ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জব্দ

শফিক শাহরিয়ার
🕐 ১:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০

আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের কথা। তখন এখনকার মতো বাড়ি বাড়ি টিভি, সিডি বা মোবাইল ছিল না। পাড়ার দু-একজনের বাড়িতে শুধু টিভি ছিল। এমনকি ডিশেরও লাইন ছিল না। লোকজন বিটিভি আর একুশে টিভি দেখত। বিটিভিতে প্রতি শুক্রবার বাংলা ছবি হতো। একুশে টিভিতে ছবি হতো শুক্র ও শনিবার। এলাকার সবাই দেখার জন্য ব্যাকুল ছিল। টিভিওয়ালাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে জায়গা সঙ্কুলান হতো না। কেউ কেউ নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ঘরের দরজা আটকে রাখে। যাতে অন্য কেউ প্রবেশ করতে না পারে। প্রচ- বিরক্ত হলে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করত।

পাড়ায় পাড়ায় ছোট বড় সবাই একসঙ্গে সিডি দেখার প্রবল আগ্রহ ছিল। এ জন্য তারা চাঁদা তুলে টাকা জমা করত। এরপর বাজার থেকে সিডি ভাড়া করে আনে। সিডি চলত বড় ব্যাটারির সাহায্যে। পছন্দের ছবিগুলো দেখত। এভাবে অনেকেই সারারাত কাটিয়ে দেয়। কেউ কেউ দু-একটি ছবি দেখে বাড়ি চলে যায়। বয়স্ক লোকরাও বাদ ছিল না। তাদেরও মনে অনেক আমোদ-ফুর্তি ছিল। কোনো কোনো পাড়ায় রোজ সিডি ভাড়া করে আনে। নির্দিষ্ট কারও বাড়িতে ছবি দেখে। অন্য কেউ দেখতে গেলে প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় প্রবেশের অনুমতি নেই।

একদিন রাতে মন্টু ও ঝন্টু এক পাড়ায় সিডি দেখতে গেল। সেদিন খুব ভালো ছবি হবে। ওদের ইচ্ছে ছিল টাকা ছাড়াই প্রবেশ করবে। কেউ বাধা দিলে অঘটন হবে। এই বলে তারা একটা বাড়ির দরজায় টোকা দিল। কয়েকজন ছেলে এল। ওরা কিছুতেই টাকা ছাড়া প্রবেশ করতে দেবে না। মন্টু-ঝন্টু দুজনই নাছোড়বান্দা। তবুও নিরাশ। তাদের ফিরিয়ে দিল। দীর্ঘক্ষণ তর্ক-বিতর্ক চলল। অবশেষে বাড়ি ফিরে এলো।

সেদিন রাতে গোপনে বসে তারা এক মজার ফন্দি বের করে। ভাবল, আজ উচিত শিক্ষা দেবে। যাতে আর কারও কাছে টাকা না চায়। ফ্রি দেখালে দেখাবে। না হয় সিডি আনবে না। ওদের সঙ্গে পাড়ার আরও কিছু দুষ্টু ছেলে যোগ দিল। যে বাড়িতে সিডি হচ্ছে, সে বাড়ি লক্ষ্য থাকবে। ওরা লুকিয়ে লুকিয়ে মাটির ছোট বড় ঢেলা, পচা ডিম, নোংরা পানি ইত্যাদি ছুড়ে মারবে। আর সেই বাড়ির দরজার সামনে পানি ঢেলে মাটি কাদা করবে। কেউ বের হলে পিছলে পড়ে যাবে। তখন মাঝরাত। আকাশও ঘনকালো অন্ধকার। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না। টর্চ লাইট ছাড়া অন্ধকারে চলাচল খুব মুশকিল।

যেই ভাবা সেই কাজ। কিছুক্ষণ পর সিনেমাপ্রেমী লোকজন উচ্চস্বরে চেঁচামেচি শুরু করল। সিডি বন্ধ করে দিল। সবাই বাইরে এলো। দরজা খুলতে না খুলতেই কেউ কেউ পিছলে পড়ে যায়। সারা গা কাদায় মাখামাখি। কাউকে ধরতে পারল না। মন্টু-ঝন্টুর দল পালিয়ে গেল। পরদিন সকালে গাঁয়ে সালিশ। মাতব্বরের বাড়ির উঠানে সবাই উপস্থিত হলো। কেউই অপরাধ স্বীকার করল না। সালিশ সেদিন আর মালিশ হলো না। অপরাধীকে কেউ শনাক্ত করতে পারল না। মন্টু-পিন্টুর দল লোকদের মাঝে থেকেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করল। সালিশ শেষে সবাই চলে গেল। ওরা আওয়াজ ছাড়া হাসছে। ভাবল, দারুণ জব্দ করেছি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper