ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চুকুমবুদাই

আরাফাত শাহীন
🕐 ১:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০

উস্তাদ সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘পঞ্চতন্ত্র’ পড়তে গিয়ে চুকুমবুদাই শব্দটির সঙ্গে আমার পরিচয়। শব্দটি আমার মধ্যে দারুণ এক রসাত্মক আবহের সৃষ্টি করে। মুজতবা আলী দারুণ একটা গল্পও আমাদের শুনিয়েছেন এক চুকুমবুদাইকে নিয়ে। আসুন, গল্পটি আগে শুনে নিই।

পূর্ববাংলার এক ‘চুকুমবুদাই’, অর্থাৎ এদিকে মুখচোরা ওদিকে চটে যায় ক্ষণে ক্ষণে, এসেছে কলকাতায়। গেছে বেগুন কিনতে। দোকানিকে বলল, ‘দাও তো হে, এক সের বাইগন।’

দোকানি পশ্চিমবাংলার লোক। বেগুনের উচ্চারণ ‘বাইগন’ শুনে সে গর্বের হাসি হেসে বলল, ‘কী বললে হে জিনিসটার নাম?’

লোকটি এবার বেজায় চটে গেল। উচ্চারণ নিয়ে এভাবে মশকরা করার মানে কী? রাস্তায় বিস্তর লোকজন জমে গেছে। লোকটি তেড়েমেড়ে বলল, ‘বাইগন কইছি তো বেশ কইছি, হইছে কী?’

দোকানি আরেক দফা গর্বিত হয়ে বলল, ‘ছ্যা বাইগন বাইগন। দেখ দিকিনি আমাদের শব্দটা কীরকম মিষ্টি- বেগুন, বেগুন।’

লোকটি বলল, ‘মিষ্টি নামই যদি রাখবা, তবে “প্রাণনাথ” ডাকলেই পারো। দাও, তবে এক সের প্রাণনাথ। প্রাণনাথের সের কত? ছ’পয়সা না সাত পয়সা?’

এবার আমার এক বন্ধুর গল্প শোনানো যাক। মাহবুব একদিকে যেমন আমার বন্ধু তেমনি আমরা থাকিও একই রুমে। সেই হিসেবে আমরা পরস্পরকে মোটামুটি ভালোই বুঝি। ভাষা নিয়ে মাহবুবেরও খানিকটা জড়তা রয়েছে। আমি সুযোগ পেলেই তাকে ক্ষ্যাপাতে ছাড়ি না। আর মাহবুবও এক চিজ। সামান্যতেই রেগে কাঁই হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একবার আমাদের রুম পরিষ্কার করার দরকার হলো। নিজেদের রুম নিজেদেরই পরিষ্কার করা লাগে, কাজের লোক রেখে আবার বাড়তি টাকা গুনবে কে! ফ্লোর পরিষ্কার করতে গিয়ে টেবিলের এক কোনা ধরে মাহবুব আমাকে বলল, ‘আলগি দাও।’

আমি খানিকক্ষণ হাবার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। ও আবার বলল, ‘আরে ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আলগি দাও।’

আমি তো ভাষাই বুঝতে পারছি না; তার আলগি দেব কী! মাহবুব একেবারে বোকা নয়। এবার হেসে বলল, ‘আরে টেবিলটা উঁচু করে ধরো।’

আমি একটু খোঁচা মারার জন্য বললাম, ‘তা সহজ কথাটা বাংলার না বলে কী আজগুবি ভাষায় বলছ!’

মাহবুবের শান্ত মুখটা হঠাৎ করেই ঝড় ওঠা সমুদ্রের মতো অশান্ত হয়ে উঠল। ও চিৎকার দিয়ে বলল, ‘কী বললে- আজগুবি ভাষা, না! তোমার ভাষাই তো আজগুবি। আমি যেটা বলি সেটাই হলো শুদ্ধ ভাষা।’

আমি অনুচ্চস্বরে বললাম, ‘চুকুমবুদাই’।

‘কী বললে তুমি! গালি দিলে নাকি আমাকে?’ বুনো ষাঁড়ের মতো ক্ষেপে উঠেছে মাহবুব। আমি মানে মানে কেটে পড়াটাকেই শাস্ত্রসম্মত মনে করলাম। এর অর্থ জানলে ও আর আমাকে আস্ত রাখবে না!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper