রচনাকাণ্ড
বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ১:১১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
বিয়ে পর্ব.
রচনার বিয়ে হয়ে গেল। শাশুড়ি বললেন, ‘আমার তো কোনো মেয়ে নেই। আজ থেকে তুমিই আমার মেয়ে। এখন থেকে তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে।’
রাতে কাজ সেরে রচনার বর বাসায় এসে দরজায় নক করল।
রচনা দরজা খুলতে গেল।
শাশুড়ি চেঁচিয়ে জানতে চাইলেন, ‘কে এসেছে?’
রচনা বলল, ‘মা, দাদা এসেছে।’
রান্না পর্ব.
‘হ্যাঁ গো, তোমার সঙ্গে বিয়ে করে আমার হাতের কী দশা হয়েছে দেখেছ?’ স্বামীর কাছে অভিযোগ করল রচনা।
‘কী হয়েছে?’ মদন জানতে চাইল।
‘বাসন ধুয়ে ধুয়ে হাত ক্ষয়ে গেল আমার। বাপের বাড়িতে জীবনেও বাসন ধুইনি। আর আজ?’
‘দুঃখ করো না। বিয়ের পর সবাইকেই এক-আধটু বাসন ধুতেই হয়। তুমি এক কাজ কর। হাতে গ্লাভস পরে বাসন ধোবে।’
কয়েক দিন পর।
দুপুরে খাওয়ার সময় ওয়াক থু বলে কিছু একটা ফেলল মদন।
‘কীভাবে যে মাংস সিদ্ধ করো, রাবারের মতো লাগছে। সামান্য মাংস রান্না করতে পারো না?’
‘ওটা মাংস নয়। হাতে গ্লাভস পরে মশলা বাটছিলাম। সেটাই ছিঁড়ে একটুকরো বাটা মশলার মধ্যে পড়ে গেছে। তখন খুঁজে পাইনি। সেটাই তুমি মাংস মনে করে এতক্ষণ চিবুচ্ছিলে, বুঝেছ?’
মাছ পর্ব.
‘ওমা! এত বড় মাছ! কত নিল গো?’
রচনা বলল।
বাজার থেকে বড় একটা মাছ নিয়ে এইমাত্র ঘরে ঢুকেছে মদন।
‘দুই।’ কম কথার মানুষ সে। কাজেরও। ঝটপট আবার বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। দোকানের উদ্দেশে। বলে গেল, ‘দুপুরে মাছ রান্না করো। আমি আসব।’
মাঝে মাঝে দুপুরে বাসায় খায় না সে। তাই আগেই বলে গেল।
দুপুরে খেতে বসে মদন অবাক। মাছ নেই!
‘মাছ কই? রান্না করোনি?’
‘শোনো। রাগ করো না। পাশের বাসার কাকিমাদের বাসায় জামাই এসেছে। তখন ওদের বাসায় বাজার করার কেউ ছিল না। তাই আমাদের মাছটি ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।’
ভাত খাওয়া বন্ধ করে থম মেরে বসে রইল মদন।
‘কত দিয়ে বিক্রি করেছ?’ অনেক কষ্টে রাগ চেপে জানতে চাইল সে।
‘তিনশ। একশ টাকা লাভ করেছি।’ ঝলমল হাসিমুখে বলল রচনা।
‘এত বড় মাছের দাম কি দুইশ হতে পারে? তোমার বাবার বাসায় কি বড় মাছ খেতে না?’ রাগে ফেটে পড়ল মদন।
‘বড় মাছ তো আমাদের বাসায় প্রায়ই রান্না হত। বাবা উপজেলার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছিলেন। বাসায় প্রায়ই কেউ না কেউ মাছ দিয়ে যেত।’
‘ঘুষের মাছ?’
‘ঘুষ কেন হবে! ওরা বাবাকে গিফট দিত।’
‘তাই! তাহলে বল, এমন বড় একটা গিফটের মাছের দাম বাজারে কত হতে পারে?’
‘বললাম তো জানি না। বলো না, মাছটা কত দিয়ে কিনেছিলে। সকালে তুমিই তো বললে মাছের দাম দুইশ।’
‘দুই বলেছিলাম। দুইশ না।’
‘মানে?’
‘মাছটা দুই হাজার টাকায় কিনেছিলাম, বুঝেছ?’
মার্কেটিং পর্ব
রচনা রান্নাঘরে কাজ করছিল।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল।
রচনা ধরল।
‘হ্যালো।’
‘হেঁসলে থেকে বলছি।’ পুরুষ কণ্ঠ বলল।
‘হেঁসেলেই তো খেটে মরছি আমি। আপনি আবার কোন হেঁসেল থেকে বলছেন?’
‘স্যরি আপা, আপনি বুঝতে ভুল করেছেন। আমি হেঁসলে কোম্পানি থেকে বলছি। আমাদের কোম্পানির কিছু প্রডাক্ট নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।’
‘কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন। আমার হাতে সময় নেই।’
‘আমিও বেশি সময় নেব না আপা। কিছু প্রডাক্ট রয়েছে যেগুলো আপনি চাইলে আমাদের প্রতিনিধি আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। করোনাকালে এটা আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা।’
‘ও। তা আপনারা কি কাজের বুয়া পাঠাতে পারবেন?’
‘না।’
‘আমাদের টিউবওয়েল খারাপ হয়ে আছে। মিস্ত্রি পাঠাতে পারবেন?’
‘না।’
‘তাহলে কী পাঠাতে পারবেন?’
‘আপনি বোধহয় হেসলে কোম্পানির নাম শোনেননি! আমরা মূলত বেবি ফুড উৎপাদন করি।’
‘আমাদের তো কোনো বেবিই নাই।’ প্রায় চিৎকার করে বলল রচনা।
‘ওকে। সেক্ষেত্রে আপনি আমাদের নুডলস খেয়ে দেখতে পারেন।’
‘নুডলস তো আমি খাই-ই না। কী চেহারা! দেখলেই জোঁক জোঁক মনে হয়।’
‘একবার খেয়ে দেখুন। খুব টেস্টি।’
‘এত করে যখন বলছেন, দ্যান খেয়ে দেখি।’
রচনা অনিচ্ছার সুরে বলল।
‘কতগুলো পাঠাব? আর আপনার ঠিকানা?’
‘কত আর পাঠাবেন? ফ্রি-ই যখন পাঠাবেন দিয়েন আপনার ইচ্ছেমতো। কল যখন করেছেন, তখন ঠিকানা তো জানেনইÑ দিনাজপুর।’
‘ইয়ে... আপা, ঘরে ঘরে পণ্য বিক্রির এই ব্যবস্থা শুধু ঢাকা আর চট্টগ্রামের জন্য। স্যরি।’
লাইন কেটে দিল লোকটা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228