ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বশীকরণবিদ্যা

কুমার অরবিন্দ
🕐 ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০১৯

জ্যোতিষী আব্দুল খালেক ব্যাপারি পার্থিব জগতের প্রায় সকল রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। তার বয়স পঞ্চাশের ওপরে। মুখে মেহেদি লাগানো লম্বা দাড়ি। দু’গাল ভাঙা, পান খাওয়া দাঁতগুলো লাল হতে হতে এখন কালচে হয়ে গেছে। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলে নিয়মিত কালো রঙ লাগান। কালো চুল আর লালচে দাড়ি দেখে প্রথম দর্শনেই খালেক ব্যাপারির ভেতর-বাহির পরিমাপ করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ব্যাপারি সাহেব মূলত হস্তরেখা দেখে আংটিতে পাথর আর তাবিজে শেকড়-বাকড় ঢুকিয়ে রোগ তাড়ানোর ব্যবসা করেন। তিনি রাজশাহী শহরে আমতলীতে একটা বাসায় ভাড়া থাকেন।

নিজেকে জ্যোতিষ-সম্রাট পরিচয় দিয়ে এ ফোর সাইজের কাগজে নীল-লাল রঙে কিছু বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন দেয়ালে, ল্যাম্পপোস্টে পোস্টারগুলো লাগিয়ে রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

খালেক ব্যাপারি রোগের চিকিৎসা লম্বা একটা লিস্ট দিয়েছেন বিজ্ঞাপনে। যেমন- দাম্পত্যকলহ দূরীকরণ, স্বামী/স্ত্রী বশীকরণ, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান লাভ, যৌবন ধরে রাখার উপায়, ধন-সম্পদ লাভের উপায়, শনির দশা কাটানো, পরীক্ষায় ভালো করার উপায়, চাকরিপ্রত্যাশীর চাকরি লাভ ইত্যাদি।

লক্ষ করেছেন দাম্পত্যকলহ, বশীকরণ আর সন্তানলাভের জন্য মানুষ তার কাছে বেশি আসে। তিনি গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ দেখে, কখনো বা প্রয়োজন মনে করলে সেগুলোর গতিপথ পরিবর্তন করে রোগ নিরাময়ের উপায় বাতলে দেন!

ডালিয়া খাতুনের বয়স ছাব্বিশ বছর। স্বামীর চার নম্বর বউ। আগের তিন বউয়ের সন্তান হয়নি বলে স্বামী তাদের তালাক দিয়েছে। তারও বছর তিনেক হলো বিয়ে হয়েছে। তারাও চেষ্টা করছে কিন্তু সন্তান হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না লোকসমাজে ডালিয়া বলতে পারে না। শুধু গভীর রাতে স্বামীর সঙ্গে এ নিয়ে তার তুলকালাম কা- বাঁধে। স্বামী বেচারা বুঝতে পারে তার আগের তিন বউয়ের মতো চার নম্বর বউটাও আদরের চেয়ে প্রহারেই বেশি পারদর্শী!

ডালিয়া খাতুন অনেকদিন পর রাজশাহী শহরে এসেছে। স্বামীকে না জানিয়েই। তার এক বোনের মেয়ের কী যেন এক কাজ আছে শহরে।

রেলস্টেশনে নেমে হাঁটতে হাঁটতে ব্যাপারির ছবিযুক্ত বিজ্ঞাপনের দিকে ডালিয়ার চোখ যায়। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিজ্ঞাপনটার শেষ পর্যন্ত পড়ে। তারপর অস্ফুট স্বরে বলে, বুইড়া খাটাস, তোর যদি এতই কেরামতি থাকত তাইলে কি হামাকে তোর চার লম্বর বহু হইতে হতো!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper