ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাড়-পোকা

রাফিদুল রাফি
🕐 ৩:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৩, ২০২০

ছেলেবেলা থেকেই বেশ কিপটে স্বভাবের লোক আমাদের রাকিব। তার স্বভাবে যে কিপটামি আছে তা কেবল ছেলেবেলার বন্ধুরাই জানে এমনটা নয়। বড়বেলার বন্ধুরা তাকে ডাকে ছাড়-পোকা নামে। বড়বেলায় তার কিপটামি ছদ্মরূপ গ্রহণ করায় এমন নাম। রাকিব ছাড় ব্যতীত কোনো কিছু কেনে না। কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে কাঁচাবাজারের আনাজপাতিতে পর্যন্ত ছাড় খোঁজে। এমনকি টাকা ধার নিলেও পরিশোধ করার সময় বলে, ‘একটু ছাড় দেওয়া যায় না?’

অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালালে যেমন তার ওপর পোকামাকড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তেমনি কোনো শপে ছাড় দেওয়া হয়েছে শুনলে রাকিব সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই তার ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা তার এ নামকরণে যথার্থ সার্থকতা দেখিয়েছে বৈকি!

বর্তমানে কিছু কিছু ব্র্যান্ডের দোকান ছাড়ের নাম করে আড়ালে একটা জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারপর সেটায় এত শতাংশ ছাড়ের লেবেল লাগিয়ে দেয়। ছাড়ের পরেও পূর্বের দামটাই রেখে দেওয়া হয় কৌশলে। ব্যাপারটা রাকিব বোঝে না। এই তো সে ষাট শতাংশ ছাড় দেখে গেল সপ্তাহে একটা শার্ট কিনল এক হাজার টাকা দিয়ে। একই শার্ট আমি তিন মাস আগে একই দামে কিনেছি। এ কথা শুনে রাকিব বলল, ‘ধুর ব্যাটা, তুই ঠকসিস, আমি জিতছি।’

ওকে কিচ্ছুটি বলিনি। মনে মনে বললাম, ‘পাগলের সুখ মনে মনে, আর ব্যাটা তোর মনে-শরীরে সবখানে!’

রাকিবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমি। সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে আমাদের বন্ধুত্বের শুরু তারপর পড়াশোনার সব পর্যায়ে একই প্রতিষ্ঠানে পড়েছি। তাকে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না। বর্তমানে দুজনে চাকরি করছি। একদিন অফিস শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি, পথে রাকিবের সঙ্গে দেখা। জানাল আসছে শুক্রবার তার বিয়ে, আমাকে অবশ্যই বরযাত্রীর দলে থাকতে হবে। খুশি হয়েই রাজি হলাম।

বিয়ের দিন কনের বাড়িতে বেশ খাওয়াদাওয়া হলো। পাত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বেশ খাতিরযত্ন পেলাম। বিকালবেলা বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন কাজী সাহেব। রাকিব লজ্জায় মুখে রুমাল চেপে আছে, একটাও রা নেই। দেনমোহরের প্রসঙ্গ আসতেই কনের বাবা বললেন, ‘দশ লাখ।’

রাকিবের দিকে তাকালাম, তার মুখ থেকে রুমাল সরে গেল। কিছু বলতে চাচ্ছে, পারছে না কেন যেন। তবে রাকিবের বাবা বললেন, ‘একটু বেশি হয়ে যায় না বেয়াই? একটু কমান না।’

কনের বাবা বললেন, আরে কী বলেন? বেশি না। দশ লাখ টাকা আজকাল কিছুই না। কমানো যাবে না।’

কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভেঙে রাকিব জোরেসোরে চিৎকার করে বলল, ‘শ্বশুর আব্বা, ফাজলামি করেন নাকি? দেনমোহর একদরের দোকান নাকি! ছাড় দেন ফিফটি পার্সেন্ট। নইলে বিয়ে ক্যান্সেল।’

রাকিবের এমন কথায় উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসতে লাগল। পাত্রের মাথায় গণ্ডগোল আছে ধরে নিয়ে বিয়েটাই শেষমেশ ভেঙে গেল!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper