ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভালোবাসা দিবসের বেদনা

শিমুল শাহিন
🕐 ৮:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০

শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ! ভ্যালেন্টাইনস ডে উদ্যাপনে কপোত-কপোতীরা জোড়া বেঁধে ঘুরছে! না, আমি ঘুরছি না- নীরস বদনে ক্যাম্পাসে একা বসে বসে বন্ধু সোহেলের জন্য অপেক্ষা করছি! সামনে দিয়ে একেকটা মেয়ে সেজেগুজে প্রেমিকের হাত ধরে যাচ্ছে আর আমার বুকের বাম পাশটা রীতিমতো জ্বলছে, পুড়ছে!

শ’খানেক খিস্তি-খেউড় মুখস্ত ছিল, সবগুলো একটার পর একটা মনে মনে আওড়ালাম বন্ধুর প্রতি! এরকম একটা দিনে আমাকে ঘর থেকে টেনে বের করাটা নিশ্চয়ই ছোটখাটো অপরাধ নয়!

প্রেমবিদ্বেষী নই, এতদিন ধরে মনের দুয়ার খুলে রেখেছি তবুও কোনো মেয়ে ভেতর পানে একটুখানি উঁকি দিয়েও দেখেনি! আমার সিঙ্গেল জীবনের রহস্য কিন্তু এইটাই! অবশ্য সিঙ্গেল জীবনটা যে খুব খারাপ তা নয়, বেশ আয়েশেই কাটে! বছরের তিনশ’ চৌষট্টি দিন ভালোমতোই কেটে যায়, শুধু এ একটা দিনেই ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে!

যন্ত্রণা লাঘবের জন্যই ভালোবাসা দিবস প্রতিবারই ঘুমিয়ে বা সিনেমা দেখে পার করে দিই! এবারও ঘর থেকে বের হতেই চাইনি, কয়েকটা সিনেমা আর গল্পের বই আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলাম যাতে সময়টা ভালো কাটে! হঠাৎ সোহেল এত জরুরিভাবে ডাকলো, বাধ্য হয়ে বের হতে হলো!
মিনিট বিশেক একা বসে বসে অপেক্ষা করার পর সোহেলকে আসতে দেখলাম। দূর থেকেই দেখতে পেলাম ওর সঙ্গে একটা মেয়ে!

এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিল, তার ওপর ওর সঙ্গে মেয়ে দেখে কয়েকগুণ বেড়ে গেল! যে আমি কষ্ট লুকাতে ভালোবাসা দিবসে ঘর থেকে বের হই না, তাকেই কিনা ও গার্লফ্রেন্ড দেখানোর জন্য বের করে এনেছে! সোহেলের এহেন কাজ ‘কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিঁটা’ মনে হল!

দুজন সন্নিকটে আসতেই একটু সরে গিয়ে বসার জন্য বেঞ্চে জায়গা করে দিলাম! মেয়েটা লম্বা করে সালাম দিল। সালামের উত্তর দিয়ে সোহেলের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালাম। ও পাত্তাই দিল না! শুধু বলল, ‘শোন, তোকে ঘর থেকে টেনে বের করেছি বলে রাগ করিস না! জরুরি একটা কাজের জন্যই ডেকেছি!’

চিমসে মুখে বললাম, ‘কী কাজ?’
মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, ‘ও আমার মামাত বোন, সোমা! শিল্পকলা একাডেমিতে কিছুক্ষণ পর ওর একটা প্রোগ্রাম আছে!’
‘ও, তোদের সাথে যেতে হবে এই তো? এটাই জরুরি কাজ?’

সোহেলকে খুব উদ্বিগ্ন মনে হলো। সে বলল, ‘তা নয়। আসলে আমিই যেতাম ওর সঙ্গে, হঠাৎ বাসায় একটা জরুরি কাজের ডাক পড়েছে! আমাকে পরের বাসটা ধরেই বাসায় চলে যেতে হচ্ছে! তোকেই ওর সঙ্গে যেতে হবে!’
চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘আমি একা?’

‘হুম, ও চেনে না তো! শিল্পকলায় আজ বেশ ভীড় থাকবে। তুই ওকে নিয়ে যাবি আর প্রোগ্রাম শেষ হলে নিয়ে এসে বড় খালার বাসায় রেখে আসবি! পারবি না?’

উত্তরের তোয়াক্কা না করেই সোহেল বিদায় নিয়ে চলে গেল! বেশ কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম! স্টলের পিচ্চি ছেলেটাকে ইশারা করতেই দুই কাপ চা আর সিঙ্গাড়া দিয়ে গেল! সিঙ্গাড়ার পাত্রটা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে এক পলক তাকালাম! এর আগে মেয়েটার মুখের দিকে ভালোভাবে তাকাইনি। প্রথম দর্শনেই তার রূপের জালে আটকা পড়লাম! এত সুন্দর মেয়েও হয়? সুন্দরী মামাত বোন আছে- এতদিন গোপন করে রেখেছে বলে সোহেলের ওপর রাগ হতে লাগল!

সোমা দূরপানে তাকিয়ে চায়ের কাপে একেকটা চুমুক দিচ্ছে, আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি! স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি বুকের ভেতরে কেউ একজন ক্লান্তিহীনভাবে অনবরত বলে চলেছে, ‘পাইলাম, ইহাকে পাইলাম!’ কতক্ষণ সোমার দিকে ওভাবে চেয়েছিলাম জানি না, সংবিত ফিরে পেলাম ওরই ডাকে! সুরেলা কণ্ঠে বলল, ‘ভাইয়া, এত কী দেখেন?’

তার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেয়েছি! গলা শুকিয়ে গেছে, কী উত্তর দেব খুঁজে পেলাম না! শুধু মাথা নিচু করে বললাম, ‘ইয়ে মানে শিল্পকলা একাডেমিতে আজ বেশ ভীড় হবে! ওখান থেকে বের হওয়ার সময় অত ভীড়ের মধ্যে তোমাকে যাতে দ্রুত চিনতে পারি সে জন্যই মনোযোগ দিয়ে দেখছি!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper