ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নামকরণ

মামুন রাশিদ
🕐 ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৫, ২০২১

নামকরণ

এক গ্রামে বাস করত এক মুরগি। সে ছিল যৌবনা রূপসী। তাই তার বিভিন্ন মোরগের সঙ্গে অগাধ মেলামেশা ছিল। বেশ কিছুদিন পর করকর করে ডাকা শুরু করল। এর মানে হচ্ছে তার পেটে ডিম এসেছে। করকর করার দ্বারা এদিকেই ইঙ্গিত বহন করে। তাই সে মুরগিটি ডিম পাড়ার জন্য একটা জায়গা নির্ধারণ করল। সেখানে সে প্রতিদিন একটা একটা করে ডিম পাড়ে। এভাবে সে দশটি ডিম পেরেছে।

প্রথমবার তো, তাই এর থেকে বেশি পাড়তে পারেনি। কেননা তার কয়েকজন বান্ধবী দশের কম পেরেছে। কেউ সাতটা আবার কেউ নয়টা বা আটটা। তাদের অনুযায়ী সে একটা হলেও বেশি পেড়েছে! তাইবা কম কীসে? একটা ডিম! যে পাড়ে সে বোঝে কতটুকু কষ্ট। ডিমটা পাড়তে গেলে পুরোটা শরীরই ঘেমে যায়। তাই এর কষ্টটা যে পেড়েছে সে ব্যতিত কেউ বুঝবে না। ডিম যেহেতু পাড়ার কাম শেষ তাই এখন কাজ হলো ডিমগুলোকে তা (ওম) দেওয়া। কিছুদিন পর ফুটফুটে বাচ্চা হবে। তাই সে ডিমগুলোকে তা দেওয়া শুরু করে দিল।

মাসখানেক তা দেওয়ার পর সুস্থতার সঙ্গে হৃষ্টপুষ্ট দশ দশটি বাচ্চাই ডিম ফোটে বের হলো। মা-মুরগি বাচ্চাগুলোকে নিয়ে মাঠে-ময়দানে যায় খাবারের খোঁজে, সেখানে ছোট দানা খুঁজে খুঁজে বের করে বাচ্চাগুলোকে দেয়। আর বাচ্চারা সেটা খাওয়ার জন্য হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দেয়। মাঝে-মধ্যে আবার মা মুরগিটি বাচ্চাগুলোকে নিয়ে রাস্তার পাশেও খেতে যায়। রাস্তার ওপর দিয়ে মানুষদের আনাগোনা থাকে সবসময়ই। মুরগির দশটা বাচ্চার মধ্যে একটা বাচ্চার স্বভাব চরিত্র অন্য নয়টা ছানা থেকে একটু অন্যরকম। তাই সেই ছানাটি তার স্বভাব অনুযায়ী মায়ের সঙ্গে অন্য ছানাদের মতো দানা না খেয়ে কান পেতে মানুষের আলাপ শুনছে।

একপর্যায়ে সে শুনতে পেল, একেকজন মানুষ একেকজনকে আলাদা আলাদা নামে ডাকে। ব্যাপারটা তার কাছে খুবই অবাক লাগল। কারণ তার দশটা ভাইবোনের মধ্যে কারও কোনো নাম নেই। এটা কেন? আমার জানতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই সে তৎক্ষণাৎ তার মাকে প্রশ্ন করে বসল- মানুষের জন্ম হলে তাদের নামকরণ করা হয়, কিন্তু আমাদের নামকরণ হয় না কেন?

মুরগির মা মনে মনে বলল, বজ্জাতটার প্রশ্নের এ কেমন ধরন? এটার বাপ নিশ্চয়ই ওই পাড়ার বদমাশটা। কারণ ওইটা এমন উল্টাপাল্টা, এলাকার কোনো যুবতী কিংবা বৃদ্ধা, এককথায় কোনো মুরগিই তার কাছে ভিড়তে চায় না। ওই বদমাশ মোরগটা সারাদিন বকবক করতেই থাকে। অযথা সবার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। আর ওই বদমাশটার মুখ কোনো সময়ের জন্য থেমে থাকে না।

আমি যে কেন ওর কাছে গিয়েছিলাম! আর আমারইবা কী দোষ! বদমাশটা আমাকে কেমনে জানি পটিয়ে ফেলেছে বুঝতেও পারিনি। কিন্তু আমি তো ওর সঙ্গে বেশিদিন থাকিনি। কয়েকদিন থেকে তারপর ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি।

তাহলে মনে হয় ওই কয়েকদিনের মধ্যেই ওই বদমাশটার থেকেই এই বাচ্চার ডিম আমার পেটে এসেছে। কিছুক্ষণ পুরনো দিনের কথাগুলো ভাবল। অতঃপর যখন তার পরিপূর্ণভাবে কল্পনার জগৎ থেকে সম্মোহন ফিরে এলো। তখন সে বাচ্চার উত্তর দিতে শুরু করল। মা মুরগিটি মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে বলল, ব্যাটা, আমাদের সমাজে নামকরণ হয় মরার পরে।

বাচ্চা আবার জিজ্ঞাসা করল- মা, মরার পরে কেন?
মা মুরগি বলল, কারণ মরার পরে আমাদের অনেক মূল্য হয়ে যায়। তখন মানুষ আমাদের অনেক মূল্যায়ন করে। এখন তো মাঠে বনে খেয়ে, না খেয়ে কোনোমতে দিনরাত কষ্টে পার করি। মরার পরে বড় বড় ফাইভ স্টার হোটেলে থাকি সেখানে আমাদের উন্নতমানের জায়গা দেওয়া হয়। তখন আমাদের জানো কী কী নামকরণ করা হয়?
বাচ্চা বলল, না মা।
চুপ করে শোনো। আমাদের নামকরণ হয়- চিকেন তান্দুরি, চিকেন বিরিয়ানি, চিকেন পাকোড়া, চিকেন চিলি, চিকেন টিক্কা... ইত্যাদি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper