ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গোরু সমাচার

বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ২:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২০

গোরুর হাট এখনো লাগেইনি!
লাগবে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না!
গোরুর দরদাম এবার কেমন হবে সে নিয়েও দৈনিক পেপারগুলোতে কোনো হইচই নেই!
নিজে কী কোরবানি দেবেনÑ সেটাও ঠিক করেননি!
তারপরও সাতসকালে গোরুর হাটে গোরু কেনা নিয়ে জমজমাট একটা রম্য গল্প লিখে ফেললেন আকরাম আলী। লেখা শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন। যদিও সকালের নাস্তা এখনো খাননি।

গল্পটার কী নাম দেবেন ভাবলেন একবার।
বরাবরই তিনি গল্পের নাম দেন গল্প লেখা শেষে। প্রথম জীবনে হাতেই লিখতেন। এখন সব লেখাই মোবাইল ফোনে লেখেন। এতে সুবিধা হয়েছে বেশি। লেখা ইচ্ছেমতো সম্পাদনা করতে পারেন। যখন তখন। যেখানে সেখানে। সঙ্গে ই-মেইল করার সুবিধা তো থাকছেই।
আজ কী নাম দেব গল্পেরÑ আরেকবার ভাবলেন আকরাম আলী।
‘গরু কিনতে গরু!’
হুম! যুতসই নাম পেয়েছি! নিজেকে বাহবা দিলেন তিনি। ঝটপট পাঠিয়ে দিলেন দৈনিক ঝামেলা’র ফান পাতা ‘চিৎপটাং’-এর সম্পাদকের কাছে। ই-মেইলে।
এইবার নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। চেয়ার থেকে উঠলেন তিনি। অমনি টিং করে বেজে উঠল ফোন।
মেসেজ এসেছে মেসেঞ্জারে।
খুলে দেখলেন। সম্পাদক পাঠিয়েছে। লিখেছে ‘আপনার গরু বানান ভুল। গোরু হবে। ঠিক করে পাঠান।’
মেজাজ সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে উঠল তার। সম্পাদক কি ফাজলামি করছে তার সঙ্গে!
ক্লাসে বরাবর ফার্স্ট হয়ে এসেছেন। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পর্যন্ত করে চলেছেন। চিরকাল গরু বানান লিখে এসেছেন। আর কোথাকার অখ্যাত এক সম্পাদক এখন বলে কী না গরু নয়, বানান হবে গোরু।
নাস্তা খাওয়া মাথায় উঠল। চেঁচিয়ে স্ত্রীকে ডাকলেন, ‘সোমা, শুনে যাও।’
সোমা তখন রান্নাঘরে দিনের রান্না নিয়ে মহাফ্যাসাদে পড়ে আছেন। করোনার জন্য বাসায় কোনো কাজের বুয়া নেই। বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, ভাত তরকারি রান্না- সব নিজেকেই করতে হচ্ছে। স্বামীর ডাকাডাকি শুনে ছুলনি হাতে ছুটে এলেন।
‘বলি, গোরুর মতো চেঁচাচ্ছ কেন?’
দমে গেলেন আকরাম। নিজেকে গোরু গোরু মনে হল তার।
‘না মানে গরু বানানটা কী হবে বলতে পারো?’
‘ইয়ার্কি হচ্ছে, না! বসে বসে তো কোনো কাজ নেই। পারো শুধু বউয়ের দোষ ধরতে আর তার সঙ্গে ঝগড়া করতে। যত্তসব!’
গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলেন সোমা।
মেয়েকে ডাকলেন তিনি, ‘নিমা, নিমা।’
নিমা বিছানায় শুয়ে শুয়ে মেসেঞ্জারে চ্যাট করছিল। বিরক্ত মুখে উঠে এল।
‘কী বলছ, বাবা?’
‘বাংলা একাডেমির ডিকশনারিটা দে তো মা।’
‘বাসায় তো ডিকশনারি নেই বাবা। পুরনো কাগজের সঙ্গে সব বেচে দিয়েছে।’
‘বেচে দিয়েছে! কেন?’
ডিকশনারি তো এখন মোবাইলে অ্যাপস হিসেবে পাওয়া যায়। তাই মা বিক্রি করে দিয়েছে।
অনেক কষ্টে মেজাজ ঠা-া রাখলেন আকরাম।
‘কিপশনারি অ্যাপসটা কই পাব?’
‘কেন! প্লে-স্টোরে। দাও ইন্সটল করে দিচ্ছি।’ নিমা বাবার হাত থেকে ফোনটা নিল।
বেশ কিছুক্ষণ টেপাটেপি করে বলল, ‘তোমার ডিকশনারি অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়ে তো গরু বনে গেলাম।’
‘কেন রে মা?’
‘তোমার ফোনে তো নেটই নেই!’
বাবার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল নিমা।
জাফর স্যারের কথা মনে পড়ল আকরামের। তার লেখালেখি জীবনের গুরু। মুখে মুখে ছড়া বা কবিতা বানিয়ে দিতে পারেন।
‘স্যার, গরু বানান নিয়ে কনফিউজড হয়ে আছি। গরু বানান নাকি গোরু হবে?’
‘শোনো, আমি নাস্তা খেতে বসেছি। এই খাবার টেবিলে বসে আমি যদি এই বয়সে তোমাকে গরু বানান শেখাতে যাই, সবাই শুনে হাসবে না!’
‘স্যার, আজ সকালে আমি একটা পত্রিকায় লেখা পাঠালাম। সম্পাদক বলে কিনা আমার লেখা গরু বানান ঠিক নেই। বানানটা গোরু হবে। বানান ঠিক করে লেখা জমা দিতে বলল।’
‘ওই সম্পাদক নিজেই একটা গরু। লেখকের কাজ লেখা। সে লিখবে। সম্পাদকের কাজ সম্পাদনা করা। তার পত্রিকা কোন বানানরীতি মেনে চলে সেটা তো আর লেখকের জানার কথা না। লেখা সম্পাদনা করাই তো সম্পাদকের কাজ। তুমি ওই লেখা অন্য পত্রিকায় পাঠিয়ে দাও।’ স্যার ফোন কেটে দিলেন। নিজেকে গরু গরু মনে হল আকরামের।
ফোন বেজে উঠল।
অনীক, একমাত্র শ্যালক। ‘দুলাভাই, কী খবর?’
‘আর বোলো না, সাতসকালেই গরু নিয়ে ঝামেলায় পড়েছি।’
‘কোনো ঝামেলার বিষয় নেই দুলাভাই। এবার অনলাইনেই গরুর হাট বসেছে। সেখান থেকে পছন্দসই গরু দরদাম করে কিনে নিন।’
রম্য লেখক আকরাম আলীকে এক কথাতেই গরু বানিয়ে ছেড়ে দিল তার শ্যালক।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper