বেলুয়ার ফলের বস্তা
গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০
ফলের এ দেশ। সুমিষ্ট আবেশ। বেলপুর গ্রামের বেলুয়া। বাড়িতে খায় প্রায়ই হালুয়া। একমাত্র স্ত্রী দুলে। ছেলেটাও তুলতুলে। বয়স বারো। যেন ফসকা গেড়ো। বাবার কথা কানে তোলে না। মায়ের কথা ধরে না। বেলুয়ার আছে বাপের ভিটা। তাই কামলা খেটে চলে সোজা সাপটা। কারো সাতেও নাই, পাঁচেও নাই। তাই শুধু নাই আর নাই। ঋতু এল গ্রীষ্ম। খুলল ফল খাওয়ার বিশ্ব।
ফলের সমারোহে লেগে গেল ধুমধাম। কাঁঠাল, লিচু, আম আর জাম। একদিন সকালে স্ত্রী দুলে। বলল প্রাণ খুলে। ‘পেটে আমার আরেক ছাওয়াল। এবার তো গ্রীষ্মের ফল খাওয়ান। বড়ডা খাওনের অভাবে যত হয়চে বুদ্ধিকানা। ছোটডা য্যান না পায় বড়ডার একআনা।’ স্ত্রীর কথা বোঝে না বেলুয়া। হঠাৎ খুঁজল হাসুয়া। পরানপুরে পনির মাতব্বরের বাড়িতে কাজ। একটু দেরি হলেই বাদ দেয় খিদমত তাজ। বেলুয়ার উঠানে লেলুয়া বাতাস। পরিযায়ী মেঘেরাও দেখছে আকাশ। উঠানে আম গাছ আশ্বিনা। আম বলে না পাকলে খাস না।
এ আম গাছ বেলুয়ার হাতে লাগানো। কটা দিন থেকেই অন্যের বাগানে আম হচ্ছে কুড়ানো। বেলুয়া চলল। কিছু না বলল। সেদিন তুলতুলে সন্ধ্যার পরে আনল কিছু লিচু। বাগান মালিক তেহেরি এসেছিল তেড়ে পিছু।
তেহেরির তাড়নে তুলতুলের শরীরে ঘাম ঝরেছিল। তবু কিছু লিচু পাওয়া তো হয়েছিল। এ অবস্থার দৃশ্যায়নে। মা বলল তাকিয়ে আসমানে। ‘এগুলা আনলা কই থ্যাইকা?’ বলেই দিলেন এক ধাক্কা। আবার বলল। ঘরের পথে চলল। ‘পরের খাওনে লোব করতে নাইরে বাপ। এগুলা মরনের পরে হইব সাপ।’তুলতুলের মন হয় চঞ্চল। ধরল মায়ের অঞ্চল। মায়ের কথার দেয় জবাব। ‘আমাগো তো বহুত অভাব।
নিজের মনে কইরা গাছরে বইলা পাড়ছি লিচু। আমার লগে আছিল ওপাড়ার খিচু।’ মা দুলে যেন দোলে। বাবা বেলুয়া, বুক পকেটে রেখে হায়া। রাতে বের হয়। ফেরে রাত যখন যায় যায়। বস্তাবন্দি ফল। ফলই বাড়ায় বল। ঘুম থেকে জাগে দুলে। সঙ্গে জাগে তুলতুলে। স্ত্রী দুলে বলে। ‘এ কী আনলে শেষ রাতে? কী আছে বস্তাতে?’ স্ত্রীর কথা শুনে মুখের কথা সরে না। খুঁজে পায় না কী করবে বাহানা। বেলুয়া বস্তা খোলে হেসে-খেলে। ভরে যায় মেঝে আম, পেঁপে, লিচু আর কাঁঠালে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228