মজুদদারের স্বপ্নবিলাস
রিয়াজুল আলম শাওন
🕐 ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯

পেঁয়াজের মূল্য ২০০ টাকা ছাড়াল’ আলমগীর সাহেব নিউজটা দুবার পড়লেন। মুখে হাসি ফুটল। তার গোডাউনে দুই টন পেঁয়াজ মজুদ করা রয়েছে। গত সপ্তাহে একশ’ টাকা দরে আরও বিশ মণ কিনেছেন। এই পেঁয়াজের মান ভালো না। কিন্তু বাজারের যেমন অবস্থা মানুষ যা পাচ্ছে তাই লুফে নিচ্ছে।
কিছুদিন আগেও আলমগীরের অবস্থা ভালো ছিল না। বড় ছেলেটার বিয়ে হচ্ছিল না। সবার একটাই কথা, ছেলে লেখাপড়া জানে না। ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগত। আরে, পুরুষ মানুষের আবার লেখাপড়া কী! পুরুষের দরকার বুদ্ধি, টাকা উপার্জনের বুদ্ধি। সঙ্গে অবশ্য একটু ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। এই যেমন আলমগীরের ভাগ্য খুলে গেছে। কিছুদিন আগেও তাকে কেউ পাত্তা দিত না; এখন পুরো এলাকায় নামডাক! এ সময়ে গোডাউনে যার দুই টন পেঁয়াজ মজুদ, তাকে পাত্তা না দিয়ে উপায় আছে?
অবশেষে বড় ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাবা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শুনে পাত্রীপক্ষ ছেলের বয়স, চেহারা কোনোদিকেই তাকায়নি। ইদানীং এলাকার বিভিন্ন বিচারকার্যে আলমগীরের ডাক পড়ছে। বিয়ে, খতনা, গায়ে হলুদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে কেউ ভুলছে না। চলাফেরার ক্ষেত্রে সাবধানে থাকছেন। এ জমানায় স্বর্ণের চেয়ে পেঁয়াজ কোনো অংশে কম নয়। ধনী মানুষের গোপন শত্রু থাকে। আলমগীরের ইচ্ছা, দাম যখন ৫০০ টাকা হবে তখন বিক্রি করবেন। তার আগ পর্যন্ত পেঁয়াজ ধরে রাখবেন। অন্যদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে তিনি নতুন পেঁয়াজ কেনার ধান্দায় আছেন। দাম যতই বাড়ুক কৃষক পাবে ওই ২০-২৫ টাকাই। ২০-২৫ টাকার পেঁয়াজ পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করবেন, ভাবতেই মনটা প্রফুল্ল হয় তার। গোডাউনে ঢুকলেন আলমগীর। গত চারদিনে একবারও এই ঘরে আসেননি। কাউকে বুঝতে দিতে চান না এ অমূল্য রত্ন কোথায় রেখেছেন। তাই এত সাবধানতা।
পেঁয়াজের গায়ে হাত বোলাতে বড্ড ভালো লাগে। এমনকি মাঝে মাঝে তিনি পেঁয়াজের সঙ্গে টুকটাক গল্পও করেন।গোডাউনে ঢুকতেই একটা কটু গন্ধ পেলেন। গন্ধটা খুব চেনা। বুকটা কেঁপে উঠল। খারাপ কিছু মনে আনতে চান না। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে খারাপ কিছুই ঘটেছে। সব লাইট জ্বালিয়ে চিৎকার করে উঠলেন আলমগীর।
গোডাউনের অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ উধাও। পেছন দিকের দরজাটা ভাঙা। চারদিন ধরে তার পেঁয়াজ চুরি হয়েছে সমানতালে। অবশিষ্ট পেঁয়াজে পচন ধরেছে। পচন ধরার জন্যই চোর এটুকু অংশ ফেলে গেছে। তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন আলমগীর। হাতে পেঁয়াজ নিয়ে সারাদিন এগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। দেশ, বিদেশ, খেলাধুলা, অর্থনীতি সব আলোচনাই চলে পেঁয়াজের সঙ্গে। একদিন খবর এলো, সামনে লবণের দাম বাড়তে পারে। গুজবটা শুনে আলমগীর সুস্থ হয়ে গেলেন। গোডাউন ভর্তি হলো লবণে। লবণ নিয়ে দেখতে শুরু করলেন নতুন স্বপ্ন!
