ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢেকুর

ইব্রাহীম রাসেল
🕐 ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

মনির মিয়ার ঢেকুর ওঠা নিয়ে রীতিমতো সবাই চিন্তিত। একবার ঢেকুর উঠলে খুব সহজে থামতে চায় না। পানি খাওয়া, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়া, অন্যদিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা; কিছুতেই কিছু হয় না। বিশ-পঁচিশ মিনিট বাদে আস্তে আস্তে এমনিতে শীতল হতে থাকে। এ বিশ-পঁচিশ মিনিট তার চরম উৎকণ্ঠা আর বিরক্তির মধ্য দিয়ে অতিক্রম হয়। আশপাশে থাকা মানুষগুলোর চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে মনির মিয়ার আরও খারাপ লাগে। অফিসে যখন এরকম পরিস্থিতিতে পড়েনÑ ইচ্ছে করে ওয়াশরুমে কিছুটা সময় পার করে আসেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। বের হওয়ার সময় যখন দেখেন ওয়াশরুমের বাইরে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সহকর্মী তার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছেন, মনির মিয়ার তখন ভীষণ খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বলে বসেনÑ শালার ঢেকুর, সব জায়গায় আমার ইমেজটা পাংচার করে দিল।

মনির মিয়া কোনো কাজেই ছন্দ খুঁজে পান না। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন, কখন আবার ঢেকুর ওঠে। ঢেকুর তো একবার উঠলে সহজে থামার নয়। একদিনকার ঘটনা এমনÑ মনির মিয়া বসকে নিজের কাজ দেখাচ্ছিলেন। কাজ দেখাতে গিয়ে প্রতি বাক্যের পর ঢেকুর উঠতে লাগল। কয়েক মিনিট পার হওয়ার পর বস বিরক্ত হয়ে বললেন- পরে আসেন। আগে আপনার ঢেকুর থামান। 

খুব লজ্জা পেয়েছিল সেদিন মনির মিয়া। সেদিন আর কাজে মন বসাতে পারেনি।

অফিসে যাওয়ার পথে বাসে বসে কোনোদিন ঢেকুর উঠলে, পাশের সিটে থাকা যাত্রীরা উঠে অন্যত্র বসে। মনির মিয়ার খারাপ লাগে। কিন্তু পথ খুঁজে পায় না পরিত্রাণের। ঢেকুরের কারণে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে তার যাওয়া হয় না। সবসময় মনে ভয় থাকে। এভাবে ভয় নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসব ভালো করে উপভোগ করা যায় না। বাসায় তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। বউ একটু সমবেদনা জানালেও সবার হাসি দেখে সেও মাঝে মাঝে হেসে বলে, কী যে একখান ঢেকুর তোমার! এত ডাক্তার দেখালে কিছুতেই কিছু হল না! মনির মিয়া মা-বাবা ও ছোট-ভাইবোনকে নিয়ে একসঙ্গেই থাকেন। বাসায় বসে ঢেকুর উঠলে মা একটু জল-টল এগিয়ে দিয়ে বলেন, কী ঢেকুর নিয়ে জন্মালি রে বাপ! তোর কষ্ট দেখে

আমার আর ভালো লাগে না। বাসার অন্য কারো এ নিয়ে উৎকণ্ঠা নেই। বরং পাছে বলে- ওই শুরু হলো বড় মিয়ার ঢেকুর।

মুঠোফোনে ইন্টারনেট ঘেঁটে ঢেকুরের কারণগুলো জানার চেষ্টা করছে মনির মিয়া। যেসব কারণে ঢেকুর হয় শারীরিক তেমন কোনো ত্রুটিই তার নেই। আর দীর্ঘসময় ধরে ঢেকুরের কারণ কোথাও খুঁজে পেল না। তবু ঢেকুর উঠলে করণীয় যে সব পরামর্শ দেওয়া রয়েছে সেগুলো ইদানীং পালন করতে শুরু করেছে। সপ্তাহ পার হলো, মাস পার হলো, ইন্টারনেটের পরামর্শগুলোও কাজে আসছে না।

মনির মিয়া এবার মনোযোগী হল অন্য বিষয়ে। স্থির করল, এখন থেকে খেয়াল রাখবে- কী কাজ করার পরে, কোন সময়ে ঢেকুর ওঠে। মাস চারেক খেয়াল রেখে নিজের ঢেকুর ওঠা বিষয়ে আবিষ্কার করল অন্যরকম একটি সত্য। হিসাব করে দেখল, যখন যেখানে বসে কোনো বিষয় সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার পরপরই ঢেকুর শুরু হয়ে যায়। অফিসে যে ক’দিন ঢেকুর উঠেছে, মেলাতে চেষ্টা করল তার আগে সে বসের সঙ্গে মিথ্যা বলেছিল। এবার বাসার কথা মেলাতে শুরু করে। সবকিছু তার কাছে এখন স্পষ্ট মনে হয়। বাসায় যতবার যা কিছু নিয়ে মিথ্যা বলেছে ততবারই ঢেকুর উঠেছে।

নিজের ঢেকুর সম্পর্কে এ নিগূঢ় তথ্য আবিষ্কার করে- মনির মিয়া কারও সঙ্গে বিষয়টি প্রকাশ করল না। নিজে নিজে মিথ্যে বলা কমাতে শুরু করেছে।

কিছুদিন পরের কথা। একদিন বাসায় বসে আবার ঢেকুর উঠল। ঢেকুর তুলতে তুলতে মনির মিয়া বউয়ের কাছে বলল, আজকে যে টাকাগুলো তোমাকে রাখতে দিয়েছি। এগুলো বোনাসের টাকা নয়। ঘুষের টাকা। তোমাকে মিথ্যা বলেছি, তাতেই এ পরিণতি।

বউ এবার বলল- কী! তার মানে সেদিন আমার জন্য শাড়ি এনে বলেছিলে পাঁচ হাজার টাকা দাম। অমনি ঢেকুর শুরু হয়েছিল। তাহলে ওটা পাঁচ হাজারের শাড়ি নয়! তারপর ফেসবুকে তোমার কোনো মেয়ের সঙ্গে রিলেশন আছে কিনা জানতে চাওয়ার পর বলেছিলে- কারো সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তার পরপরই ঢেকুর উঠেছিল। তাহলে ফেসবুকে কারো সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আছে! আমাকে মিথ্যা বলেছিলে। বউ চেঁচামেচি শুরু করে। মনির মিয়া বউকে সামলাতে বলে, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের...।

এবারকার ঢেকুরের শব্দে বোমা ফাটে যেন!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper