ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জাদুর গাড়ি

হেলাল নিরব
🕐 ৩:২৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৩, ২০২০

গাড়িতে উঠতেই আনিসের নাকে দারুণ একটা সুগন্ধ ঠেকল। মিষ্টি একটা আবেশ ছড়িয়ে আছে ভিতরটায়। মনোরম আলোটা গাড়ির বগিটাকে আরও বেশি অদ্ভুত সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। লোকজন খুব একটা নেই। আনিস হেডফোনটা কানে গুঁজে সামনের দিকে একটা সিটে বসে পড়ে। হঠাৎ শীত শীত লাগায় যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে নেয় সে। তাতেও গাড়িটার ঠা-া কমে না। অগত্যা রিমোট নিয়ে গাড়ির বগিটার টেম্পারেচার বাড়িয়ে নিয়ে আরাম করে বসে আনিস।

আনিসের সঙ্গে কোনো ওয়ালেট নেই। শুধু চারটা কার্ড। আর সে কারণেই সমস্যাটা বাঁধল। ভাড়া দিতে গিয়ে খেয়াল হলো একটা কার্ডও কাজ করছে না। সর্বোচ্চ তিনটা কার্ড পাঞ্চের নিয়ম ভেঙে চতুর্থ কার্ডটা পাঞ্চ করতেই পু পু... আওয়াজ করে স্কিনে লাল বাতি জ্বলে উঠল। স্পিকারে একটা সুকণ্ঠী ইংরেজিতে বলে চলল, ‘আপনার হাত ওপরে তুলুন। আইন হাতে তুলে নিবেন না!’ আনিস তৎক্ষণাৎ দুহাত মাথার ওপর তুলে দাঁড়াতেই চারজন পুলিশ ছুটে এসে তাকে ঘিরে ধরল। অফিসার টাইপের একজন জানতে চাইল তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।

আনিস লজ্জিত বোধ করতে লাগল। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, দেখুন আমার কার্ডগুলো কাজ করছে না! ভাড়া দিতে হবে কিন্তু আমি ওয়ালেট আনি নাই। এখন ভাড়া মেটানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।

সর্বোচ্চ ব্যাজধারী পুলিশটা এবার মৃদু হাসল। একটু কাশল। এরপরে মিনমিনে গলায় অনুরোধ করে বলল, যদি কিছু মনে না করেন স্যার, আমি আপনার ভাড়াটা মিটিয়ে দেব। পুলিশ তো জনগণের জন্যই স্যার। ভাড়াটা দেব কি?

আনিস বেশ খুশি হলো। বাংলাদেশের পুলিশের এমন ব্যবহার একসময় কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সে পুলিশ অফিসারের পিঠ চাপড়ে জানাল, ভাড়া মেটানোর দরকার নেই ভাই। আমি আজকের ভাড়াটা ডিউ রেখে যাব। কাল যখন ফিরব তখন মিটিয়ে দেব। আপনাকে ধন্যবাদ।

পুলিশগুলো চলে যেতেই এক সুন্দরী কফি নিয়ে এসে জানতে চাইল, খাবে কিনা। আনিস একটা হট কফি নিল। ইদানীং সে ঢাকার সাধারণ জনগণের গাড়িটা ব্যবহার করে যাতায়াত করে। গাড়িটার নাম দিয়েছে জাদুর গাড়ি। সম্পূর্ণ ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়িটি আব্দুল্লাহপুর থেকে পনের মিনিটেই মতিঝিল পৌঁছে যায়। আনিসের গন্তব্য চলে এলো। সে ব্যাগ কাঁধে চড়িয়ে দরজার সামনে দাঁড়াতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজাটা খুলে গেল।

গাড়ি থেকে নামতেই একটা অতি গরম আবহে ধাক্কা লাগল আনিসের। সাঁই করে তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল একটা সিএনজি। ভয় পেয়ে বুকে থুতু ছিটাল আনিস। চারদিকে গোলমাল, লোকের প্রচণ্ড ভিড়। দূরে একটা ট্রাফিক সার্জেন্ট আড়চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

পাশেই একটা জটলা, কয়েকজন মিলে একজন মানুষকে মারছে। আনিস সেদিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ তার নাকে একটা ঝাঁজালো গন্ধ ঠেকল। অনেকটা মুরগির মাংস কষালে বাতাসে যেমন গন্ধ ছড়ায়। আনিস চোখ খুলে তাকাতেই দেখে রুমের ফ্যানটা ঘুরছে না। রান্নাঘরের দরজা হাট করে খোলা। বুয়া দুপুরের রান্না করছে! গন্ধটা সেখান থেকেই আসছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper