ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুরগি শিকার

বিশ্বজিৎ দাস
🕐 ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

ভাই, কেমন আছেন? ওপাশ থেকে অচেনা গলা শোনা গেল।
সুমন চিনতে পারল না।
‘কে বলছেন?’

‘ভাই, আমি আপনার একজন ভক্ত। পত্রিকায় আপনার লেখা পড়েছি। বেশ ভালো লেখেন আপনি।’
সুমন অবাক হলো না। পত্রিকায় লেখা ছাপা হওয়ার সুবাদে মাঝে মাঝে বিভিন্নজন ফোন করে ওকে।
‘আপনি কে? বাসা কোথায় আপনার?’
‘আমি সাবের হোসেন। একজন বই প্রকাশক।’

‘প্রকাশক তো বইয়েরই হয়-তাই না?’ হাসলো সুমন।
‘না ভাই, আজকাল অনেক রকম প্রকাশক আছে-ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশক, ই-বুক প্রকাশক, ম্যাপ প্রকাশক, ক্যালেন্ডার প্রকাশক, ডাইরি প্রকাশক...।’
‘বুঝেছি বুঝেছি। এবার বলুন আপনি কোন ধরনের প্রকাশক?’

‘আমি হলাম সৃষ্টিশীল মানুষ। কবিতা লিখি। ‘ঝাড়ু দে’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করি।’
‘ঝাড়ু দে-এটা আবার কেমন নাম?’
‘কবি সাহিত্যিকরাই তো সমাজের যাবতীয় জঞ্জাল তাদের লেখার মাধ্যমে দূর করবেন?’
‘যাক গে-আমার কাছে কেন ফোন করেছেন?’
‘আমার পত্রিকার জন্য একটা লেখা চাইছি। আর...।’
‘আর?’

‘আপনার কাছে একটা পাণ্ডুলিপি চাইছি। আগামী বইমেলায় আপনার প্রথম বইটি প্রকাশ করে ধন্য হতে চাই।’
‘আমার বই কি চলবে?’
‘চালানোর দায়িত্ব আমার। আপনার লেখায় দম আছে। আমি সেই দমকে কাজে লাগিয়ে বিজনেসের গাড়ি চালাতে চাই।’
‘লেখাগুলো তো সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একত্র করে আপনাকে জানাব।’
সপ্তাহ দুয়েক পর আবার ফোন পেল সুমন।
‘ভাই লেখাগুলো কি এক করেছেন?’

‘একটু ব্যস্ত ছিলাম তো। পারিনি।’
‘ঠিক আছে। আমি সপ্তাহ খানেক পরে খোঁজ নেব।’
ঠিক এক সপ্তাহ পর ফোন করল সাবের। ‘ভাই খবর কী?’
‘লেখাগুলো কি এক করেছেন?’
‘করেছি।’

‘কত ওয়ার্ড হয়েছে বলতে পারবেন?’
‘দশ হাজারের কিছু বেশি।’
‘আরও হাজার দুয়েক হলে ভালো হতো। ঠিক আছে আপনি মেইলে পাঠিয়ে দিন।’

সুমন এ পর্যায়ে এসে একটু খাটাখাটনি করল। ব্যবসায়ী মানুষ সে। ব্যবসার ফাঁকে টুকটাক লেখালেখি করে। যেসব লেখা জমেছে, সেগুলোই গত দুই বছরে জমে থাকা লেখা। কষ্ট করে রাত জেগে জেগে আরও তিনটা গল্প লিখল সুমন।
লেখা পেতেই সাবেরের ফোন এলো।
‘ভাই লেখা পেয়েছি। বই মোটামুটি পাঁচ ফর্মার হবে। এখন বলুন কাগজ কেমন চাইছেন?’
‘কাগজ?’

‘বারে, আপনার প্রথম বই বের হবে। কাগজের মান ভালো হতে হবে না। আমি তো সব লেখকের বই আশি গ্রাম দিয়েই ছাপি। তবে আপনার নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে।’
‘আশি গ্রামই থাক।’
‘আর প্রচ্ছদ কাকে দিয়ে করাবো। আমি বরাবর আমাদের নিজস্ব আর্টিস্টকে দিয়ে করাই। তবে আপনার কথা আলাদা। আপনি চাইলে ধ্রুবদাকে দিয়ে প্রচ্ছদ করিয়ে আনবো। যত টাকা নেবে নিক।’

আমতা আমতা করে সুমন বলল, ‘আপনি যা ভালো বোঝেন করেন।’
‘আপনি কয় কপি বই নেবেন?’ আগ্রহ সহকারে বলল সাবের।
‘আমি! আমি আর কয় কপি নেব! যত কপি আপনি সৌজন্য দেবেন ততটাই নেব।’
‘সে তো আমি দশ কপি দেবই। কিন্তু আপনি আপনার পরিচিতদের মধ্যে বিক্রি করার জন্য কিছু বই নেবেন না?’
‘আচ্ছা দেবেন দশ কপি বেশি, বিক্রি করে দেব।’

‘তাই কী হয়! আপনি নতুন লেখক। আমি ইনভেস্ট করে বই ছাপব-কেউ কিনবে না যখন, তখন আমি বইগুলো কোন গুদামে রাখব বলতে পারেন!’
‘তাই তো। আমাকে কী করতে বলছেন। আমি কীভাবে হেল্প করতে পারি?’
‘আমি বলি কী আপনি আমার কাছ থেকে দুইশ বই কিনে নিন। চল্লিশ পার্সেন্ট কমিশনে দিয়ে দেব। এ বইয়ের টাকাটা আপনি আমাকে আগেই দেবেন।’
‘কত টাকা?’

‘বেশি না ত্রিশ হাজার।’
‘ত্রিশ হাজার! একটু বেশি মনে হচ্ছে না।’
‘মোটেও না। আপনার বইয়ের একশত পঞ্চাশ করে দুইশত বইয়ের দাম ত্রিশ হাজারই হবে। আপনার টাকা দিয়ে আমি বই ছাপব। দুইশ আপনাকে দেব। আর বাকি একশ বই আমি বইমেলায় বিক্রি করব। সেটাই আমার লাভ।’
‘তিনশ কপি বই ছাপাতে ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে?’
‘তাই তো লাগে।’

‘শোনেন সাবের সাহেব, আপনি বইয়ের পেজ সেটিং করে আমাকে মেইল করে তিন।’
‘কেন?’

‘আমি তো মফস্বলে থাকি। এখানে সবকিছুর কস্টিং কম। ব্যবসা করি তো, তাই জানি কোথায় কম খরচে ছাপার কাজ হয়। আমি মনে হয়, পনেরো হাজার টাকায় বই ছাপাতে পারব। দুইশ বই আমি রেখে দেব। বাকি একশ বই ব্যবসা করার জন্য আমার কাছ থেকে ফিফটি পার্সেন্ট কমিশনে আপনি কিনে নেবেন। প্রকাশক হিসেবে আপনার নামই থাকবে। পরিশ্রমও হলো না, আবার বইও প্রকাশ হলো। কী বলেন?’

বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সাবের। তারপর লাইন কেটে দিল। ‘মুরগি’ ধরতে না পারার দুঃখে আর কখনো সুমনকে ফোন দেয়নি সে!

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper