বানানের খাতা
গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
ভুল হবেই। ন্যাড়া বেল মাথায় বেল তলায় যাবেই। অবশেষে কূলহীনরা একদিন কূল পাবে। সময় যাবে শিক্ষা পাবে। দেদার আলি অন্যেরটা দেখে বারো ক্লাস পাসের শিক্ষিত। তবে গাল-গপ্প মুখস্থ। বারো ক্লাস পাস। বেসরকারি চাকরির আশ্বাস। পেয়েছেনও তাই। এবার বিয়ে কে ঠেকায়। বাবা-মা এক ঘরোয়া ঘোরলাগা অনুষ্ঠানে, বিয়ে দিলেন মিথ্যে বচনে। স্ত্রী ভাবনা। জ্ঞান নেই কিন্তু বুদ্ধি আছে কিছু দানা। একদিন সন্তানের জন্ম দেন উনারা। ছেলেটার চেহারা গোরা। ভাবনা স্বামীকে একদিন বলেন রাতে, বুদ্ধির সঙ্গে- ‘সন্তানকে পড়াতে হবে তোমাকে। শুনেছি পাস দিয়েছ থেকে থেকে।’ দেদার স্ত্রীর কথায়, মন খুলে কথা কয়- ‘আমি পাস দিইনি, পাসই আমাকে দিয়েছে। বোঝোনি?’ দেদার কথা বলে মিহি সুরে, ভাবনাও বুঝল ধীরে ধীরে। স্বামী তার এক দেশের সম্পদ। ছেলেটাও হবে শিক্ষিত বাম্পার।
দেদার সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে। সন্ধ্যার আগে আসে মুখে কুলুপ এঁটে। প্রতিদিন রাতে ছেলেকে পড়ায়। সময়ের সঙ্গে প্রাণপণ দৌড়ায়। ছেলে সেফাতুল্লাহ। পড়তে বসলেই ভাবাতুল্লাহ। বাবাকে বলে- ‘বাবা, আমাকে লেখা শেখাও। বানান দেখাও। ম্যাডাম বলেছে, হাতের লেখা নিয়ে যেতে সহজে।’ ছেলের কথা শুনে, মুখ তুলে গুণগানে। ‘ঠিক আছে বাবা লেখা লেখো, তোমার খাতা দাও, দেখো।’ বলেই লিখলেন একলাইন, যেন করছেন সাইন- ‘লেখাপুরা কড়ে যে গারি ঘুরা চরে সে।’
আবার থামেন আবার লেখেন। মণ দিয়ে লেখাপুরা করবা। ভূল পথে চলবে না।’ এবার ছেলেকে বললেন, ‘বাবা যা লিখে দিলাম তাই লেখো। কাল তোমার ম্যাডামকে দেখাইও। পরদিন সকালে। সেফাতুল্লাহ বগল বাজাতে বাজাতে যায় স্কুলে। ক্লাসের শুরুতে, ম্যাডাম খাতা থাকেন দেখতে। সেফাতুল্লাহ থাকে খরগোশের মতো কান খাড়া করে। ম্যাডাম কখন ডাকবে আর তখনি দৌড়ানি দেবে ‘জি’ স্বরে। ম্যাডাম ডাকলেন। বললেন, ‘এসব কে লিখে দিয়েছে তোমায়? বানানে দুর্বল বেজায়।’
সেফাতুল্লাহর মন খারাপ। ভেবেছিল ম্যাডাম করবে ভালোর আলাপ। না, তা আর হলো না। বাবাকে বলবে ষোল আনা। দেদার এসেছেন সন্ধ্যা হয়েছে। দেদারকে দেখে মনে হয় হালে পানি শেষ হয়েছে। সেফাতুল্লাহ বলল, ‘বাবা, আসো তাড়াতড়ি আসো। ম্যাডাম তোমাকে খাতাটা দেখতে বলেছে। তারপর আবার আমায় লিখতে বলেছে।’ দেদার দেখেন সে খাতা। জানা হয়নি বানানের অনেক পাতা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228