়ে কেউ? গর্ভবতী মাঘের শেষ দুপুর থেকে যে শীতপ্রবাহ চলছে এই শেষ বিকালে এসে তার প্রবাহও দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে শীতল হাওয়ায়। খুব ইচ্ছে করছে এক কাপ চা খেতে, কাজের লোকটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো সিরিয়াল দেখতে বসেছে। লেপের নিচ হতে উঠতে ইচ্ছে করছে না। এলোমেলো ভাবনায় ভরে থাকে মন।
আগের মতো আজকাল আর রোমাঞ্চ আসে না মনে। শীতে কাঁথার নিচে শুয়ে শুয়ে এখন আর মঙ্গল গ্রহ জয়ের অনুভূতি পাই না। বৃষ্টি এলে মনের ভালো মন্দলাগা সেই স্বপ্নগুলো শূন্যতে এসে পৌঁছায়। অথচ একটা সময় ছিল একটানা বৃষ্টির শেষেও মনের সেই কাক্সিক্ষত বাসনাগুলো ডালপালা ছাড়তে ছাড়তে কখন যে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেছি বুঝতে পেতাম না। মনের উল্লাসে হেঁটে চলছি চাঁদের মাটিতে, হঠাৎ চোখে পড়ল বাংলা হরফে লেখা, ‘এখানে ভাঙা স্বপ্ন মেরামত করা হয়’ একটি সাইন বোর্ড। আমার সে কী আনন্দ! চাঁদের মাটিতে এই প্রথম এমন কিছু বোধহয় দেখতে পেলাম।
যৌবনের স্বপ্নটা অনেক আগে ভেঙে ছিল। এই সুযোগে স্বপ্নটাকে মেরামত করার ইচ্ছে আমার মনেও প্রবল নাড়া দেয়। সিরিয়াল নিলাম, চন্দ্র-৪২০, আমাকে একটা মেন্যু ধরে দিল হাতে। ভাঙা স্বপ্ন মেরামতেরও রকমফের আছে যে রকম মেরামত সেরকম দরদাম, ভালো লাগল। আমি একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে দিলাম। স্বপ্ন স্পেশালিস্ট সহযোগী জানিয়ে দিলেন পাঁচ দিন সময় লাগবে আপনার সিরিয়াল আসতে। সুতরাং আমাকে পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এই অপেক্ষার সময়গুলো কীভাবে কাটাব ভাবতেই মনে পড়ল সেই বইয়ের কথা।
এখানে আসার আগে চাঁদের ইতিহাস বই পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। সেখানে জেনেছি জোছনা ঝিলের কথা। পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে স্বপ্ন মেরামতের জন্য তাই চন্দ্রযানে করে জোছনাঝিল অভিমুখে যাত্রা করলাম। সেখানে পৌঁছালাম যথাসময়ে। ভাসমান জোছনায় স্নান করে এক পকেট জোছনা নিয়ে ফিরতি যানে উঠে বসতেই দেখি আমার সামনের সিটে বসা যৌবনের স্বপ্নের নায়িকা। আশ্চর্য হয়ে ভাবছি এ কী মিরাকল। খুব চেষ্টা চলছে আমার পক্ষ হতে তার সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হওয়ার কিন্তু চলন্ত যানে কথা বলা নিষেধ, অপেক্ষা করছি সামনের কোনো স্টপে পরিচয় হব। স্টপে থামা মাত্র দাঁড়ালাম। হাত এগিয়ে দিতেই সে আমার পানে চেয়ে আছে সপ্তম আশ্চর্য দেখার মতো। এভাবে যে চাঁদের মাটিতে দেখা হবে তা কল্পনাতীত।
পরে যখন স্বপ্নচাঁদ রাজ্যে পৌঁছালাম তখন জানতে পারলাম আমার মতো সেও ভাঙা স্বপ্ন মেরামত করতে এসেছে। দুজনার একই লক্ষ্য। জানতে ইচ্ছে করছে সেই পূরণ না হওয়া স্বপ্নটা কি সেই আমি! ঠিক জিজ্ঞেস করব এমন মুহূর্তে কাজের লোকটি শরীর ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে ডেকে যাচ্ছে। চোখ খুলতেই বলতে লাগল ‘স্যার, চা খাবেন না’। উঠে বসে পড়ি। সাঁঝের বাতি জ¦লছে। বিশাল বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া আর একমাত্র আমি। ভাবছি অতীতের কথাগুলো। আবার যদি ভাঙা স্বপ্নগুলো মেরামত করা যেত বাস্তবে। এই প্রথম ভাঙা স্বপ্নগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভেবে চলছি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228