অ-খাদ্য
হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ৩:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৩, ২০২০
কুষ্টিয়ার ছেলে বাদল বহুদিন মধ্যপ্রাচ্যে থেকে ছুটিতে অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে এসেছে। বিদেশে একটি গ্রিলের দোকানে অল্প বেতনে সে কাজ করে। তবে তা বাংলাদেশ থেকে বেশি। দীর্ঘদিন গাছপালাহীন ধু-ধু মরুভূমি দেখতে দেখতে হৃদয়-মন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। দেশে এসে দু-একদিন জিরাবার পর ঠিক করলো একটু সবুজ বনানী-পাহাড় দেখে মনটা চাঙ্গা করতে হবে। বন্ধু রায়হান পরামর্শ দিলো- সিলেটে বেড়াতে যা। কম্যুনিকেশন ভালো। ওখানে তোর কুষ্টিয়ার বাংলা চলবে না। সিলেটি ভাষা বলতে হবে। রিকশাওয়ালাকে কখনো এই রিকশাওয়ালা বলে ডাকবি না। বলবি ড্রাইভার সাব। না হলে ভীষণ মাইন্ড করবে, যেতে তো চাইবেই না বরং তোকে বাজে গালিও দিতে পারে।
: আরো কিছু শিখিয়ে দে না দোস্ত।
চেপে ধরল বাদল।
: তবে শোন। কাউকে হ্যালো, কেমন আছো জিজ্ঞাসা করতে বলবি- কিতারেবা সোনা! কিলা আছ? দাঁড়িয়ে আছ কেন জানতে বলবি- উবাই রইলায় কিতার লাগি? খাবো বলতে চাইলে বলবি- খাইতাম।
আরো কিছু শেখাতে চেয়েছিল রায়হান কিন্তু এখন রাত। তায় দু’দিন আগে সফর করে এসেছে। জেট লেগ আছে। ঘুম পেয়ে গেল তার। ঢুলতে শুরু করল। তাকে ঘুমকাতর দেখে বিদায় নিল বন্ধু। হাতে সময় খুব কম। পরদিনই যাত্রা শুরু করবে স্থির করল বাদল। সকালে উঠে সেভ ও প্রাতঃকৃত্য সেরে সায়দাবাদ আসতে আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে গেল। আগে থেকে বুক করা নেই তাই সাধারণ বাসে চড়তে হল। পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর উতরে গেল। দীর্ঘপথে বাসে এক সহযাত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনার ফলে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। সিলেটে নামতেই লোকটি চেপে ধরল- এব্লা কই যাইতা? আউকা। মাদানে কুস্তা খাইছইন না। গরিবর বাসাত একটু ডাইল-ভাত খাইয়া যাউকা। আমার বাসা এক্কেবারে কান্দাত।
: কান্দা কোথায়? ক্যানাডাতে?
অবাক হয় বাদল।
: না, না। ওই যে দেখা যায় বাসা।
এবার বুঝল সে কান্দা মানে নিকটে।
লোকটা এবার টেনেই নিয়ে চলল তাকে। আন্তরিকতায় আপ্লুত হল বাদল। যেতে যেতে লোকটি বলল, আপনে কত ভাগ্যবান। বিদেশো থাকোইন, আমার ইচ্ছা একদিন লন্ডন যাইতাম।
ছোট বাসা। এক অসুস্থ মাকে নিয়ে থাকে লোকটি। খাবার টেবিলে বসে দেখল ও নিজেই এক এক করে কিচেন থেকে খাবার-দাবার নিয়ে আসছে। বুঝতে পারল সেও তার মতো ব্যাচেলর। এভাবে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকা সৌজন্যবিরুদ্ধ। তাড়াতাড়ি উঠে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কিচেনে গিয়ে তরকারির বাটিটা এনে রাখল টেবিলে। রাখা মাত্রই অদূরে বিছানায় শায়িত মা তা দেখে বললেন, ঘুরিয়া রাখো পুত।
বাদল থতমত খেল। সিলেটের প্রথা মনে হয় খাবার রাখার আগে একবার ঘুরপাক খেয়ে রাখা। সে নিজে এক পাক ঘুরে নিয়ে তা টেবিলে রাখল। লোকটি এবার হাসতে হাসতে বলল, ঘুরিয়া মানে ঢাইক্যা রাখা।
খাবার শেষেই চলে আসাটা খারাপ। গল্পগুজব করতে করতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে টের পায়নি। এ রকম স্বল্প পরিচিতের বাসায় রাত কাটানো চলবে না। ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিল সে।
রাস্তায় পা দিয়ে দেখে সড়কের বাতি জ্বলছে। রায়হানের উপদেশ মেনে সসম্মানে ড্রাইভার সাব ডাকাতে সহজেই রিকশা পেয়ে গেল সে। ছোট চাকরি করে, বেশি পয়সা আনতে পারেনি বিদেশ থেকে। বলল, আমাকে থাকা-খাওয়া যায় এ রকম সস্তা হোটেলে নিয়ে যান। বেশ ঘোরাঘুরি করে রিকশাওয়ালা তাকে শহরতলীর একটা ছোট হোটেলে নিয়ে এল। তখন ভালোই রাত হয়েছে। বাইরে টিনের সাইনবোর্ড: সস্তা হোটেল। আসলে সে চেয়েছিল মাঝারি ভদ্র হোটেল। কিন্তু এ অপরিচিত জায়গায় এত রাতে কোথায় যাবে? তাকে দেওয়া ছোট্ট একটা কক্ষে চলে এল। সেখানে তোশক ও চাদর সহযোগে একটা কাঠের চৌকি পাতা। সঙ্গে সঙ্গে রটে গেল ঢাকা থেকে এক সাহেব এসেছেন এ নড়বড়ে হোটেলে। গায়ে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা কাপড়ের টুপি ভুঁড়িআলা মালিক তথা ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন।
: রাইতকু কিতা খাইতা? কাচ্চি বিরিয়ানি, হাতকরা দি গোস্ত, পাঙ্গাসের সালুন ,হিদলের ভর্তা...।
একেই পড়ন্ত বেলায় দুপুরের খাওয়া হয়েছে তায় জার্নি করে এসেছে, পেটটা কেমন করছে। হালকা কিছু খেতে চায় সে।
: রাইতে খালি পুরি খাইতাম।
উত্তর দেয় সে।
: হালার হালা, ঢাকা থাইক্যা পুরি খাইতে আইছে।
মারতে আসে ম্যানেজার। গোলমাল শুনে ছুটে আসে আরেক কর্মচারী।
: ই বান্দির পুত রে বালা কইরা লাগা। গোলামের ঘরের গোলাম।
ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালায় বাদল। পিছে পিছে তাকে তাড়া করে কর্মচারী। সে রাতেই প্রাণ বাঁচাতে কোনোভাবে ঢাকার ট্রেন ধরে বাড়ি এসে জেনেছিল পুরি মানে ডালপুরি নয়। সিলেটি ভাষায় পুরি মানে মেয়ে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228