ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হুজুগ আতঙ্ক

অয়েজুল হক
🕐 ১:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২০

ট্যুর প্লান বেশ আগের। নির্ধারিত সময়ের কয়েকদিন আগে সাবের বলে দেয়, পারিবারিক সমস্যার কারণে সে যেতে পারবে না। ‘কী সমস্যা’ জনি প্রশ্ন তুলতেই সাবের চিৎকার করে- বলেছি তো পারিবারিক সমস্যা। জনি কিছুটা অবাক হয়ে বলে, ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন? না গেলে তোকে তো আর জোর করে নেওয়া হবে না।

-তোদের হাবভাব তো লেজ ধরে টেনে নেওয়ার মতো।
-আচ্ছা, তোর তাহলে লেজ আছে?
-কী বললি, আমার লেজ আছে!
-সেটা তো তুই বললি। আর থাকলেই কী শেয়াল কুকুরের মতো লেজ নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবি নাকি! লেজ থাকবে প্যান্টের ভেতর, আন্ডার প্যান্টে চাপা...।
সাবেরের রাগ চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে। জনির কানের ওপর কষে একটা থাপ্পড় মারা দরকার। থাপ্পড় দিলে জনিও বসে থাকবে না। সে হয়ত দুটো থাপ্পড় মারবে। জনির শরীর হাতির মতো। এক থাপ্পড়েই মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে পারে।
পড়ে গেলে সে যে পাছায় একটা দুটো লাথি মারবে না সে নিশ্চয়তাও নেই। লোক খুব একটা সুবিধার না। কথার জবাব না দিয়ে সাবের বাসার পথ ধরে।
এল প্যাটার্ন ডিজাইনের ছয় রুমের তিন রুম ভাড়া করেছে সাবের। বাড়ির মালিকের তিন রুমের সঙ্গে মেশানো বাকি তিন রুমের এক রুমে সাবের ঘুমাচ্ছে। অন্য রুমে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুমাচ্ছে সাবেরের স্ত্রী সোনিয়া। সাবেবের প্রায় অটো কোয়ারেন্টাইন চলছে। কাশি থাকায় স্ত্রী বিশেষ নিয়ম জারি করেছে। বাড়িতে ঢুকতেই সোজা তার রুমে চলে যেতে হবে। বাইরে থেকে লক করে দেওয়া হবে দরজা।
নিতান্ত প্রয়োজনে স্ত্রী মাস্ক গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় এসে আবার দ্রুত বিদায় নেবে। স্ত্রী তার কক্ষে অবস্থানকালে কোনো কথা বলা যাবে না। হাঁচি, কাশি, বায়ু ত্যাগ নিষিদ্ধ। এ যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়িওয়ালার মেয়ে রিনা। মেশামিশি কক্ষ। মেয়েটা রাতভর দাপাদাপি করে। আধভাঙা ভেন্টিলেটর দিয়ে লাইটের আলো এসে সাবেরের কক্ষ আলোকিত করে রাখে।
গভীর রাতে কখনো টেলিভিশনের বিকটাকার শব্দে চমকে উঠতে হয়। কখনো অট্টহাসিতে। রাতভর কী করে কে জানে! সাবেরের জানতে ইচ্ছা করে না। পৃথিবীতে যত কম জানা যায় ততই মঙ্গল। বেশি জানলেই সমস্যা। বুধ, বৃহস্পতি, নেপচুন, প্লুটো সব এসে ঘাড়ে চাপে। বাড়ি এসে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। মনে মনে ভাবে এ কষ্টের চেয়ে দু’দিনের ভ্রমণ মন্দ নয়।
শেষমেশ জানিয়ে দেয় সে ভ্রমণে যাবে। নির্দিষ্ট দিনে ভ্রমণ শুরু হয়। ব্যানারে বনভোজন লেখা দেখে আপত্তির ঝড় তোলে সাবের- যাচ্ছি জিকো প্যালেসে, এটা তো বনভোজন না, প্যালেসভোজন!
আনন্দভ্রমণে কেউ ঝগড়াঝাটি করতে চায় না। সাবেরের কথার জবাব দেয় না কেউ। জিকো প্যালেস পৌঁছাতে সন্ধ্যা নামে। গাড়ি থেকে নেমে রাতটা রিসোর্টে কাটাবে সবাই। সকাল থেকে শুরু হবে আনন্দ ফুর্তি। গেটেই একজন বলে, ‘সাবধানে থাকবেন। এখানে তিনজন কোয়ারেন্টাইনে আছে। জ্বর, সর্দি নিয়ে এসেছিল। পিকনিক... এবার বোঝ। আটকা থাক।’
লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই ফাহিম বাইরের দিকে দৌড় শুরু করে। তার সঙ্গে যোগ দেয় প্রায় সবাই। জনিকে দেখা যাচ্ছে না। আতঙ্কে সাবেরের কাশি বেড়ে যায়। সে খকখক কাশি দেয়।
লোকটা বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে, আপনার কাশি আছে?
সাবের থরথর করে কাঁপে- না তো, আমার কাশি নেই।
-কাশি নেই! বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস বলুন?
-কারটা বলব, কলম্বাসের ইতিহাস... খুকখুক।
-একদম ফাজলামো করার চেষ্টা করবেন না। ডাক্তার আসবে...।
সাবেরের গলা শুকিয়ে আসে। ডাক্তার আসার আগেই সে ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper