ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যদি তোর ডাক শুনে সবাই চলে আসে...

আব্দুল্লাহ আল মাছুম
🕐 ৮:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সবে আমার সখ্য গড়ে উঠেছে। আমি কবি হওয়ার জন্য মরণপণ। সেজন্য তিনি আমাকে প্রাইভেট পড়াতে রাজি হয়েছেন। সেদিন প্রাইভেট শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। বাসে উঠেই বৃষ্টির সঙ্গে চোখাচোখি। পালানোর কোনো উপায় নেই। কী আর করার। আমি চুপ করে পাশের সিটে বসে আছি।

বৃষ্টি বারবার জিজ্ঞাসা করছে কোথায় গিয়েছিলাম। আর চেপে রাখতে পারলাম না। বড়াই করার ছলে সত্যটা বলে দিলাম। ব্যস, কেল্লাফতে। ক্যাম্পাসে পৌঁছার আগেই সবার কানে পৌঁছে গেল রবীন্দ্রনাথ আমাকে শিষ্যত্ব দান করেছেন।

গলায় আমার কাঁটা বিঁধছে। চারদিকে একই রব ‘ট্রিট চাই, ট্রিট চাই, ট্রিট চাই’। কথায় কথায় ট্রিট চাইলে কেমনটা লাগে বলেন। গত মাসেই পকেট ছিঁড়েছে। টাকা-পয়সা এখন আর পকেটে রাখতে পারি না। কাকে কী বোঝাব! তাই স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেলাম। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় বিপত্তি ঘটালেন কবিগুরু। তার সখ জাগছে আমার ক্যাম্পাস দেখবেন। পদ্মপুকুরের পাড়ে শুয়ে পদ্মপাতায় ডেঙ্গুর লার্ভা নিয়ে কবিতা লিখবেন। গুরুর আবদার তো ফেলা যায় না। অগত্যা তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে হল।

পদ্মপুকুরের পাড়ে শুয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করছেন কবিগুরু। এমন সময় তার কানে পিঁপড়া-টিপড়া কিছু একটা ঢুকল। আমি বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এক হাতে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারছিলাম না। কবিগুরু আমার অসহায়ত্ব অনুধাবন করে বললেন, এ যুগ অমাবস্যার অন্ধকারে ঢাকা পড়ুক। পূর্বে কোনো স্থলে যাওয়া হইলে ভক্তকুল আসিয়া এমন কাণ্ড ঘটাইত যে স্বয়ং আমিও উপবেশনের স্থান পাইতাম না। তোমাদিগের ক্যাম্পাসে...।

আমার কিছুটা আত্মসম্মানে লাগল। বদনকিতাবের বার্তা ব্যবস্থায় এক বন্ধুকে বললাম, ‘ট্রিট দেব, আয়’। পাঁচ মিনিটের মাথায় শ’খানেক বন্ধু, জুনিয়র এসে হাজির। কবিগুরুকে বিষয়টা খুলে বলিনি। কিন্তু অভুক্তের দল এসেই ‘ট্রিট, ট্রিট, ট্রিট’ শুরু করল। আমার শার্ট, প্যান্ট, হাত, পা, কান, নাক, চুল, আঙুল যে যেটা ধরতে পারছে তাই ধরে টানাটানি। সবাই নিজেদের পছন্দের রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে চায়। অথচ কবির কোনো খোঁজ নেই। পেছন ফিরে দেখি ইংলিশ মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ডের মোনা কবিকে দুই টাকার একটা বিধ্বস্ত নোট ধরিয়ে দিচ্ছে।

কবিগুরু মোটামুটি সবই বুঝতে পারলেন। বেশ অবাক হলেন। আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লাম। আমার করুণ অবস্থা দেখে কষ্টও পেলেন। তখন আমার মানসিক শক্তির শ্বশুর বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে রচনা করলেন একলা চলোর ট্রিট ভার্সন- যদি তোর ডাক শুনে সবাই চলে আসে তবে কী ডাক দিলি রে...।

আমার প্রতি গুরুর ভালোবাসা পরখ করে আবেগে কেঁদে ফেললাম। গুরুকে প্রণাম করার জন্য যেইমাত্র পা গোটালাম অমনি মুঠোফোনের অ্যালার্ম বেজে উঠল। কাঁচা ঘুম ভাঙায় কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। বদের অ্যালার্ম গুরুর সঙ্গে একটা সেলফি তোলারও সুযোগ দিল না!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper