ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গোঁফ সমাচার

হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৫, ২০২১

গোঁফ সমাচার

বেকার শ্যালক চাকরি-বাকরির একটা হিল্লে না হওয়া পর্যন্ত না হয় থাকলই বাসায়। বাবা একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মাঝারি গোছের পদে আছেন। এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। কর্মহীন মামা সারাদিন খান, মাঝে মাঝে মাথায় টেরি কেটে সাজুগুজু করে চাকরির সন্ধানে বেরিয়ে যান। আসলে চাকরির সন্ধানে যান নাকি সুন্দরী মেয়েদের সন্ধানে ফিল্ডিং মারতে যান সন্দেহ আছে।

পল্টু ক্লাস সেভেনে। সেদিন তার সহপাঠিনী রীনা দূর থেকে মামাকে দেখে বলল, ওই লোকটা যে মাঝে মাঝে তোর সঙ্গে থাকে, কে রে?

: কেন, কী হয়েছে?
: সেদিন হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কী? আমি তাকে তোর সঙ্গে দেখেছি, তাই উত্তর দিলাম- রীনা। বাহ্, বেশ সুন্দর নাম তো! বলে আমার হাতে ধরা বইগুলো দেখতে লাগলেন। সেখানে আমার নাম লেখা দেখে বললেন, তোমার হাতের লেখাও চমৎকার। আমি তাকে এড়াতে বললাম, যেতে দিন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। চট করে একটা রিকশা ডেকে বললেন, চলো তোমাকে পৌঁছে দিই। আমি সঙ্গে যেতে রাজি হচ্ছি না দেখে হাত ধরে টানাটানি শুরু করলেন।

পল্টু কোনো উত্তর দিল না। গ্রামের বাড়ি থেকে কত লোক এক প্যাকেট মিষ্টি হাতে এসে মামা বনে যায়। থাকার অবস্থানটা পাকাপোক্ত করার জন্য বিকাল পাঁচটায় বাবার যখন অফিস ফেরার সময় হয় তখন তাকে আর তার নাইনে পড়া বড় বোন বুবলীকে পড়াতে বসে। বাবা দেখে খুশি হন। কিন্তু পড়ায় কচু! তার পোদ্দারীতে এখন বাসায় টেকা যাচ্ছে না। তার খেলার সময়ে পড়ানোর নেশা চাগিয়ে ওঠে। বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে উচ্চস্বরে পড়া ধরে- এই পল্টু, তোর হোমটাস্কের অঙ্ক খাতাটা নিয়ে আয় তো। তারপর মা কালীর মতো জিহ্বাটা আধ হাত বের করে চেঁচিয়ে ওঠেন- ছি, ছি! এত কম নম্বর পেয়েছিস! সারাদিন খালি দুষ্টুমি। সোজা অঙ্কটাও ভুল করলি।

অফিসফেরত বাবার মেজাজ গরম। কথাগুলো কানে যেতেই তেলেবেগুনে জ্বলে ছুটে আসেন তিনি- আমি এত কষ্ট করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালি তোর লেখাপড়ার পেছনে আর তুই খালি দুষ্টুমি করে বেড়াস।
বলেই কান টেনে ধরে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেন গালে।

প্রায়ই এরকম ঘটে। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়? না, মামাকে জব্দ করতেই হবে। কিন্তু সুযোগ পাওয়া যায় না। পল্টু লক্ষ করেছে মামা তার তলোয়ারের মতো বাঁকা দশাসই গোঁফে তা দিয়ে সেন্ট মেখে অবসর পেলেই ফিল্ডিং মারতে বের হয়। সে তার সেন্টটা লুকিয়ে রাখল। পরদিন বিকালে সেজেগুজে বেহায়ার মতো মাকে বলল মামা- বুবু, তোমার সেন্টটা একটু দাও না।
: ওটা তো মেয়েদের সেন্ট।
: সেন্টের আবার নারী-পুরুষ আছে নাকি? দাও না একটু।

এতে আশানুরূপ ফল না পেয়ে দু’দিন পর খাবার টেবিলে মামা বেসিনে হাত ধুতে উঠে যেতেই পল্টু মায়ের চোখের আড়ালে মামার তরকারির বাটিতে এক খাবলা লবণ ঢেলে দিল। মামা খেতে বসেই মুখ বিকৃত করে লাফিয়ে উঠলেন- বুবু, তুমি তরকারিতে এত লবণ দাও!
: তোর মুখ খারাপ হয়ে গেছে। সবাই এ তরকারি দিয়ে খাচ্ছে কেউ অভিযোগ করল না। তুই কালকেই ডাক্তার দেখাস।
তারপর কী মনে করে নিজেই চেখে দেখলেন একটু।
: তাই তো! এত লবণ কী করে এলো?
এরপর স্বামীর জন্য আলাদা করে তুলে রাখা রুই মাছের মুড়ো আর ঝোল তুলে দিলেন তার পাতে।
: নে, এটা দিয়ে খা।

কোথায় পুঁচকে এক চিলতে একটা মাছের টুকরো দিয়ে ভাত খেত, তার বদলে বিশাল আস্ত মুড়ো। উল্টো লাভ হয়ে গেল মামার। তাকে শিক্ষা দিতে না পেরে মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করল পল্টু। সন্ধ্যায় রাস্তার ডাস্টবিনের পাশ থেকে একটা মরা ইঁদুর কুড়িয়ে এনে মামার জুতোর ভিতর রেখে দিল।
পরদিন সকালে চাকরির তালাশে বের হওয়ার সময় জুতাটা পরেই নরম কিছুর স্পর্শে চমকে উঠলেন তিনি। এ কী! ইঁদুর এলো কী করে? আমার পায়ের চাপে দেখি মরেই গেছে। জুতাতে ওর রস লেগে আছে আর মোজা দুর্গন্ধে ভরে গেছে।
: বুবু, আজ কী করে ইন্টারভিউ দেব?
মুখ গোমড়া করে মামা কঁকিয়ে উঠলেন।
: মন খারাপ করিস না। নে, এই নতুন মোজাটা নে। আজকে তোর দুলাভাইয়ের যে অতিরিক্ত জুতাটা

বাড়িতে আছে সেটা পরে যা। বিকেলেই তোকে নতুন জুতা কিনে দেব।
কোথায় মামা বিপর্যস্ত হবে উল্টা তার মহাবিজয়! পচা মেড়মেড়ে জুতার বদলে আনকোরা নতুন জুতা। আর পারা গেল না। অন্য উপায় ভাবতে হবে। বিকালেই দেখা গেল মামা তার নতুন প্রাপ্ত জুতা মোজা পরে ফিটফাট হয়ে আয়নার সামনে তার প্রিয় গোঁফ জোড়ায় তা দিচ্ছেন কী একটা ওষুধ মেখে।
: কী ওষুধ লাগাচ্ছ মামা?
: আরে বোকা, ওটা ওষুধ নয়। এটা মরগ্যান ক্রিম। বিলাত থেকে আমার বন্ধু পাঠিয়েছে। এখানে পাওয়া যায় না। এটা লাগালে গোঁফের চেকনাই আর জেল্লা বাড়ে।
: তাই তো মামা, তোমার গোঁফটা কী সুন্দর।
: সবাই তাই বলে। জানিস, গোঁফটাই হলো পুরুষের ব্যক্তিত্বের পরিচয়। আমার গোঁফ গজানোর পর কোনোদিন কাটিনি।

পল্টু সিদ্ধান্ত নিল মামাকে দমন করতে সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় ঘা মারতে হবে।
মাঝখানে একটা রাত। সকালে উঠেই তাড়া লেগে যায় বাসায়। বাবা অফিসে যান। বড় বোন ও সে নাকে মুখে দুটো গুঁজে স্কুলে যায়। এরপর মামা সাজুগুজু করে চাকরির খোঁজে বা ইন্টারভিউর জন্য বেরিয়ে যান। সেদিন সবাই চলে যাওয়ার পর মামা গুনগুন করে একটা হিন্দি গানের কলি গাইতে গাইতে শেভ করলেন। এখন অন্তত পনের মিনিট ধরে গোঁফ পরিচর্যা করবেন তিনি। প্রথমেই ক্রিম মেখে নিলেন তাতে। তারপর যতবারই তা মোচড় দিচ্ছেন ততবারই হাতে তা ভুসভুস করে উঠে আসতে লাগল। দুঃখ বেদনা ও বিস্ময়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থা হলো তার। মুখ দিয়ে আর্তচিৎকার বেরিয়ে এল- বু-বু!

রান্নাঘর থেকে ডাল বাজারের ঘুটনি হাতে ছুটে এলেন পল্টুর মা। দেখেন জুমচাষের পূর্বে আদিবাসীরা যেভাবে খেতে আগুন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে তেমনি বিরান হয়ে গেছে তার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের ঠোঁটের ওপরের জমি। অনেক কষ্টে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে তিনি হাসি আটকালেন। পল্টু স্কুল শেষে বাড়ি এসে শোনে কেল্লাফতে। মামা কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সে। নইলে এক্ষুণি হোম টাস্কের খাতা নিয়ে বসতে হতো। কালরাতে চুপিচুপি বড় বোনের লোমনাশক ভিট ক্রিম ভরে রেখেছিল সে মামার শখের মরগ্যানের কৌটায়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper