ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফ্যান সমাচার

সোহেল দ্বিরেফ
🕐 ৩:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১

ফ্যান সমাচার

সাখাওয়াত হোসেন রেলওয়ে পুলিশের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তার বয়স পঞ্চাশ বছর ছুঁই ছুঁই, ভরাট গলা আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন তাকে বয়সের পরিপূর্ণতা দান করেছে! তিনি যখন রেগে যান তখন তার চোখজোড়া ঠিক আধাপাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে যায় এবং নাকের নিচে থাকা গোঁফগুলো শিকার করা বিড়ালের লোমের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কাজের অংশ হিসেবে তিনি টিকিট চেকারের সহযোগী হিসেবে থাকেন যেন কেউ ট্রেনে করে অবৈধ মালামাল বহন করতে না পারে এবং ভাড়াও ফাঁকি দিতে না পারে, কত দায়িত্ব তার!

রীতি অনুযায়ী আজকেও তিনি ডিউটিতে চলে এলেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে। নিজেদের অবস্থান নিতে নিতে ট্রেনের চাকা ঘুরতে থাকে। যাত্রীরা সবাই যে যার আসনে বসে আছে, কেউ কেউ এখনো তার আসন খুঁজছে। প্রথম যাত্রীর টিকিট চেক করতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। তিনি মুখ চুলকাতে চুলকাতে সেই যাত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। যাত্রীর নাম কাসেদ, বয়স আঠার কি উনিশ বছর হবে। তিনি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওই বক্সটি কার?’

‘স্যার, ওটা আমারই বক্স।’
‘বক্সের মধ্যে কী?’
‘ফ্যান।’

‘সেটা তো দেখেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আজকাল খুব চোরাচালান হচ্ছে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে! বলা তো যায় না অন্যকিছুও থাকতে পারে, আমার সন্দেহ হচ্ছে, তোমার বক্সটি একটু চেক করতে হবে।’
‘আমি সত্যি বলছি, ওখানে ফ্যান রয়েছে, স্যার।’
‘আমি না দেখে ছাড়ছি না, ওটা নামাও দেখি!’
‘স্যার, যদি নিচে পড়ে যায় তাহলে তো বিপদ হয়ে যাবে।’

‘এত কথা তোমার, আমিই নামাচ্ছি, দেখি, সত্যি সত্যিই ফ্যান নাকি অন্যকিছু! আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া খুব কঠিন! ওরে সর্বনাশ! এটা তো উঁচু করে নামানো যাচ্ছে না, দেশি ফ্যান নাকি বিদেশি?’
‘সেটা তো জানি না তবে বিদেশি হতে পারে!’
‘অবশ্যই এখানে ঘাপলা আছে।’
‘দেখেন, দেখেন।’
‘ওমা, এটা কী! এই ফ্যান!’
‘হুম, আমি আগেই তো বলেছিলাম, এর মধ্যে ফ্যান, আপনি শুনলেন না।’
‘ফ্যান সেটা তো বুঝলাম। কিন্ত সিলিং ফ্যানের বক্সের মধ্যে ভাতের ফ্যান নেওয়ার মানেটা কী? আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে তাই না?’
‘কিছু বললেন নাকি, স্যার?’

‘না, তোমার কাজের ধরন দেখে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে আমার। আর কিছু পাওনি, সামান্য ভাতের ফ্যান এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছ! এই ছেলে তোমার বাড়ি কোথায়?’
‘বাড়ির লোকেশনটা তো ঠিকমতো বলা সম্ভব না, স্যার। তবে আমি চেষ্টা করছি। খুলনা রেলস্টেশনে নেমে সেখান থেকে সোজা ডাকবাংলো যেতে হবে, সেখানে পৌঁছানোর পর ঠিক ডানদিকে যে রাস্তাটি গেছে সেটা ধরে সাত-আট মিনিট হাঁটতে হবে, তারপর বামদিকে দু’হাত ঘুরে চিকন গলির একটা রাস্তা দেখতে পাবেন, ওটা ধরে কয়েক মিনিট হাঁটার পর সামনে নীল রঙ করা তিনতলা একটা বাড়ি দেখতে পাবেন, ওই বাড়িটা ডান হাতে রেখেই...।’

‘এই চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথাও বলবে না।’
‘স্যার, আমি তো বাড়ির কাছাকাছি প্রায় চলেই আসছি আর আপনি থামিয়ে দিলেন!’
‘আর বলতে হবে না, অনেক হয়েছে। আমি জানতে চাচ্ছি কোন জেলায়?’
‘ও, আচ্ছা। এই তো খুলনা জেলায়। স্যার, আপনি যেটাই বলেন না কেন, বাসমতী চালের ভাতের ফ্যান খেতে কিন্তু দারুণ মজা। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে, ঘ্রাণটাও দারুণ। খাবেন নাকি?’
‘আর একটা কথা বললে তোমাকে তিনবেলা জেলের ভাতের ফ্যান খাওয়াব!’
‘আমি তো সাধারণ একজন মানুষ, ওসব জেলের কথা শুনলে ভয় করে, স্যার। আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দিলে হয় না, স্যার?’
‘এগুলো নিয়ে যাচ্ছ কোথায়?’
‘এই তো সামনের স্টেশনেই নেমে যাব।’

‘তুমি এক কাজ করো, পাবনা যাও, ওখানেই তোমার জন্যে ভালো হবে।’
‘পাবনা কেন যাব, স্যার? ওখানে তো আমাদের কেউ নেই।’
‘সমস্যা নেই, ওই যে পাগলাগারদ আছে না, ওখানে যাও। দেখবে, সেখানে তোমার মতো হাজার হাজার পাগল আছে।’
‘কী যে বলেন স্যার।’
‘মনে হচ্ছে তোমার পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে, তা না হলে এই পাকামো করার শক্তিটা কোথায় পাচ্ছ? কানে কানে একটা কথা শোনো।’
‘বলুন, স্যার।’
‘আচ্ছা, তুমি কোন দল করো?’
‘না, স্যার। এসব কী বলছেন! আমার মা শুনলে পিটিয়ে আমাকে তক্তা বানিয়ে দেবে। সত্যি স্যার আমি কোন্দল করি না।’
‘ওরে কোন দল করো?’
‘বললাম তো, কোন্দল করি না।’

‘কোন দল, কোন দল!’
‘ও, এবার বুঝেছি, ক্রিকেট বিশ^কাপ খেলা চলছে বলে এটা জানতে চাচ্ছেন? বাংলাদেশ, আমি বাংলাদেশ দলকেই সমর্থন করি, স্যার।’
‘ওরে গাধা, রাজনীতির দলের কথা বলেছি, রাজনীতি।’
‘স্যার, ওটাতে আমি আগেও নেই পেছনেও নেই। আমি যতদূর জানি, রাজনীতি করে রাজারা, আমি তো রাজা নই।’
‘আমার সঙ্গে চলো, তোমাকে ফ্যান থেরাপি দিতে হবে খুব দ্রুত।’
‘স্যার, কোথায় থেরাপি দেবেন।’
‘জায়গা মতো দেব, সব পাগলামি ছুটে যাবে, চলো।’
‘স্যার, সরি। আর কখনো এমন হবে না। এই যে দেখেন, কান ধরলাম, জীবনে আর কোনোদিন পাকামো করব না! কিন্তু আপনারও ভুল হচ্ছে, আপনি তো প্রশ্ন ঠিকঠাক করতে পারছেন না, এজন্যই হয়তো ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, স্যার।’

একথা শুনে সেই পুলিশের কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগল।
অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কথা না বাড়িয়ে বিড়বিড় করতে করতে পরের যাত্রীর দিকে এগিয়ে গেলেন আর মাঝে-মধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকাতে থাকেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper