ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বউ ভ্রমে বুয়া!

হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ৩:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০২০

: তাহলে এটাই শেষ সিদ্ধান্ত? তুমি চাকরি ছেড়ে দেবে?
: বড় মেয়েটার বয়স দশ বছর, ছোট ছেলেটার বয়স আট বছর অথচ স্কুলে দিতে পারছি না। এই মরুদ্যান শহরে পাঁচশ’ কিলোমিটারের ভেতর আরবি স্কুল ছাড়া অন্য কোনো স্কুল নেই। ওদের পড়াশোনা আর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে শুধু টাকা কামাই করার জন্য থেকে যাওয়ার যুক্তি দেখছি না।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল ডাক্তার আশফাক। তার যুক্তির কাছে স্ত্রী হার মানল। সে মৌলানা ইসহাক যুক্তিবাদীর ছেলে। যুক্তি ছাড়া কখনো কথা বলে না। হুট করে মধ্যপ্রাচ্যের চাকরি ছেড়ে এসে বিপদেই পড়ল। প্রথম কয়েকদিন বেশ ডাঁট নিয়ে থাকল। হাতে মূল্যবান গিফট নিয়ে এর ওর বাসায় দাওয়াত খেয়ে পয়সা দুদিনেই ফুরিয়ে গেল। এতদিন বিদেশে টেনেটুনে চলে যা জমিয়েছিল বিসিসিআই ব্যাংকে সেটাও ফেল করেছে। কোথাও চাকরি নেই। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সিভি জমা দিয়ে আসে। নেহাত পেট চালাতে বিকালে পুরান ঢাকার একটা ওষুধের দোকানে বসে। প্রায়ই লোকজন দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জ্বর, কাশি, আমাশয়, পেটব্যথা ইত্যাদির জন্য ওষুধ নিয়ে যায়। পয়সা দেওয়ার ভয়ে তাকে দেখায় না। যারা দেখায় তারা ৫০ বা ১০০ টাকা দিতেও কুণ্ঠিত হয়। তারপরও খুশি থাকে সে। কিছু তো পাচ্ছে। এর মাঝেই একটা ক্লিনিকে মেডিক্যাল অফিসারের পদ পেয়ে গেল। মাসে মাত্র আট হাজার টাকা বেতন। মন যুক্তি দিল বেকার থাকার চেয়ে এই টাকাও ভালো। তবে প্রথম ছয় মাস প্রবেশনার তখন মাসে চার হাজার পাবে। মুখ বুজে তাতেও রাজি হল। বিদেশে থাকতে প্রতি মাসেই নতুন শাড়ি উপহার দিত স্ত্রীকে। গত ছ’মাসে একটা শাড়িও দিতে পারেনি। সেদিন বিকালেই গাউছিয়ায় গিয়ে সস্তায় একটা চকচকে শাড়ি কিনে দামের ট্যাগটা ছিঁড়ে ফেলল। এই ধরনের বাজারে অনেক পরিত্যক্ত প্যাকেট পড়ে থাকে। আসল প্যাকেটটা ফেলে দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বসুন্ধরার দামি দোকানের প্যাকেটে তা ভরল। যুক্তিবাদী মন বলল, স্ত্রীরা একই জিনিস সস্তা দোকান থেকে কিনলে তারা ফেলে দেয় অথচ সে জিনিস বেশি দামে নামকরা দোকান থেকে কিনলে খুশিতে বাগবাগ হয়। বাড়িতে ঢুকেই ওটা হাতে তুলে দিল স্ত্রীর। হাসির ঝিলিক খেলে গেল বউয়ের মুখে।
: বাহ্! এতদিন পর আমাকে কিছু দিতে ইচ্ছা করল!
আজকে গিন্নির মন পাবে সে। এবার প্যাকেট খুলতে শুরু করল বউ। প্যাকেট খুলতে দেখে দুশ্চিন্তার ঘাম দেখা দিল কপালে। এই সেরেছে। এইবার ধরা পরে যাবে। কিন্তু মন বলল, খামাখা চিন্তা করছ। ও কিছুই বুঝতে পারবে না। কিন্তু বউরা যে কাপড়ের ব্যাপারে এত সূক্ষ্মদর্শী হয় তা কি সে জানত? বেশিক্ষণ ঘামতে হল না। তার আগেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের জাপানি বোমা বর্ষিত হল। ধা করে বউয়ের ছুঁড়ে মারা শাড়ির প্যাকেট আছড়ে পড়ল মুখম-লে।
: এই শাড়ি আমি পরি? ফকিরনি পেয়েছ?
প্রকম্পিত হয়ে উঠল ঘর। আঘাতটা মুখে নয়, অন্তরে লাগল।
রাতে নাইট ডিউটিতে চলে গেল। আজ তার নাইট ডিউটি ছিল না। যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না কিন্তু ইচ্ছা করেই হাসপাতালে গেল। বন্ধু আজিমকে বলল, তুই বাড়িতে যা। তোর নাইট আমি করে দিই।
আজিম নাচতে নাচতে চলে গেল।
রাগ করে রাত কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এসেই খুশি হয়ে গেল ঘরে পা দিয়ে। সকাল আটটায় নাইট ডিউটি শেষ হয়। ঘরে আসতে আসতে প্রায় সাড়ে ন’টা বেজেছে। সদর দরজা খোলা ছিল বলে কোনো বেল দিতে হল না। সটান ঢুকে যেতেই দেখে রান্নাঘরে তার দিকে পেছন দিয়ে একমনে বউ রুটি বেলছে। ও জানে এ সময় সে ফিরবে তাই নাস্তা তৈরি করছে। সবচেয়ে খুশি হল যে শাড়িটা কাল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল সেটা এখন তার গায়ে। কী চমৎকার মানিয়েছে। যুক্তিমতো তার উচিত কালকের ব্যাপার ভুলে স্ত্রীকে ভালোবাসা প্রকাশ করা। পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল। আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল সারপ্রাইজ দিতে। তারপর পেছনে দাঁড়িয়ে চুমু দেওয়ার জন্য মুহূর্তে তার মাথা ঘুরিয়ে মুখটা দু’হাতে কাছে তুলে ধরতেই চিৎকার শুনল- কিতা করইন ভাইছাপ? ছাড়ইন, ছাড়ইন।
মুহূর্তে ছেড়ে দিয়ে সে মিনমিন করে বলল, তুমি যে বউয়ের শাড়ি পরেছ কী করে বুঝব?
: খালাম্মায় দিছইন।
কিন্তু সে শব্দ ছাপিয়ে চিৎকার কানে এল- আম্মু, দেখে যাও, আব্বু বুয়াকে চুমু খাচ্ছে।
মেয়েটা পাশের ঘরেই পড়ছিল। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে চেঁচিয়ে উঠেছে। আশফাক প্রমাদ গুনল। রণরঙ্গিনী মূর্তিতে ঝাড়– হাতে ছুটে এল বউ!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper