ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টাকা দেবে কে!

অয়েজুল হক
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০১৯

মহল্লার রিকশা ড্রাইভার শান্ত অশান্ত হয়ে দৌড়াচ্ছে। হানিফ সাহেব পেছন থেকে টেনে ধরে বলেন, ‘তোর নাম শান্ত। তুই যাবি হেঁটে, শান্তভাবে। দৌড়াদৌড়ি মানায় না!’ শান্তর মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বলতে পারে না। সাহেব মানুষ। তারপরও বিজ্ঞের মতো বলে, ‘আপনি দেশের কোনো খবর রাখেন?’

‘শুধু দেশের খবর না, বিদেশের খবরও রাখি। এই যে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে।’ 

‘তাতে পেঁয়াজের দাম খুব কমেছে?’
‘কমবে। সিন্ডিকেট চক্র সুযোগে ফায়দা লুটছে।’
‘স্যার, আমি গরিব মানুষ। ওসব সিন্ডিকেট দিয়ে কাজ নাই। শুনলাম লবণের দাম বেড়েছে। আজ দুইশ’, কাল পাঁচশ’। তারপর লবণ আর লবণ থাকবে না। নাই হয়ে যাবে!’
এত সময় শান্তকে স্রেফ রিকশাচালক মনে হলেও লবণের দাম বাড়ার খবর দেওয়ার পর কেন যেন আপন মনে হয়। হতে পারে, দ্রব্যমূল্যে অসহায় দুজন মানুষকে এক করে দিয়েছে। তিনি আতঙ্কিত গলায় বলেন, ‘সত্যি, এত দাম বেড়েছে?’
‘বিশ্বাস না হলে বাজারে গিয়ে দেখেন!’
হানিফ সাহেব বাজারের দিকে পা বাড়ান। শান্ত মিথ্যা বলেনি। দোকানে দোকানে লম্বা লাইন। হুড়োহুড়ি। ছোট দোকানগুলোতে ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের মতো ভিড়। থেকে থেকে আওয়াজ ওঠে- ‘আমি আগে টাকা দিয়েছি, আমারটা আগে দেন!’ লবণ শব্দটা উচ্চারণের মতো সময়ও কেউ অপচয় করতে চাইছে না। হানিফ সাহেব অবাক হন। এক পোয়া, আধা কেজি করে পেঁয়াজ কেনার জন্য বউ থেকে ছেলেমেয়ে পর্যন্ত দেড় মাস ধরে বিদ্রূপ, কটাক্ষের ভাণ্ডার উজাড় করে দিচ্ছে।
পেঁয়াজ না হলে তবু চলে। লবণ সরবরাহ ঠিকঠাক মতো করতে না পারলে নির্ঘাত বাড়ি ছাড়তে হবে! হানিফ সাহেব দোকানের সামনে দাঁড়াতেই একজন চিৎকার করে- ‘এই মিয়া, সিরিয়ালে দাঁড়ান।
ভদ্রলোকের মতো সিরিয়ালে দাঁড়ালে নিজেকে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী মনে হয়! উচ্চমূল্যে লবণ কেনার জন্য উদ্বিগ্ন রোগী। বউয়ের ফোন আসে। তার গলার স্বর সবসময় ঊর্ধ্বগামী, কর্কশ- ‘এত রাত হয়ে গেল। করছ কী?’
‘সিরিয়ালে আছি।’
‘কী সিরিয়াল! স্টার জলসা, জি বাংলা, জলসা মুভি কোনটা দেখছ?’
‘মশকরার সময় এটা নয়। লবণ কেনার লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি।’
‘রাত দশটার সময় লবণ কিনছ? তাও আবার সিরিয়াল দিয়ে!’

হানিফ সাহেব ফোন কেটে দেন। লবণ কিনে বাড়ি ফিরতে গভীর রাত হয়। টেলিভিশনে বারবার প্রচার হয় গুজব, হুজুগের কথা। এতগুলো টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনলেও লাভ হতো। শান্তকে পেলে হয়। ওর দৌড়ানো ছুটিয়ে দেবেন!
পরদিন দেখা হতেই গর্জে ওঠেন- ‘গুনে গুনে দুই হাজার টাকা দে!’
‘কেন!’
‘তোর কথা শুনে দুইশ’ করে দশ কেজি লবণ কিনেছি। দাম একটুও বাড়েনি।’
‘আপনি দুইদিন রিকশা চালান।’
হানিফ সাহেব নিজেকে সংবরণ করতে পারেন না। খেঁকিয়ে ওঠেন- ‘বেয়াদব। এক থাপ্পড়ে তোর কান লাল করে দেব। টাকা দে...।’
শান্ত উল্টো লাল চোখে বলে, ‘দুই দিনের কষ্টের টাকায় পাঁচ কেজি লবণ কিনেছি। আমার টাকা কে দেবে?’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper