ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মোবাইল ভাসাইল না ডুবাইল

আলম তালুকদার
🕐 ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৯

চলে না, চলে না, চলে না রে ভাই! চলেই না! কী চলে না? জীবন চলে না, সময় যায় না! মনে আরাম পায় না! খবর পায় না! কিছুই জানতে পায় না। পোলাপান খায় না। স্কুলেও যায় না! মোবাইল এতই দরকারি/ মোবাইল আলুর তরকারি! কবিরা যে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা তার প্রমাণ হলো, কাজী নজরুল ইসলামের ‘থাকব নাকো বদ্ধঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে! শেষের লাইন, ‘বিশ্বটাকে দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় ভরে’! বিশ্ব আজ মানুষের মুঠোর মধ্যে খলখল করছে! হাতে হাতে ফোন, তাও আবার স্মার্টফোন। তো পুরাতন কথা, বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’! আমার মনে হয় এই কথাটিও সবসময় সবার জন্য প্রযোজ্য নহে! কারণ ফেসবুক তা বলে না। ফেবুদের আবেগের ঢেউ এতটাই বেগবান এবং তাৎক্ষণিক যাকে বলে সুপারসনিক, ভয়াবহ টাইটানিক!

এখন সব আনন্দ বিনোদন, খেলাধুলা, লেখাপড়া এই স্মার্টফোনের ভেতরে। পোলাপান পোলাপানের বাপ-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, মামা-মামি সবাই মোবাইল ফোনের প্রেমে মশগুল। যাকে বলে গুলগুলা গুলগুল! অনেকে মোবাইলপ্রেমিক তারপরে কবুল কবুল। কেউ কেউ মফিজ বা আবুল!

এবার আসুন বসুন দরবার করুন, বিবেচনা করুন মোবাইল আমাদের কী কী হরণ করিয়া খাইয়াছে, সেটার তালিকাটা একটু দেখিয়া লই।
হাত ঘড়ি, টর্চলাইট, রেডিও, টেপরেকর্ডার, ক্যামেরা, ক্যালকুলেটর, সময়, সম্পর্ক, শান্তি, স্মৃতিশক্তি, স্বাস্থ্য, খেলার মাঠ, বই, বন্ধুত্ব, ঘুম, কর্মক্ষমতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। আরও খাইবার তালে আছে! না! ভারী হয়া যাইতেছে। একটু হালকা হই। বাসায় পাতিলের ঢাকনা লাপাত্তা। গিন্নি কাজের বুয়াকে ধমকা-ধমকি করছে। বুয়া বলছে, আম্মা গুগলে সার্চ দ্যান! হা হা হা! না জমিল না। তবে শীত আসিতেছে। কড়কড়া ভাত আর লাউয়ের তরকারি জমিবে। আরে কী জমাইতে গিয়া কী জমাইতে চাহেন?

গ্রামের এক রিকশাচালক দুই হাজার টাকা দিয়া একটা মোবাইল কিনছে। একদিন তার বউ কহিল, ‘আমারে ফোনটা দাও একটু বড় ভাবির লগে কতা কই’। তো ঐ সময় মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ। সে বলল, টাকা নাই। তো বউ বিশ্বাস করে না। তখন কল দিয়া বউয়ের কানের কাছে ফোন ধরলে, সে শুনতে পেল একজন নারী বলছে, ‘কলটি করার জন্য আপনার যথেষ্ট পরিমাণ ব্যালেন্স নেই।’ নারী কণ্ঠ শুনে তার বউ রেগে গিয়ে জেগে উঠে বলল, ‘তোমার ফোনে টাকা নাই এই কতাডা আমি জানি না কিন্তুক ঐ বেডিডায় কেমুনে জানতি পারল?’

লে হালুয়া! আরও একটা মনে আইছে। এক কৃষক একটা নতুন মোবাইল ফোন কিনে গেল এক শহরে। তো শহরে গিয়ে টয়লেট পেয়েছে। টয়লেটে গেল। হঠাৎ মোবাইল ফোন চেল্লৎ কইরা ভিতরে চইলা গেল। কৃষক তো বোকা হয়ে কান্না শুরু করে দিল। তার কান্নায় টয়লেট ভারী হয়ে গেল। এক দয়াবতী পরি একটা সোনালি রঙের মোবাইল তার সামনে ধরে বলল, ‘নাও তোমার মোবাইল। কান্নাকাটি ভালো নয়।’

কৃষক বলল, ‘দেখেন পরি ম্যাডাম, আমি গরিব কৃষক, তবে লোভী নই। সোনা রঙের এই মোবাইল আমার নয়। আমারটা দিন। কালা রঙ, কালা রঙ চাই।’

পরি সব শুনে বলল, ‘ঐ মিয়া, তোমারই এই মোবাইল, পায়খানায় পইড়া রঙ বদল হইছে। ধুইলেই রঙ ফেরত পাইবা।’
ধুত্তরি! ম্যাদা জোকস! তাইলে এইডা দিয়াই খতম করি।

এক চালাক কৃপণ লোক বিজ্ঞাপন দেখল, পুরাতন মোবাইল দিয়া নতুন মোবাইল পাওয়ার মহাসুযোগ। ঈদের আগের কথা! তো সে বিশ্বাস করে জায়গামতো চলে গেল। কিন্তু কেমন ফাঁকা ফাঁকা। লোকজন নাই বললেই চলে। চলে আসার আগে হঠাৎ দেখল দুইটা ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে হাসাহাসিতে ব্যস্ত। সে তাদের কাছে গিয়ে বিজ্ঞাপনের বিষয়টা খোলাসা করল। সব শুনে তারা বলল, ‘জি আমরাই বিজ্ঞাপন দিছি। পুরাতন মোবাইল কই? দেন আমার হাতে। আগে দেখি কতটা পুরাতন।’

পুরাতন স্মার্ট ফোনটি একজনের হাতে দিল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে তারা বলল, ‘পুরাতনটা রেখে দিলাম, এখন মার্কেটে গিয়ে নতুন দেখে একটা মোবাইল ফোন কিনে নেবেন কাহা! মনের আশা পরিপূর্ণ হইবে! এখন মানে মানে সটকে পড়ুন!’ আহা, কী করুণ! এমনটা কাহা কেন যে কামনা করুন?

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper