ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নতুন প্রেমিক

অয়েজুল হক
🕐 ৭:০২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০

ফারুক সদ্য পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগদান করেছেন। তার নতুন জীবন, নতুন কর্মস্থল ফরিদাবাদে। জায়গার নাম ফরিদাবাদ হলেও সেখানে শুধু ফরিদ বা ফরিদারা বসবাস করেন এমন নয়। লাল্টু, বল্টু মার্কা মানুষই বরং বেশি।

প্রথম দিন যার সঙ্গে পরিচয় হয়, তার নাম সেন্টু। নাম সেন্টু হলেও গায়ে সেন্টের ঘ্রাণ নেই, ঘামের কটু গন্ধ। অফিসের পুরনো কর্মচারী। দেখেই ফিক করে হাসেন। যেন দশ বছর ধরে একসঙ্গে পথচলা।

-আপনার নাম ফারুক না?
-হু। আপনি?
-আমার নাম সেন্টু।

-সেন্টু। খুব ভালো নাম। আমি এখানে নতুন এসেছি...
কথা শেষ হওয়ার আগেই সেন্টু বলে, সব জানি।
নতুন জায়গায় সবার আগে থাকার জন্য একটা বাসস্থান প্রয়োজন। ফারুক বলে, ‘এখানে ভালো বাসা আছে?’

-কী যে বলেন! ঘরে ঘরে, মোড়ে মোড়ে ভালোবাসা। ভালোবাসার যুগে আপনি যদি শিক্ষিত মানুষ হয়ে এ কথা বলেন তাহলে হয়! আপনার বয়স কম। সরকারি চাকরি। ভালোবাসা হুমড়ি খেয়ে মাথা ঠুকবে।
-থাকার বাসা বুঝিয়েছি।

-যে বাসাই চান সব বাসাই পাবেন। ভালোবাসা মন্দ বাসা সব রেডি। ওই যে দেখেন না আজকাল দর্জির দোকান ভূট হতে চলেছে রেডিমেডের ঠেলায়।

বিকালের দিকে সেন্টুকে নিয়ে বাসা খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি। একতলা বাড়ি। দুটো ফ্ল্যাট। একপাশে বাড়ির মালিক আবিদ সাহেব তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আরেকটা ভাড়া দেবেন। গেটে সাইনবোর্ড- ফ্ল্যাট ভাড়া হইবে, ব্যাচেলর নট এলাউড।
সেন্টু ভেতরে এগোলে ফারুক বাধ সাধে, ‘সাইনবোর্ড দেখেননি? আমি তো ব্যাচেলর।’
-ব্যাচেলর হবেন কেন, চাকরি করেন না?

ফারুক কিছু বলে না। বাসাটি ভাড়া পাওয়া যায়। পঞ্চাশোর্ধ আবিদ সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, আমার একটাই মাত্র মেয়ে। এজন্য ব্যাচেলর ভাড়া দিই না। আপনারা চাকরিজীবী মানুষ, ভদ্র। রিস্ক নাই।

বাসায় ওঠার পর থেকে আবিদ সাহেবের অনার্সপড়ুয়া মেয়ে তাজরিন ফারুকের রুমে কারণে অকারণে আসছে। কখনো আবিদ সাহেবের স্ত্রী আসছেন তাজরিনকে সঙ্গে নিয়ে। তাজরিন কলেজের গল্প, ছোটবেলার গল্প বলছে। দেখতে মন্দ না। ঘোরলাগা সুন্দরী না হলেও চেহারায় সরলতা আছে। মায়া আছে। হাসিতে সুর আছে।

শীত শেষের দিনগুলো যেন তাজরিনের জন্য আরও বেশি সুন্দর হয়। ন’টায় অফিস। বাসা থেকে বেরিয়ে সামান্য পথ যেতেই উঠতি বয়সের এক যুবক পথরোধ করে দাঁড়ায়।
-আপনার নাম ফারুক?
-হ্যাঁ। কেন?

-আমি তাজরিনকে চৌদ্দ বছর ধরে ভালোবাসি।
-এত দীর্ঘসময় কাউকে ভালোবাসতে হয় না।
-দেখুন আমি কোনো উপদেশ শুনতে আসিনি। আমার নাম হেমায়েত। তাজরিন আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে। সেটা নিশ্চয়ই আপনার মতো বদমানুষের কারণে।

হেমায়েত যেকোনো কারণে খুব ক্ষিপ্ত। ক্ষিপ্ত মানুষের সঙ্গে মজা করলে বিক্ষিপ্ত হয়, বিস্ফোরণ ঘটে। হেমায়েতের সঙ্গে মজা করা যেতে পারে।
-আপনার জন্য কী করতে পারি?

-কিছু করতে হবে না। শুধু বলে রাখছি তাজরিনের দিকে তাকালে চোখ কিন্তু চোখের জায়গায় থাকবে না।
-কোথায় থাকবে?
-উপড়ে ফেলব।

-তাজরিন যদি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে?
-আপনি ক্যালক্যাল করে বাসা ছেড়ে চলে যাবেন।
-তমি চৌদ্দ বছর ধরে কী ভালোবাসা চালালে, মেয়েটা এখন আমার পিছু নিল?
হেমায়েতের মনোযোগ, ক্ষোভ তাজরিনের দিকে ঘুরে যায়। সে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে।

বিকালের দিকে অফিস থেকে ফিরে হইচই শুনে কিছুটা অবাক হয় ফারুক। গলাটা পরিচিত। সেই পথরোধ করে দাঁড়ানো হেমায়েত। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আবিদ সাহেবের বাড়িতে ভীড় করেছেন। ফারুক কৌতূহলে এগিয়ে যায়। হেমায়েত সংঘর্ষের মুডে আছে। যে কোনো সময় করোনা ভাইরাসের মতো যে কারও ঘাড়ে আছড়ে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞে মত্ত হবে! তার হাতে অনেক প্রমাণ। হেমায়েতের প্রমাণগুলো মোবাইল ফোনে তোলা ছবি, ভিডিও, ম্যাসেজ দেখছেন গণ্যমান্য মানুষ। দেখছেন আর প্রশ্ন করছেন তাজরিনকে, ‘এগুলো কীভাবে হলো?
তাজরিন সব প্রশ্নের উত্তরে শুধু বলছে, জোর করে তুলেছে।
-সব জোর করে কেমনে হয়!

ফারুক আগ বাড়িয়ে বলে, হয়। আজকাল জোর করার যুগ। জোর করেই সব হয়।
ফারুকের কথা শেষ না হতেই গর্জে ওঠে হেমায়েত, ‘আমি চৌদ্দ বছরের পুরনো প্রেমিক। আমার বেল নাই। তুমি হইলা নতুন। আমি তোমারে ছাড়ব না। দেইখা নেব।’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper