ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নরসুন্দর

শিমুল শাহিন
🕐 ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুল কাটানো! বন্ধু বা পরিচিতজনদের দেখি সেলুনে গিয়ে আয়েশ করে চুল কাটাতে! এদের অনেকে অসীম ধৈর্যসহ ঘন্টার পর ঘন্টা সেলুনে বসে থেকে নানান ডিজাইনের চুল কাটিয়ে বের হয়! আমি অবশ্য সেসবের ধার ধারি না কখনো, কোঁকড়া চুলগুলোয় মাথাটা যখন আমাজনের মতো ঘন অরণ্যের রূপ নেয় ঠিক তখন নরসুন্দরের দ্বারস্থ হই!

অবশ্য আমি স্বেচ্ছায় চুল কাটাতে আসি সেটাও নয়, আমাকে অনেকটা জোর করেই পাঠানো হয়! নিকটজনদের কে বোঝাবে পুরুষদের আসল সৌন্দর্য নিহিত রুক্ষ, কোঁকড়া, লম্বা চুলগুলোতেই! অনেক কবি সাহিত্যিকের লেখায় এ রকম উদাহরণ বিদ্যমান! শামসুর রাহমান কাজী নজরুলকে উপস্থাপন করতে লিখছেন, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা...! জসীম উদদীন ‘রূপাই’ কবিতায় এক যুবকের গুণকীর্তন করে লিখেছেন, এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল, কালো মুখেই কালো ভ্রমর কিসের রাঙা ফুল।

যাই হোক, সকলের চাপ উপেক্ষা করতে না পেরে চুল কাটানোর অভিপ্রায়ে দুপুর করেই সেলুনে এসেছি। এ সময়টায় সেলুন ফাঁকা থাকে। কিন্তু কথায় আছে অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। সিরিয়াল দিতে গিয়ে দেখা গেল কমপক্ষে ঘন্টাখানেক বসে থাকতে হবে! বাধ্য হয়ে চোখে ঘুম নিয়ে বসে থাকতে হল। ঘন্টাখানেক পর ডাক এল। চেয়ারে বসলাম।

চুল কাটাতে গিয়ে নাপিতদের অতশত ডিরেকশন দিতে ভালো লাগে না! তবে প্রতিবার আগের ক্যাপচার করা একটা ছবি দেখিয়ে বলি, এভাবেই কেটে দেন! আজকেও তা-ই করেছি! ফোন ঘেটে একটা ছবি বের করে নাপিতের চোখের কাছে ধরে বললাম, এভাবে কেটে দিয়েন!
নাপিতও বেশ মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখে ভ্রু কুঁচকে ‘আইচ্ছা ঠিকাছে’ বলে কাজে লেগে গেল!

চুল কাটানোর সময় তন্দ্রামতো এসেছিল! কিছুক্ষণ পরে চুলে টান পড়তেই তন্দ্রা ভাঙল। আয়নার দিকে তাকালাম! নাপিত বলল, ‘স্যার, একদম হুবহু আগের কাটের লাহান কাট দিসি!’ ওর কথার জবাব না দিয়েই আঁতকে উঠে বললাম, ‘এ কীইই!’
নাপিত আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হইসে স্যার?’

রেগেমেগে বললাম, ‘বলেছি কী, আর আপনি করেছেন কী! মাথাতে তো চুলই রাখেননি একদম!’
‘আপনেই তো ছবি দেখিয়ে কইলেন ঠিক এভাবেই কাটতে!’
‘তাই বলে এমন কাট দিতে বলেছি নাকি? মুরগি চোরের মতো দেখাচ্ছে!’
নাপিত কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ‘কিন্তু...।’

ওর কথা শেষ না হতেই ইশারায় থামালাম। বকা দেওয়ার জন্য পকেট থেকে ফোনটা বের করে আনলক করলাম। ওকে ঝাড়ি মারব কী, ফটো গ্যালারি ওপেন করতে নিজেই চুপসে গেলাম! স্ক্রিনে ভেসে থাকা ছবিটা দেখেই ঘটনা পরিষ্কার হয়ে গেল!

আসলে আমি ছবি ঠিকই বের করেছিলাম, তবে নাপিতকে দেখানোর সময় হয়ত স্ক্রিনে টাচ লেগে স্লাইড হয়ে পরের ছবিটা এসে গিয়েছিল! সে ছবিটা ছিলো আমার স্কুলপড়ুয়া একমাত্র ভাগ্নের!

শেষমেশ অর্ধ ন্যাড়া কাট চুল কেটে কোনোরকমে সেলুন থেকে বের হলাম। বাসায় এসে বারবার আয়না দেখছি আর মেজাজটা চরম খারাপ হচ্ছে। কিঞ্চিৎ শান্তি পাচ্ছি আর নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই ভেবে- ভাগ্যিস, ভাগ্নের পুরো ন্যাড়া মাথার কোনো ছবি গর্ধভ নরসুন্দরটার চোখে পড়েনি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper