ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিতব্যয়িতা

অভিজিত বড়ুয়া বিভু
🕐 ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ০৪, ২০২০

-কে? কে?
দরজা খুলে দেখা গেল রাঘব বাবুর বড় মেয়ে নমিতা।
-কী রে মা, এই সন্ধ্যা বেলায়!
-ভাল্লাগে না তাই তোমাদের কিপ্টা জামাইর ওপর রাগ করে চলে এলাম। সারাক্ষণ এটা-সেটা বলে ঝগড়া করে। কিপ্টের হাড্ডি। চাকরিতেও যায় না। সারাদিন বাসায়।
-এখন তো বাসায় থাকার কথা। তুই কেন একা বাড়ির বের হলি? কী এক ঝামেলা!
-বাড়ির কাছে মেয়ে বিয়ে দিলে যা হয়।

রাঘব বাবুর ছোট মেয়ে কবিতা বড় বোন নমিতার উদ্দেশ্য করে বলল।
-কী বললি কবিতা, তোর এত্ত বড় সাহস...। তোকে না!
-দিদি তুই না তিন ফুট দূরত্বে থেকে কথা বল। কোত্থেকে না কোত্থেকে এলি। সঙ্গে করোনাভাইরাস আছে কিনা কে জানে। একটু অপেক্ষা কর। সাবান আনছি। ক্ষারযুক্ত বাংলা সাবান। তোকে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে কাজ নাই। সহজে জীবাণু যাবে না।
-বেশি বাড়াবাড়ি করবি না বলে দিলাম।
-এই দাঁড়া দাঁড়া। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাক। নড়াচড়া করা যাবে না। হাত ধুবি। স্নান করবি। তারপর অন্য ব্যবস্থা। রাত কাটাতে দিদি তোকে না আজ আলাদা রুমে রাখা হবে। খাওয়া-দাওয়া হবে এক রুমে। আমাদের সঙ্গে না।
দুই মেয়ের কা- দেখে রাঘব বাবু বলল, এই তোরা আবার কী শুরু করে দিলি রে।
নমিতা বলল, দেখো না বাবা, কবিতা কী সব বলছে।
কবিতা বলল, হ্যাঁ বাবা আমি যা বলছি করছি তা আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য। করোনার প্রাদুর্ভাব দিনদিন যেভাবে বাড়ছে। কেন বাবা সেদিন তোমার মেয়ে ফোনে না খুব করে বলল, এখন যা অবস্থা। এখন আমি তোদের বাড়ি যাব না। তোরাও আমাদের বাড়ি আসবি না। যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্বামী এবং দুই মেয়ের বাকযুদ্ধ শেষে রাঘব বাবুর স্ত্রী বলল, অনেক হল। এবার চল খাবার টেবিলে বসে আলাপ করি। ওদিকে কবিতা নাছোড়বান্দা। বলল, মা আমি কিন্তু দিদির সঙ্গে বসে খাব না। খেতে বসে কখন আবার হাঁচি দিয়ে দেয়।
-এই থামবি। যা ঝগড়া না করে এবার খাবার রেডি করে আন।
স্বামী-স্ত্রী বড় মেয়েকে প্রশ্ন করল, কী এমন হল, হুটহাট করে চলে এলি?
নমিতা বলল, ওমা! আমি কি একেবারে চলে এসেছি নাকি! আচ্ছা বলছি শোনো, তোমাদের জামাই ইদানীং সেই সকাল থেকে জ্বালাতন শুরু করে দেয়। এই উঠে পড়ো। এত ঘুমাও কেন। ঘরদোর ঝাড় দাও। এটা কর ওটা কর। সারাক্ষণ জ্বালিয়ে ছাড়ে। রান্নাঘরে গিয়ে রুটি বানানো, রান্নাবান্নাসহ বাসনকোসন মাজাঘষা পর্যন্ত করে।
-তাতে তোর কী এমন অসুবিধা!
-অসুবিধা না মা? সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করলে কার ভাল্লাগে!
-তাই বলে রাগ করে সন্ধ্যাবেলা চলে আসতে হবে!
-আসব না! বলে কিনা এখন দুই তরকারির বেশি রান্না করা যাবে না। খুব হিসাব করে চলতে হবে। রসনাবিলাস ভাবটা দেখানো যাবে না।
এই কথা শুনে ছোট বোন কবিতা মহাখুশি। হাসতে হাসতে নমিতাকে বলল, তাই নাকি দিদি। দাদাবাবু দেখছি সঠিক নিয়মনীতি চালু করল। আমাদেরও আজ দুই তরকারি। পাতলা ডাল আর সবজি। যদি খেতে চাস শুধু একটা ডিম ভাজি করে দিতে পারি।
নমিতা বলল, তাই নাকি! তোরাও কিপ্টেমি শুরু করে দিয়েছিস। পাতলা ডাল আর সবজি খেয়ে রাত পার করতে হবে!
কবিতা বলল, করোনাভাইরাস আমাদের মিতব্যয়ী হতে শিখিয়েছে। তোর সামনে এখন দুই অপশন। এক হল, স্বামীর বাড়ি গিয়ে স্বাধীনভাবে রাতদিন কাটাবি; দুই হল, দরিদ্র বাপের বাড়ি এসে ডাল সবজি খেয়ে রাত কাটাবি।
রাঘব দম্পতির হাসি কে দেখে। শেষমেষ বুঝিয়ে বলল, ভয়াবহ ভাইরাস বলে কথা। রেডিও টিভিতে খবর শুনিস না? এখন যা অবস্থা। হিসাব করে না চলে উপায় নাই। চল মা তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। সবে রাত দশটা। চল!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper