প্রাপ্তিযোগ!
অলোক আচার্য
🕐 ২:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১
রমিজ সাহেব ভাগ্যচক্রে গভীরভাবে বিশ্বাসী একজন মানুষ। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো চাকরি করেন। বহুদিন ধরেই তার প্রমোশন হবে হবে করেও হচ্ছে না। ওপর মহলে যোগাযোগ করেও সুবিধা করতে পারছেন না। তার ধারণা তার ভাগ্যচক্রে বিশাল কোনো ঝামেলা হয়ে আছে। কিন্তু সাধু সন্ন্যাসীদের কাছে হাত খুলে দান করেও লাভ হয়নি। এ নিয়ে তার অফিসের পিয়নরা পর্যন্ত হাসি-ঠাট্টা করতে ছাড়ে না। আকারে ইঙ্গিতে উৎকোচের কথা বলে। কিন্তু তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। ভাগ্যে থাকলে এমনিতেই হবে।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের রাশিটা একবার মিলিয়ে নেন। আজও তাই করলেন। আজ তার ভাগ্যে প্রাপ্তিযোগের ইঙ্গিত দেওয়া আছে। এটা পড়েই তার মন আনন্দে নেচে উঠল। তার ভাগ্যের শিকে আজ ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে। পড়েই তিনি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলেন। আজ একটু আগে আগেই অফিসে যেতে হবে। প্রমোশন হলে তো আবার মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যাপার আছে। ঝালমুখও করানো যেতে পারে। তিনি সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলেন। গিয়েই দেখলেন সেখানে নতুন সাবান দেওয়া হয়েছে। তিনি আশ্চর্য হলেন। কারণ যতদূর মনে পড়ে, সাবান তো শেষ হয়নি! ভালো লক্ষণ! এখান থেকে প্রাপ্তি শুরু হয়েছে। তিনি আজ একটু বেশি সময় ধরেই গোসল সারলেন। একটু ফ্রেশ থাকা দরকার। মনে মনে প্রমোশন পেলে বউকে কী গিফট দেবেন তাও ঠিক করে ফেললেন।
এসব ভাবতে ভাবতেই তিনি নাস্তা সেরে অফিসের দিকে ছুটলেন। বড় রাস্তায় পৌঁছে বাস ধরতে হলে গলিটা হাঁটতে হবে। আজ রমিজ সাহেব প্রায় দৌড়াতে লাগলেন। হঠাৎ তার বাড়ির তিন বাড়ি পর যে পাঁচতলা বাড়িটা সেখানে পৌঁছাতেই বিপত্তি ঘটল। ওপর থেকে কেউ তার মাথায় আগের দিনের জমানো ময়লা আবর্জনা ফেলে দিল। অন্যদিন হলে তিনি এর পেছনের দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে ঠিক দু’কথা শুনিয়ে দিতেন। কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন। ছোটখাটো ব্যাপারে মন দিলে চলে না! তিনি হাত দিয়ে ময়লা সাফ করে বড় রাস্তার দিকে ছুটলেন। পেয়েও গেলেন বাস। বাসে উঠে তিনি লক্ষ করলেন একটা মাত্র সিট ফাঁকা আছে। অথচ কয়েকজন দাঁড়িয়েও আছে। তিনি তার প্রাপ্তিযোগ থিওরি কাজে লাগিয়ে আগে-পিছে না ভেবে বসে পড়লেন।
তিনি আসল ঘটনা বুঝলেন নামার সময়। সিট থেকে উঠতে গিয়ে দেখলেন কেউ এককোণে সুইংগাম লাগিয়ে রেখেছিল। উত্তেজনার কারণে তিনি দেখতে পাননি। কোনোমতে সুইংগামের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দচিত্তে অফিসের দিকে ছুটলেন। কিন্তু পেছনে তখনো সুইংগামের অবশিষ্ট ছিল। তিনি পাশে এক গাছ থেকে পাতা ছিড়ে তা পরিষ্কার করতে গেলেন। পাতা ছিড়ে পরিষ্কারও করলেন। কিন্তু সুইংগাম পরিষ্কার করে তিনি যখন অফিসের দিকে পা বাড়ালেন তখনই গাছের ওপর থেকে টুপ করে তার মাথায় পাখির বিষ্ঠা পড়ল। তিনি বার দুয়েক ওপরের দিকে তাকিয়ে পাখি তাড়ানোর চেষ্টা করলেন। যদিও পাখি তার আগেই উড়ে গেছে। এসবে তিনি মোটেই বিচলিত নয়। আজ তার প্রাপ্তিযোগের দিন। আজ রাগারাগি করলে চলবে না। এই ভেবেই তিনি পাখিকে ক্ষমা করে দিলেন। চললেন অফিসের দিকে। প্রমোশনের খবরটা দ্রুতই শুনতে হবে! ছুটলেন অফিসের দিকে। অফিসে ঢুকতেই তার সহকর্মী আবুল সাহেব তাকে মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন রমিজ ভাই? তিনি বেশ অবাক হলেন। কারণ আবুল সাহেব এত মোলায়েম গলায় কখনই কথা বলেন না। নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে। এরপর তিনি তার টেবিলে বসলেন। বসতেই তার পিয়নটা তার টেবিলে চা-মিষ্টি রেখে গেল।
ঘটনা কী? সকাল সকাল মিষ্টি দেওয়ার আর কি কারণ থাকতে পারে? কিন্তু তার প্রমোশনের চিঠিটা কোথায়? তিনি মিষ্টি খেলেন। আর অপেক্ষা করতে না পেরে তার পিয়নকে ডেকে জানতে চাইলেন মিষ্টির ঘটনা কী? তিনি যা শুনলেন তাতে প্রায় অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়। আবুল সাহেব প্রমোশন পেয়েছেন। আজ সকালেই হেড অফিস থেকে চিঠি এসেছে। এ উপলক্ষে তিনি সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228