ছেলেধরা
শিমুল শাহিন
🕐 ১:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০
বড় আপা উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাবেন একটা ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে। আমার ওপরে দায়িত্ব পড়েছে পিচ্চি ভাগ্নেটাকে সারাদিন সামলে রাখার। বাচ্চাকাচ্চারা আমার কাছে এমনিতেই খুবই ভয়ঙ্কর, রীতিমতো উপদ্রব মনে হয়! তার ওপর সে বাচ্চা যদি আমার ভাগ্নের মতো ত্যাঁদড় হয় তবে ষোলকলা পূর্ণ! হাজার রকমের দুষ্টুমি, হরেক রকমের আবদার দিয়ে জীবনটা ত্রাহি ত্রাহি করে দিতে তার জুড়ি মেলা ভার! সারাদিন ধরে ওর অত্যাচার আর নানান যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে ভাবতেই দুশ্চিন্তায় রীতিমতো কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হতে লাগল!
আপু বাসা থেকে বের হয়ে যেতেই ভাগ্নে শিহাব রিমোট হাতে নিয়ে কার্টুন দেখতে বসল, ওঠার নাম-কথা নেই! রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ায় জার্মানি-স্পেন ফুটবল ম্যাচটা দেখা হয়নি, হাইলাইটসটা দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। মোবাইল ফোনে নেট শেষ তাই ইউটিউবে ঢুকতেও পারছি না, আবার ওর কার্টুন দেখার জন্য টিভিতেও খেলাটা দেখতে পারছি না! দুপুরে মেরে ধরেও ওকে কিছুই খাওয়ানো গেল না! ধমকিয়ে একটু পড়াতে বসাতে চাইলাম সেটাতেও ব্যর্থ হলাম! বেলা গড়াতেই হঠাৎ করে বায়না ধরল চটপটি খাবে! আমি জানি, ও যে কথা একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছে তা মেটাতেই হবে! উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ বের হতে হল!
বাজারের দোকানে দু’বাটি চটপটি অর্ডার করে একটা শলাকায় আগুন ধরালাম বেশ আয়েশ করে! হঠাৎ দেখলাম ভাগ্নে লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সামনের খেলনার দোকানটার দিকে! খেলনাগুলোর দিকে ভাগ্নের অমন চাহনি দেখেই মুখ দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বের হল দুটো শব্দ, ‘খাইসে আমারে’! আমি দ্বিগুণ গতিতে ঘামতে শুরু করেছি, কারণ ভাগ্নে খেলনা কেনার বায়না ধরলে একদম রামধরা খেয়ে যাব! পকেটে যে টাকা নেই সেটা না, তবে যেটা আছে তা টুম্পার বার্থডে গিফট কেনার জন্য জমিয়ে রেখেছি! যা ভাবলাম তাই হল! ভাগ্নে আমার শার্টের হাতা টানতে টানতে বলল, ‘মামা, চটপটি খাব না!’ জোরাল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন খাবে না? অর্ডার দিয়ে ফেলেছি তো!’
শিহাব অনেকটা গোঁ ধরে বলল, ‘খাব না বলেছি, খাব না!’
রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, ‘আচ্ছা খেও না। আমিই খেয়ে নেব!’
এবার ও আসল কথায় এল। বলল, ‘তুমি ওই বড় বন্দুকটা কিনে দাও!’ আবারও অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম, ‘খাইসে!’
বন্দুকটার দিকে তাকিয়ে দাম আন্দাজ করে দেখলাম, কমসে কম হাজার দুয়েকের কম হবে না! কী করে এ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তা না বুঝতে পেরে ভাগ্নেকে কাছে টেনে মাথায় হাত বোলালাম! আদর করে বললাম, ‘মামা, ওই খেলনা বন্দুক নিলে তো পুলিশে ধরবে! তুমি অন্য কিছু নাও।’
ও আরও বেঁকে গিয়ে বলল, ‘না, আমি ওইটাই নেব!’
বেশ কয়েকবার বোঝানোর পরেও তার সুর পরিবর্তন করতে না পেরে আলতো করে একটা চড় বসালাম! চড় খেয়ে হয়ত খেলনা নেওয়ার কথা বাদ দেবে, ভেবে একটু পুলকিত হলাম! কিন্তু বিধি বাম, আমার চড় খাওয়ার পর ভাগ্নে যে কা- করল সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি! সে কান্নার অভিনয় করতে লাগল! তারপর কান্নার স্বরে বলল, ‘তুমি খেলনা দেবে কিনা বল! নইলে আমি চিৎকার করে বলব তুমি ছেলেধরা!’
ওর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছি! চারপাশে বোকার মতো তাকালাম! ‘ছেলেধরা’ শব্দটা হয়ত চটপটিওয়ালার কানে গেছে! আমার দিকে যেন কেমন কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে! স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার চোখে সন্দেহ খেলা করছে! অবস্থা বেগতিক দেখে পকেটে রাখা টাকায় হাত বোলালাম! মনে মনে বললাম, ‘টুম্পা মাফ কইরো, বরাবরের মতো এবারও তোমায় কিছু গিফট করতে পারলাম না!’ তারপর ভাগ্নের হাত ধরে টান মেরে বললাম, ‘চল, খেলনাটা কিনে দিই!’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228