ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রবাদ পুরুষ

জামসেদুর রহমান সজীব
🕐 ১২:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৫, ২০২১

প্রবাদ পুরুষ

জীবনে অসংখ্যবার গণধোলাই খাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছি। একবারও নিজের দোষে না। দোষ প্রতিবার একজনই করে, সালাম ভাই। কথা কম বলেন, কিন্তু স্বভাবে ঠোঁটকাটা। মনে যা আসে তাই বলেন। আবার এমনও না যে খারাপ কথা বলেন। সবসময় ভালো ও উচিত কথাই বলেন। তবে সমস্যা হলো, সোজাভাবে না বলে প্রবাদ ব্যবহার করেন। এখানেই প্যাঁচটা লাগে। যে কথা মানুষ বোঝে না, সে কথা সবাই খারাপভাবেই নেয়।

গত সপ্তাহের কথাই ধরেন। সালাম ভাইকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াতে গেছি। সেখানে একজন বয়স্ক ব্যক্তি তার মায়ের মৃত্যু নিয়ে কথা বলছিল। সালাম ভাই খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। ব্যক্তিটি কথার মাঝখানে কেঁদে দিলে সালাম ভাই এগিয়ে গিয়ে বললেন, ‘কীসের মাসি, কীসের পিসি, কীসের বৃন্দাবন; মরা গাছে ফুল ফুটেছে, মা বড় ধন।’ আমি জানি সালাম ভাই ভালো কিছু বলেছেন। কিন্তু কী বলেছেন কিচ্ছু বুঝিনি। এমনকি আশপাশের কেউই বোঝেনি। মুশকিল হলো যখন বয়স্ক ব্যক্তিটি রেগে গেলেন। তিনি বেশ ধার্মিক লোক। তার মায়ের প্রসঙ্গে কেন মাসি-পিসি বৃন্দাবন টানা হলো এটা নিয়ে খুব চটলেন!

সালাম ভাইকে পাঁজাকোলা করে সাইড হয়ে গেলাম। তাকে নিয়ে সোজা খেতে বসলাম। খাবার পরিবেশন হলো। কিছুক্ষণ পর খাওয়ার মাঝখানে মোটামুটি সকলেই আবিষ্কার করলাম মাংসটা রান্নার সময় পুড়ে গেছে। স্বাদ ও গন্ধে কেমন জানি পোড়া পোড়া ভাব। এমন সময় বাড়ির কর্তা এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? কেউ কিন্তু লজ্জা করবেন না। পেটভরে খান।’

তখন একজন বলে বসল, ‘ভাই সাহেব, মাংসটা বুঝি পুড়ে গেছে।’ উত্তরে বাড়ির কর্তা জানালেন, ‘আরে না না। মাংস পোড়েনি। পাশে রান্না হচ্ছে তো, চুলার ধোঁয়াতে হয়তো এমন মনে হচ্ছে।’ এই বলে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে সালাম ভাই ডেকে থামালেন। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই বলে ফেললেন, ‘ছুঁচো যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে!’ শুনে বাড়ির কর্তার মুখ কালো হয়ে গেল। আর আমি পারলে মাটি খুঁড়ে ভিতরে ঢুকে যাই। ঘটনা এখানে শেষ হলেও হতো। কিন্তু সালাম ভাইয়ের পাশেরজন খাবার অবশিষ্ট রেখে উঠে যাচ্ছিল দেখে তাকে থামিলে বললেন, ‘একদিন করে মজা, ছ’মাস খাবি ঝিঙে ভাজা।’ কথাটি বরাবরের মতো মাথার ওপর দিয়ে গেলেও এটুকু আইডিয়া করলাম যে অনর্থক অপচয় নিয়ে কিছু বলেছেন।

বলাই বাহুল্য, সালাম ভাইয়ের এসকল প্রবাদ প্রবচন শুনে কেউ সন্তুষ্ট হয় না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে মানুষজন মারমুখী হয়ে ওঠে। তার এই স্বভাবের কারণে পরিচিত মহলে তিনি প্রবাদ পুরুষ নাম পেয়েছেন। কথা বলার সময় কোনো রাখঢাক করেন না। এমনকি ব্যক্তি, পরিবেশ বা কোনোকিছুর ধার ধারেন না কখনো। সেদিন এক বন্ধু এসে জানাল, মনের মতো মেয়ে না পেয়েও বিয়ে করতে হয়েছে। সালাম ভাই টপ করে বলে দিলেন, ‘আম না থাকলে আমড়া চোষে।’ যার অর্থ দাঁড়ায় ভালো কিছু না পেলে যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কিন্তু বন্ধু সেটা বুঝল কিনা বোঝা গেল না। কিছুটা ইতস্তত বোধ করে চলে গেল। সে চলে যাওয়ার পর তার পোশাক-আশাক নিয়েও মন্তব্য করল সালাম ভাই। বলল, ‘চাল নেই ধান নেই গোলা ভরা ইন্দুর; ভাতার নেই, পুত নেই, কপাল ভরা সিন্দুর।’ বলে রাখা ভালো, বিয়ের পর বন্ধুটির সাজ-পোশাকে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়।

এর মাঝেই হঠাৎ একদিন সালাম ভাইয়ের বউ কল দিয়ে জানাল, তাদের মাঝে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে। অভিমানে নাওয়াখাওয়া ছেড়েছেন সালাম ভাই। আমরা দল বেঁধে ছুটলাম। ভাবি এটা-সেটা নানান কিছু বলে আক্ষেপ করলেন। তারপর আমাদের জন্য চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে গেলেন। আমরা সালাম ভাইকে ঘিরে গোল হয়ে বসলাম। বোঝালাম অভিমান করে থাকবেন না। ভাবির রূপের প্রশংসা টেনে বলা হলো, এমন বউ ক’জনার হয়। তিনি ছোট করে জবাব দিলেন, ‘রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি।’ কপাল দেখেন, পাশ থেকে ভাবি সেটা শুনে ফেললেন। এসে বাঁধিয়ে নিলেন ঝগড়া। আমরা বহুকষ্টে সেই ঝগড়া থামালাম।

পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ার পর সবাই বেরিয়ে আসব এমন সময় সালাম ভাই কানের কাছে এসে তার বউয়ের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘ভিতরে যদি সার না থাকে, কিল গুঁতায় কি কাঁঠাল পাকে।’ আমি কোনো রকমে মাথা এদিক সেদিক দুলিয়ে চলে এলাম। এ জীবনে বহু কিছু জেনেছি বুঝেছি। কিন্তু সালাম ভাইয়ের প্রবাদ বুঝতে গিয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে। সেগুলো জানার প্রতি এখন আর আগ্রহ খুঁজে পাই না।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper