গরু বিশেষজ্ঞ মন্টু মামা
অলোক আচার্য
🕐 ২:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২০
মন্টু মামাকে আমাদের পাড়ার সবাই গরু বিশেষজ্ঞ বলেই চেনে। মানে তিনি ব্যাপক পরিচিত। গরু বিশেষজ্ঞ মানে তিনি গরুজাতীয় কিছু নন। ভালো গরু চিনতে পারেন। তাই প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে তাকে নিয়ে টানাটানি বেড়ে যায়। সারা বছর মোটামুটি অলসভাবে ঘুরে বেড়ানো মানুষটাই তখন হয়ে ওঠেন পাড়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম মানুষ। তখন দম ফেলার সময়ও পান না। উল্টো চারদিকের টানাটানিতে তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সেই সঙ্গে কমিশনের চাপে তার পকেটও ভারি হতে থাকে। সারা বছর পাড়ার গলির মোড়ে হারানের দোকানের চা আর শুকনো টোস্টের বাকি বিলটা সেই টাকা দিয়ে মেটান। এটাকে তিনি পরোপকার হিসেবেই ভাবেন। এই পরোপকার করতে গিয়ে তিনি মাঝেমধ্যেই নাস্তানাবুদ হন। তাতে অবশ্য তার কোনো কিছু যায় আসে না। এই তো গত বছরের আগের বছর তার ষাঁড়ের তাড়া খেয়ে ঢের শিক্ষা হয়েছিল।
তবে তিনি সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেননি। ঘটনা হল, পাড়ার মতলুব চাচার সঙ্গে সেবার তিনি গরুর হাটে গেলেন। তার গায়ে ছিল লাল রঙয়ের টি-শার্ট। আমরা তাকে নিষেধ করলাম লাল টি-শার্ট বাদ দিয়ে হাটে যেতে। শুনেছি লাল রঙ দেখলে ষাঁড় তেড়ে আসে। তিনি আমাদের কোনো নিষেধ শুনলেন না। তার যুক্তি হল, লাল ষাঁড়ের সঙ্গে লাল গেঞ্জি পরে একটা সেলফি না দিলে মনটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। তাছাড়া একটা ম্যাচিংয়ের ব্যাপার আছে না! তো সেই ফাঁকা মন পূর্ণ করার জন্য তিনি লাল টি-শার্ট গায়ে দিয়েই হাটে গেলেন। আচমকা হাটের মধ্যে থেকে একটা ষাঁড় দড়ি ছিড়ে এসে মন্টু মামাকে তাড়া করল। সেই তাড়া খেয়ে পাক্কা তিন মাইল দৌড়ালেন। অবশেষে একটা পচা পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে ষাঁড়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
এরকম দু’চারটা বেদনাদায়ক ঘটনা আগেও ঘটেছে। মানুষের দাবড়ানিও তিনি কম খাননি। গত বছরের ঘটনা। পাড়ার আতিক চাচা গরু কেনার জন্য তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। কোরবানির দু’দিন আগে গরু মারা যায়। আতিক চাচার অভিযোগ হলো মন্টু মামা গরু বিক্রেতার কাছ থেকে উপরি নিয়ে অসুস্থ গরু কিনে দিয়েছিলেন। সেজন্য গত বছর মন্টু মামা এলাকায় ঈদ করতে পারেনি। আতিক চাচা তাকে সারাক্ষণ দৌড়ের ওপর রেখেছিলেন। এবার অবশ্য মামা নিশ্চিন্ত। কারণ হাটে যাওয়া নেই। করোনার কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যার ইচ্ছা হচ্ছে মামার কাছে মোবাইলে ছবি নিয়ে আসছে মামা সেখান থেকে তাদের পছন্দ করে দিচ্ছেন। ঘরে বসেই পকেট ভারি করছেন। সবকিছু ঠিকই ছিল। বিপত্তি বাঁধল ঈদের দুই দিন আগে। আমরা শুনলাম মামা বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। ঘটনা জানার জন্য আমরা মন্টু মামার বাড়ি পর্যন্ত গেলাম। ঘটনা হল, মন্টু মামার বাড়ির জন্য মোবাইল ফোনে ছবি দেখে যে গরুর অর্ডার দিয়েছিল তা মন্টু মামার পছন্দ ছিল। ঈদের দুই দিন আগে যখন বাড়িতে গরু নিয়ে আসে তখন দেখা গেল গায়ের রঙ মিল থাকলেও সেই গরু না। তার সাইজ অর্ডার দেওয়া গরুর অর্ধেক। এই দেখে মন্টু মামার বাবা বেজায় ক্ষেপেছেন। বাবার ভয়ে তিনি সেদিনই বাড়ি ছাড়েন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228