কমলাকান্ত থেকে করোনা আক্রান্ত
গাজী ফরহাদ
🕐 ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
আমার বন্ধু কমলাকান্ত, কয়েক বছর ধরে তারা আমাদের এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। কমলাকান্ত মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যায়, অনেক ভালো একটা ছেলে। কথা বলা, আড্ডা দেওয়া, খেলাধুলা করার মাঝে আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে আপন হয়ে যায়। কমলাকান্তের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন।
বাবা একজন ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী, তার ছোট বোন একটি মাধ্যমিক স্কুলে পড়ালেখা করে, কমলাকান্ত বেকার। তার বাবা চিন্তাভাবনা করছেন তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন, দেশে কমলাকান্তকে দিয়ে কিছু হবে না। আমরাও সম্মতি জানালাম। সকাল বেলা দোকানে বসে চা খাচ্ছি, কমলাকান্ত শার্ট-প্যান্ট পরে কোথাও যাচ্ছে।
‘কমলাকান্ত, কোথায় যাবি নাকি?’
‘হ্যাঁ বন্ধু। পাসপোর্ট করতে যাচ্ছি।’
‘ও ভালো। ঠিক আছে বন্ধু। দেশে থেকে কিছু করতে পারবি বলে মনে হয় না। বিদেশই ভালো। পাসপোর্ট কাকে দিয়ে করাবি? পরিচিত কেউ আছে?’
‘একজন দালাল পেয়েছি। ২৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেবে বলেছে।’
কমলাকান্ত চলে গিয়েছে পাসপোর্ট করতে, এদিকে উপরে তাকে সাপোর্ট দিলেও মনে মনে কষ্ট হচ্ছে, কমলাকান্ত বিদেশ চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব। তেমন আড্ডা দেওয়া ও হবে না।
পরদিন আড্ডা দিলাম, পাসপোর্ট কীভাবে করল, কাহিনি শুনলাম। আড্ডা, গল্প, খেলাধুলা করতে করতে ২৫ দিন শেষ।
‘কি রে কমলাকান্ত কোথায় যাচ্ছিস?’
‘পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হবে বন্ধু।’
বিকালে কমলাকান্তের সঙ্গে খেলার মাঠে দেখা।
‘পাসপোর্ট নিয়ে এলি কখন?’
‘আজকে দেবে না। আরও ১০ দিন লাগবে।’
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের আক্রমণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বাইরে বের হতে পারছি না, বের হলেই পুলিশের মার, পুলিশ না মারলে সেনাবাহিনীর মার। কারও মার মিস হয় না। ভয়ে প্রায় ১ মাস ১৫ দিন ঘরের ভিতরে ছিলাম। টয়লেটে যাওয়ার জন্য শুধু ঘরের বাইরে যেতাম এছাড়া আর বাইরে যাওয়া হতো না। ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত। করোনাভাইরাসের অবস্থা একটু স্বাভাবিক হওয়ায় ১ মাস ১৫ দিন পর ঘর থেকে বের হলাম।
দোকানে বসে চা খাচ্ছি, দেখলাম কমলাকান্ত মন খারাপ করে ধীরে ধীরে হাঁটাহাঁটি করছে।
‘কমলাকান্ত, এদিকে আয়। মন খারাপ কেন? এখনো পাসপোর্ট আসেনি?’
‘পাসপোর্ট এসেছে।’
‘আমাদের ছেড়ে চলে যাবি সে জন্য মন খারাপ? চিন্তা করিস না, একবারে তো আর যাচ্ছিস না, আবার কয়েক বছর পর আসবি।’
‘পাসপোর্টে গ-গোল লেগে গেছে! দালালকে ভালোভাবে আমার নাম ঠিকানা সব লিখে দিলাম, কিন্তু আমার নামের জায়গায় কমলাকান্ত না লিখে করোনা আক্রান্ত লিখে রাখছে। এখন কী করব? কিছু বুঝতে পারছি না। দালাল আমার এখন কল ধরে না। এজেন্সিতে যদি পাসপোর্ট নিয়ে যাই তারা অফিস রেখে দৌড় পালাবে।’
‘আকাশভরা তারা গণনা করা ছাড়া আর উপায় নেই!’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228