ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ট্রেনিং

আবুল কালাম আজাদ
🕐 ৩:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১

ট্রেনিং

কুব্বাত মনোহর। ‘মনোহর’ আবার কেমন পদবি? তাহলে এ ব্যাপারটা একটু খোলসা করে নেই। তার নাম ছিল কুব্বাত হোসেন। এমএ পাস করে জানে প্রাণে চেষ্টা করেও একটা চাকরি পেল না। শেষে শ^শুরবাড়ি থেকে টাকা এনে মনোহরী দোকান দিল। বউয়ের প্রথম দিকে একটু দ্বিমত ছিল। বলেছিল, এমএ পাস কইরা শেষে মনোহরী দোকান করবা?

কুব্বাত হোসেন বলল, মনোহরী দোকানে লাভ কম, কিন্তু বিক্রি বেশি। ব্যবসায় লস খাওয়ার আশঙ্কা নাই।

কুব্বাত হোসেন খুব সুন্দর করে দোকানটা সাজাল। দোকানের সামনে লিখল- কুব্বাত মনোহরী দোকান। আর এলাকার লোকজন তাকে ডাকতে শুরু করল, কুব্বাত মনোহর।
মাত্রই দোকান শুরু হয়েছে অমনি কুব্বাত মনোহরের চাকরি হওয়ার চিঠি এসে গেল। ছোট-খাট চাকরি না। নন-গেজেটেড প্রথম শ্রেণির অফিসার। কুব্বাত মনোহরের মনোহরী দোকান বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তার নামের শেষে মনোহর শব্দটা রয়েই গেল।
কুব্বাত মনোহরের ফাটা কপাল। চাকরি হতে না হতেই ট্রেনিং, তাও দেশের বাইরে। যাকে বলে সেরের ওপর সোয়া সের। কুব্বাত মনোহরের বউ বলল: তুমি বিদাশ যাইবা?
: সবে তো শুরু।
: কীসের ট্রেনিং?
: গৃহে মৌমাছি পালনের ট্রেনিং।
: ঘরে মৌমাছি পাইলা লাভ কী?
: তোমার মাথায় ঘিলু বলতে কিছু নাই। মৌমাছি পাললে মধু পাওয়া যাবে। মধু একটি পুষ্টিকর খাবার, এটি ওষুধি গুণে ভরা। পুরুষের সবরকম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দেশে বেশি বেশি মধু উৎপাদন হলে দেশের মানুষ পুষ্টি পাবে, মধু বিদেশে রপ্তানি করেও অনেক টাকা উপার্জন হবে।
: তাহলে তো ভালোই।
: এরপর পাব পুকুর কাটার ট্রেনিং, মোরগ-পোলাও রান্না করার ট্রেনিং, নিম গাছ লাগানোর ট্রেনিং।
: এইসব কাজ কি বিদাশের মানুষ ভালো পারে? তোমার শাশুড়ি আম্মার মোরগ-পোলাও রান্না করার সুনাম তিন গ্রামে...।

: ধুর শাশুড়ি আম্মার মোরগ-পোলাও! আমি মোরগ-পোলাও রান্নার ট্রেনিং নিয়া আসার পর দেইখো...।
: এত বিদাশ ঘুরতে খারাপ লাগবে না?
: তোমার কথাবার্তা শুনলে হাসিও পায়, বিরক্তও হই। বিদেশ ঘুরতে খারাপ লাগার কী আছে? বিভিন্ন দেশ দেখব, পাঁচ তারকা হোটেলে মন্ত্রী, মিনিস্টারের মতো থাকব, আবার পকেট নগদ...। দেইখো অল্প দিনেই বাড়ি হয়া যাবে রাজপ্রাসাদ।
: বলো কী! এসব দুর্নীতি হবে না?
: দুর্নীতি! আমি কি দেশের মানুষ না? আমার উন্নতি কি দেশের উন্নতি না? যত বেশি ট্রেনিং তত বেশি দেশের উন্নয়ন।

কুব্বাত মনোহর গৃহে মৌমাছি পালনের ট্রেনিং শেষ করে সহি-সালামতে দেশে ফিরে এলো। এসে বাড়িতে পাকা ঘর তোলার কাজ শুরু করে দিল। পাড়ার মানুষ বড় চোখ করে বলাবলি করতে লাগল, কুব্বাত মনোহর শুধু মৌমাছি পালনই শিখে আসে নাই, পকেট ভরে মধুও নিয়ে এসেছে।
বাড়িতে পাকা ঘর তোলার পাশাপাশি কুব্বাত মনোহর ঠিক করল, নিজের গৃহে মৌমাছি পালন করবে। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানটা নিজগৃহ থেকে প্রয়োগ করা ভালো। মৌমাছির জন্য ঘর বানাল। মৌমাছিও আনল। সবই চলছিল ঠিকঠাক মতো। কিন্তু একদিন হঠাৎ ঘটল অঘটন। গৃহে পালিত মৌমাছি যে এভাবে ক্ষেপে যাবে তা সে কল্পনাও করেনি। মৌমাছি ক্ষেপে পাড়ার মানুষদের ভীষণ কামড়াতে শুরু করে দিল। মানুষ দৌড়াদৌড়ি করে, ঘরের খিল এঁটে, মশারি টাঙিয়ে কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করল। দুই/চারটা কামড় সবাই-ই খেয়েছ। সে কী জ¦লা! পাড়ার মানুষ যা-তা গালাগাল শুরু করল কুব্বাত মনোহরকে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুব্বাত মনোহরের প্রতিবেশী মুন্তাজ চৌকিদারের। কয়েকটা মৌমাছি তার লুঙ্গির ভিতর ঢুকে গিয়েছিল। তার বিশেষ অঙ্গটায় কয়েকটা হুল ফুটিয়ে দিয়েছে। অঙ্গটা ফুলে চারগুণ হয়ে যায়। টনটনে ব্যথা। শত হলেও চৌকিদার মানুষ। সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। চেয়ারম্যান, মেম্বার ডেকে কুব্বাত মনোহরের বিরুদ্ধে বিচার বসায়। বিচারে সাব্যস্ত হয়, জেলা শহর থেকে ভালো একজন ডাক্তার এসে মুন্তাজ চৌকিদারের চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে কুব্বাত মনোহরকে।
কী আর করা! কুব্বাত মনোহর ডাক্তার নিয়ে এলো। ডাক্তার সবকিছু শুনে দেখে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছিল। এরকম অবস্থায় মুন্তাজ চৌকিদারের বউ কুব্বাত মনোরহকে নিরালায় ডাকল। ডেকে বলল, ভাই সাহেব, আপনে ডাক্তারকে একটা কথা বলবেন।

: কী কথা বলব ভাবি?
: বলবেন, ডাক্তার তাকে যেন এমন ওষুধ দেয় যাতে ব্যথাটা চলে যায়, কিন্তু ফোলাটা থাকে।
: এটা কী বলেন ভাবি? এটা কখনো সম্ভব না।
: আপনি বলে দেখেন। তিনি বড় ডাক্তার। হয়তো পারবেন।
: আরে নাহ! মাথা খারাপ? এটা কখনই সম্ভব না।
মুন্তাজ চৌকিদারের বউ যখন কুব্বাত মনোহরের সঙ্গে নিরালায় কথা বলছিল তখন কুব্বাত মনোহরের বউ রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছিল। সে বিষয়টা দেখে ফেলে। রুটি বানানোর বেলুন হাতে ছুটে আসে। বলে: চৌকিদারের বউ তোমারে কী বলতেছে?
: যা কখনো সম্ভব না তাই করতে বলে।
: কী করতে বলে তাই বলো?
: এইসব শুনে তোমার দরকার নাই।
: আমার দরকার নাই মানে? তুমি অন্যের বউয়ের সঙ্গে নিরালায় ইটিশ-পিটিশ করবা আর আমার দরকার থাকবে না!
কুব্বাত মনোহরের বউ হাতের বেলুন ছুঁড়ে মারে। বেলুনটা গিয়ে লাগে কুব্বাত মনোহরের বিশেষ অঙ্গে। কিছুক্ষণ পরই অঙ্গটা ফুলতে থাকে। ফুলতে ফুলতে চারগুণ হয়ে যায়। সে

কী ব্যথা! টনটন করে। সেই ডাক্তারই ভরসা। ডাক্তার যখন প্রেসক্রিপশন দিচ্ছিল তখন কুব্বাত মনোহরের বউ দরজার ফাঁক দিয়ে বলে, ডাক্তার সাব, এমন ওষুধ দেবেন যাতে ব্যথাটা চলে যায়, কিন্তু ফোলাটা থাকে।
তখনই কুব্বাত মনোহরের ফোন বেজে উঠল। ওপার থেকে জানাল, মোরগ-পোলাও রান্নার ট্রেনিং নিতে তাকে জার্মান যেতে হবে। কুব্বাত মনোহর চোখ গোল করে বলল, আবার ট্রেনিং!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper