ভেন্টিলেটর বিভ্রাট
কামাল আহমেদ
🕐 ১২:০০ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০
এক ক্ষুদ্ররাজ্য- চন্দ্রপুর। রাজ্যে রাজা, মন্ত্রী, সৈন্যসামন্ত, ডাক্তার, বিভিন্ন দফতর, প্রজাসাধারণ- সবই আছে। চন্দ্রপুররাজ্য লন্ডভন্ড এক নতুন ভাইরাসের কারণে। চন্দ্রপুরেই নয়; নতুন এই ভাইরাসের ভয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ গৃহবাসী হল। কোথাও নেই কোনো কোলাহল। শিশুপার্কগুলো শিশুশূন্য, রাইড সব খা-খা করছে। বিশাল বিশাল বহুতল প্রাসাদগুলো দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।
ভেতরে ভেতরে মানুষ বন্দি, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। রাজার চোখে প্রজাদের জীবনরক্ষার চিন্তায় ঘুম নেই। চোখের কোণে দাগ পড়েছে, কপালে চিন্তার ভাঁজ। লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। দেশের হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ। প্রতিদিন শতশত রোগী মারা যাচ্ছেন। ডাক্তাররা ভয়ে অর্ধেক গা-ঢাকা দিয়েছে।
হাসপাতালে ডাক্তার নেই, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নেই, ওষুধ নেই। তাই রাজা তার সকল দফতর ডেকে জরুরি পরামর্শ ডাকলেন। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলেন। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা রাজাকে লক্ষাধিক ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। রাজা দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ লক্ষাধিক ভেন্টিলেটর স্থাপনে জরুরি নির্দেশ দিলেন। সময় দিলেন একমাস। মোটা মাথা, মোটা শরীর নিয়ে হেলেদুলে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দফতরে লম্বা এক নির্দেশ জারি করলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে পূর্ব থেকে বিদ্যমান বাতাস চলাচলের ভেন্টিলেটর অর্থাৎ ঘুলঘুলিগুলো রেখে যেন চার-পাঁচগুণ করা হয়।
এমনকি দেশের সব ধনী মানুষের পাকা ঘরগুলোতেও যেন তা দ্বিগুণ করা হয়। যেমন আদেশ তেমন কাজ। এ কাজে মন্ত্রী হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও দিলেন। রাজ্যজুড়ে সব পাকাঘরে বাতাস চলাচলের ভেন্টিলেটর কয়েকগুণ বৃদ্ধি করার কী বিশাল কর্মযজ্ঞ। একসপ্তাহে কোটি ভেন্টিলেটর স্থাপন হল। মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডেকে সুসংবাদটি প্রচার করলেন। রাজাকে জানালেন। দেশজুড়ে এমন সংবাদে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেল। সব মিডিয়ায় প্রচার হয়ে গেল। উন্নত দেশগুলো এ খবরে হতভম্ব হয়ে যায়।
এদিকে কোটি ভেন্টিলেটর স্থাপনের খবরে রাজাও অবাক। রাজা মন্ত্রীকে ডেকে আগে বাড়িতে বাড়িতে ভেন্টিলেটর কীভাবে হলো দেখতে চাইলেন। মন্ত্রী মহা আহ্লাদি হয়ে রাজাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা বাতাস চলাচলের ভেন্টিলেটরগুলো দেখালেন। রাজা সব দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কেবল বললেন, আপনার মাথাটা যেমন মোটা, কাজও তেমন। আপনার কাজের পুরস্কার পেয়ে যাবেন।
বিকালে রাজার আদেশপত্র এল মন্ত্রীর হাতে। ‘আদেশপত্র পাওয়ামাত্র চিরদিনের জন্য হোম কোয়ারান্টিনে চলে যাবেন। আপনার দীর্ঘ চিকিৎসা প্রয়োজন।’ মন্ত্রী আর কখনো নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলেন না।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228